নিউজ ডেস্ক,
বাংলাদেশের জাতীয় সংবিধানে আইনের দ্বারা দেশ চলার বাধ্যবাধকতার কথা বলা থাকলেও, স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ্য ৫৪ বছর পরেও, আইনহীন ভোলা জেলায় অবহেলিত ভোলাবাসীর ন্যায্য দাবীর প্রতি সহমত পোষণ করেছেন ভোলা জেলার চলমান প্রশাসক আজাদ জাহান।
আইনহীন ভোলা জেলায় সরকারী মেডিকেল কলেজ স্থাপন, অবৈধ ইন্ট্রাকো চুক্তি বাতিল ও ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মানের দাবীতে “জেগেছে-রে-জেগেছে ভোলা জেলা জেগেছে” সংগঠনের নেতৃত্বে গত ২০/০৪/২০২৫ ইং তারিখে সমগ্র দায়িত্বশীল ভোলাবাসী ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল সহকারে ভোলা সদরে সমবেত হয়েছে। ভোলায় গ্যাস সংযোগ না দিলে উপদেষ্টাদের বাসভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন আন্দোলনকারীদের নেতৃবৃন্দ। জেলা প্রশাসক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দাবী মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ভোলায় ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ ও গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপনসহ পাঁচ দফা দাবি আদায় না হলে প্রয়োজনে উপদেষ্টাদের বাসভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারিতেও ভোলাবাসীর পক্ষে মতামত দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। রোববার সকালে শহরের বাংলা স্কুল মাঠে ‘আগামীর ভোলা’ এর ব্যানারে সমাবেশ কর্মসূচি থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এতে বিপুল ছাত্র-জনতা, বিএনপি, বিজেপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে বাংলা স্কুল মাঠের সমাবেশ স্থলে যুক্ত হয়। এ ছাড়া সমাবেশে মেডিকেল কলেজ ও ভোলা-বরিশাল সেতু এই দুটি পুরাতন দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন দল-মত নির্বিশেষে ভোলার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। ‘আগামীর ভোলা’ এর মুখপাত্র মীর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. রাইসুল আলম, জেলা বিজেপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন, সাধারণ সম্পাদক মোতাসিম বিল্লাহ, জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি হারুনর রশীদ, পৌর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা জামাল উদ্দিন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক, ইসলামী আন্দোলনের জেলা উত্তর শাখার সভাপতি আতাউর রহমান মোমতাজী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মাসুদ, সদস্য সচিব মুনতাসীর আলম রবিন চৌধুরী, শহীদ জিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খালেদা খানম, ভোলা দারুল হাদিস কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোবাশ্বিরুল হক নাইম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সেক্রেটারি মাওলানা তরিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলামিন হাওলাদার, জেলা ছাত্রদল নেতা নূর মোহাম্মদ রুবেল, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাজ্জাদ হোসেন মুন্না, ব-দ্বীপ ফোরামের সমন্বয়কারী মীর মোশারফ হোসেন ওমি।
বক্তারা বলেন, দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। এখানে ২০ লাখ মানুষের বসবাস। প্রাকৃতিক সম্পদ- গ্যাস সমৃদ্ধ এই জেলার রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। এরই মধ্যে এখানে গ্যাস ভিত্তিক উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। জেলা শহরে প্রায় আড়াই হাজার আবাসিক সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু রাষ্ট্রীয় এক সিদ্ধান্তে সারাদেশের সঙ্গে ভোলাতেও গ্যাসের আবাসিক সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভোলাবাসীর দাবি, দ্বীপজেলা বিবেচনা করে ভোলা আবাসিক সংযোগ দেওয়া হোক। এদিকে মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।
তারা বলেন, এখানে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল না থাকায় চিকিৎসার অভাবে বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। ভোলা-বরিশাল সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত জেলার বাইরে অন্যত্র নিয়ে চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তাই দ্রুত ভোলায় একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।
একই সঙ্গে ভোলার নয়টি কূপে মজুদকৃত গ্যাসের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। ভোলার গ্যাস ভোলার মানুষের ঘরে ঘরে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি গ্যাসভিত্তিক ইকোনমিক জোন গড়ে ওঠেনি। ভোলার গ্যাস ব্যবহার করে এখানে শিল্প-কারখানায় গড়ে তোলার দাবিও জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সমাবেশ শেষে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান আন্দোলনকারীরা। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্মারকলিপি গ্রহণের পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান।
এ সময় দাবি আদায় না হলে ২৭ এপ্রিল ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় সচিবালয় ঘেরাও করা, প্রয়োজনে উপদেষ্টাদের বাসভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ‘আগামীর ভোলা’ এর মুখপাত্র মীর মোহাম্মদ জসিম বলেন, “দাবি আদায় না হলে ২৭ এপ্রিল ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় সচিবালয় ঘেরাও করা, প্রয়োজনে উপদেষ্টাদের বাসভবন ঘেরাও করা হবে। এরপরও অধিকার আদায় না হলে ভোলা স্ট্রাইক ও সব কর বন্ধ করে দেওয়ার মতো কর্মসূচি নেওয়া হবে।”
ভোলার গ্যাস স্থানীয়দের না দিয়ে ঢাকায় নেওয়ার প্রতিবাদে গত কয়েকদিন আন্দোলন করছেন ছাত্র-জনতা। শুক্র ও শনিবার এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ইন্ট্রাকো কোম্পানির আটটি গাড়ি আটকে দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। ছবিতে- জনসমাবেশ, আটককৃত ট্রাক ও স্মারকলিপি প্রদান।