যীশু সেন :
তবলা শিক্ষার প্রসার এবং সংগীতচর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রত্যয়ে ‘ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ আয়োজন করে এক বিশেষ তবলা প্রশিক্ষণ কর্মশালার। গত ১০ মে, শনিবার, চট্টগ্রামের রাউজান সুলতানপুরস্থ শিক্ষক কাঙ্গাল মাস্টারের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী এ অনন্য আয়োজন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল তবলা কর্মশালা, সনদপত্র বিতরণ, আলোচনা সভা এবং গুণীজন সংবর্ধনা ও সংগীতানুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট তবলাশিল্পী পার্থপ্রতিম দাশ। গুণীজন সম্মাননায় ভূষিত হন ভারত কোলকাতার নবদ্বীপ সংগীত চক্রের অধ্যক্ষ তবলাশিল্পী সমীর আচার্য্য, রাউজান প্রেস ক্লাবের সহ- সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব যীশু সেন, রাউজান মিউজিক স্কুলের প্রশিক্ষক শিল্পী প্রদীপ দাশ, তীর্থ সংগীত নিকেতনের প্রশিক্ষক প্রয়াত সংগীতশিল্পী সুভাষ দাশ (মরণোত্তর)।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন শিল্পী সুমন দাশগুপ্ত। উপস্থিত ছিলেন ফুলকি স্কুলের তবলা প্রশিক্ষক জয়ন্ত দেব।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী প্রদীপ দাশ। কর্মশালার মূল প্রশিক্ষক ছিলেন নবদ্বীপ সংগীত চক্র (কলকাতা)-এর অধ্যক্ষ ও খ্যাতিমান তবলাগুরু, বেতার ও টেলিভিশনের অভিজ্ঞ তবলাশিল্পী সমীর আচার্য্য। তিনি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের তবলার বিভিন্ন বোল, কায়দা ও ঘরানাভিত্তিক ছন্দের ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী কর্মশালায় অংশ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সনদপত্র। সংবর্ধিত অতিথিদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, “তবলা শুধু একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীতচর্চায় তবলার গুরুত্ব অপরিসীম।” তাঁরা আরও বলেন, তবলা শেখার জন্য নিষ্ঠা, ধৈর্য ও নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সংগীত শিক্ষার বিস্তার তবলা ও অন্যান্য ধ্রুপদী বাদ্যযন্ত্রের চর্চায় নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করে তুলবে। সংগীত শিক্ষায় তবলার গুরুত্ব বাড়াতে প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জরুরি।
বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের যথাযথ উৎসাহ প্রদান করা হলে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলা ভাষাভাষী তবলাবাদকরা সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হবে।
এ আয়োজন শুধু সংগীত শিক্ষার একটি প্ল্যাটফর্ম নয় বরং এটি ছিল এক অনন্য সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মঞ্চ, যেখানে অভিজ্ঞতা, সৃজনশীলতা ও প্রজন্মান্তরের ঐতিহ্য একত্রিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয়শিল্পী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংগীতানুরাগীদের উপস্থিতিতে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিশ্বাস করে এই ধরনের সাংস্কৃতিক উদ্যোগ তরুণদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও শিল্পবোধ জাগ্রত করবে এবং গুণীজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আমাদের সমাজ আরও মূল্যবোধসম্পন্ন হয়ে উঠবে।