সুভাস দাস,,,।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও যোগাযোগ বিভাগের প্রখ্যাত প্রফেসর, রিজেন্ট বোর্ড এর সদস্য, ছাত্র বিষয়ক প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান আর আমাদের মাঝে নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
৩ জুন ২০২৫ (মঙ্গলবার) ভোর ৫টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি কয়েকদিন ধরে ফুসফুস ক্যান্সার ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন।
প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান এর মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
এই প্রস্থান কেবল একজন শিক্ষকের নয়, বরং একজন আলোকিত মানুষ, অভিভাবক সুলভ আশ্রয় ও নির্ভরতার এক উজ্জ্বল মুখচ্ছবির বিদায়।
সংক্ষিপ্ত জীবন ও শিক্ষাজীবন: ১৯ জুন ১৯৭৭ সালে ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ড উপজেলার ভায়না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম আশাবাদী মুখ।
তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে কৃতিত্বের সহিত ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (সম্মান) ও এমএ সম্পন্ন করেন (১৯৯৪–১৯৯৫)। এরপর ২০০৯ সালে “Shakespearean Tragedies and Social Realism” বিষয়ে এমফিল এবং ২০২২ সালে “The Second Generation English Romantic Poets and Kazi Nazrul Islam: A Comparative Study” বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন ও অবদান: ২০০৭ সালে তিনি পবিপ্রবিতে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপরে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং সর্বশেষ অধ্যাপক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভাষা ও যোগাযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান, ছাত্র-বিষয়ক উপদেষ্টা, রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য এবং বাংলাদেশ স্কাউটস পটুয়াখালী জেলার রোভার স্কাউটের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গবেষণা ও প্রকাশনা: তাঁর গবেষণা ক্ষেত্র ছিল বহুবিধ—শেক্সপিয়র, রোমান্টিক কবিতা, ইকো-পোয়েট্রি, মানবাধিকার ও সাহিত্য, নজরুল গবেষণা, এবং ইংরেজি শিক্ষায় নতুন পদ্ধতি। দেশি-বিদেশি জার্নালে তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ২০টিরও বেশি।
তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন নিম্নলিখিত দুইটি গবেষণা প্রকল্পে— English for Specific Purposes at PSTU: Fluxes, Challenges & Prospects (2022–2023),
Expediting Students’ English Writing Skill through Performance Assessment (2024–2025)
ব্যক্তিগত জীবন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য: তিনি ছিলেন একজন বিনয়ী, সহিষ্ণু, সদালাপী ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক পুত্র এবং প্রথম শ্রেণির এক কন্যাকে। তাঁর পিতার নাম মোঃ শামসুল হক এবং মাতার নাম বিলকিস বেগম।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শোকবার্তা: প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান এর ইন্তেকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন:
প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান ছিলেন একজন প্রকৃত জ্ঞানসাধক ও শিক্ষার্থীপ্রিয় শিক্ষক।
তাঁর মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর জ্ঞান, মমতা ও প্রজ্ঞা আমাদের পথ দেখাবে আজীবন।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান বলেন: “প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান ছিলেন নিরহংকার, সদালাপী এবং অসামান্য মননের মানুষ। তাঁর প্রতিটি ক্লাস ছিল শিক্ষার্থীদের জীবনে আশার উৎস।
কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবদুল লতিফ বলেন:
“প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান শিক্ষকতা ও গবেষণায় তাঁর নিষ্ঠা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। একজন আদর্শ সহকর্মীকে আমরা হারালাম।
রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন: “প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান আমাদের জন্য ছিলেন এক প্রজ্ঞাদীপ্ত বাতিঘর। তাঁর হাসিমাখা মুখ ও মমতার ব্যবহার চিরকাল মনে থাকবে।
জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ এর পক্ষ থেকে আমরা প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।