ঢাকাবুধবার , ২১ মে ২০২৫
  1. অভিযোগ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন আদালত
  4. আটক
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. আলোচনা সভা
  8. ইতিহাস
  9. এক্সক্লুসিভ নিউজ
  10. কক্সবাজার
  11. কচুয়া
  12. কবিতা
  13. কিশোরগঞ্জ
  14. কুড়িগ্রাম
  15. কুমিল্লা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পরিকল্পনা উপদেষ্টার আকস্মিক সফর: শিক্ষা ও উন্নয়নের এক নতুন আলোর বার্তা

প্রতিবেদক
majedur
মে ২১, ২০২৫ ৭:৩৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সুভাস দাস,,।
পটুয়াখালী  (পবিপ্রবি) শান্ত ছায়াঘেরা প্রাঙ্গণ আজ ছিল ব্যতিক্রমী উচ্ছ্বাসে মুখর। ধুলোমলিন পথ, সবুজ ছায়ার আবরণে আচ্ছাদিত প্রিয় ক্যাম্পাস যেনো এক নিমিষে জেগে উঠলো নতুন প্রেরণায়, যখন হঠাৎ করেই আবির্ভূত হলেন দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
বেলা ২টা ১৫ মিনিট। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম জানতে পারেন, উপদেষ্টা মহোদয় পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা পরিদর্শন শেষে লেবুখালী হয়ে বরিশালের পথে রয়েছেন।
খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক আন্তরিক আমন্ত্রণ জানানো হয় তাঁকে। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে খুব স্বল্প প্রস্তুতিতেই তিনি উপস্থিত হন দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ, আমাদের পবিপ্রবিতে।
এই আকস্মিক আগমন ছিলো সম্পূর্ণ অনানুষ্ঠানিক, পূর্বঘোষণাহীন। তবু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে এটি যেনো হয়ে উঠলো এক অনন্য ঐতিহাসিক ক্ষণ—যেখানে ছিলো বিস্ময়, গৌরব, আর অপরিমেয় ভালোবাসা।
ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের সঙ্গে উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয় এক উষ্ণতা ও আন্তরিকতায় ভরপুর পরিবেশে।
 আলোচনায় উঠে আসে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রস্তাবনা।
ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “এটি ছিল এক অপূর্ব গৌরবময় মুহূর্ত। এমন একজন মনীষীর পদচারণা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
তিনি যেভাবে মনোযোগ দিয়ে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখলেন এবং পরামর্শ দিলেন, তা আমাদের আগামী পথচলাকে করবে আরও দৃঢ় ও উদ্যমী।”
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ঘুরে দেখেন একাডেমিক ভবন, গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, নির্মাণাধীন ১০ তলা ছাত্রীনিবাস, ছাত্রাবাস, ‘লাল কমল’ ও ‘নীল কমল’ লেক এবং চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম। ক্যাম্পাসের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, নির্মাণশৈলী ও বাস্তবায়নগত মান দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিশেষ আলোচনায় উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হতে যাওয়া ‘মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওসানোগ্রাফি’ বিভাগ। উপদেষ্টা এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী এবং দক্ষিণাঞ্চলের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন লেকগুলোর দুরবস্থার বিষয়টি উপাচার্য মহোদয় তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি জানান, গাইড ওয়াল নির্মাণের অভাবে যেকোনো সময় শত শত গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তা ভেঙে যেতে পারে, যার ফলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতও ব্যাহত হবে।
এ অবস্থায় ইউজিসির মাধ্যমে জরুরি অর্থ বরাদ্দের জন্য তিনি উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহান, রেজিস্ট্রার ও আইকিউএসি’র পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. মাহমুদের অনুভব ছিল হৃদয়স্পর্শী: “এই অঞ্চল শিক্ষার বিস্তারে এক সম্ভাবনার ভাণ্ডার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রশাসনিক সুশৃঙ্খলতা দেখে আমি অভিভূত। এখানে উচ্চশিক্ষার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রান্তিক বলেই কেউ পিছিয়ে থাকবে না—এই বিশ্বাস থেকেই আমাদের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে হবে।” এই সফরে ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিক ভাষণ, ছিল না মিডিয়ার কৃত্রিম আলো। বরং প্রতিটি মুহূর্তে ছিল প্রজ্ঞার দীপ্তি, উন্নয়ন দর্শনের মমতাময় বাস্তবায়ন এবং নিঃশব্দ অনুপ্রেরণার স্পর্শ।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখে উপদেষ্টার প্রশংসাসূচক মন্তব্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাঝে নতুন উদ্যম সঞ্চার করেছে। তাঁর উপস্থিতি যেনো আশীর্বাদের মতো ছড়িয়ে পড়ে গোটা ক্যাম্পাসে।
শিক্ষার্থী আফিয়া তাহমিন জাহিন, মারসিফুল আলম রিমন, মীর নুরুন্নবী এবং ফারদিন হাসান কণ্ঠে উঠে আসে গর্ব ও আশার মেলবন্ধন: “জাতীয় পর্যায়ের একজন নীতিনির্ধারককে এমন হঠাৎ সামনে দেখে আমরা অভিভূত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি যে গুরুত্ব দিয়েছেন, তা প্রমাণ করে—এ অঞ্চল আর পিছিয়ে থাকবে না।”
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই দক্ষিণাঞ্চলের উচ্চশিক্ষা বিস্তারে এক অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। শিক্ষকদের নিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের মেধা ও প্রশাসনের সৃজনশীল নেতৃত্বে আজকের এই সফর যুক্ত করলো নতুন এক গৌরবগাথা।
প্রফেসর ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের মতো একজন মনীষী যখন কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়া নিজ উদ্যোগে একটি প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় দেন, তখন তা কেবল আনুষ্ঠানিক সফর নয়—বরং সেটি হয়ে ওঠে জাতীয় দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল প্রকাশ।
বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে তিনি বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
 রেখে যান অনুপ্রেরণার অজস্র বীজ, ভবিষ্যতের উন্নয়ন ভাবনার সঞ্চার এবং সবচেয়ে বড় কথা—একটি প্রান্তিক জনপদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে তাঁর নির্ভরতা ও ভালোবাসার উষ্ণ ছোঁয়া।
এই সফর তাই শুধু একটি দিনের স্মৃতি নয়—এটি হয়ে থাকবে এক দীপ্ত আলোর রেখা, যেখানে স্বপ্ন, সম্ভাবনা এবং অগ্রগতির পথরেখা জেগে থাকবে অনন্তকাল।

Don`t copy text!