রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর।
আমাদের দাবি মানতে হবে, না মানলে আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে যাব। এখন আর পুলিশের গুলিতে মরতে ভয় লাগে না। আমরা লড়াই করে বাঁচাতে চাই। আমাদের ন্যায় সঙ্গত দাবি বাস্তবায়ন করতে চাই। মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে মাঠে নেমেছি। সবগুলো পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মিলে এই আন্দোলন গেেড় উঠেছে। দাবি আদায় না পর্যন্ত আর পিছু পা হবো না।এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফারহান নাজিব।ছয় দফা দাবি আদায় ও কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রংপুরে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে গণমিছিল করেছে সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জুমার নামাজ শেষে রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে গণমিছিলটি বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। পরে প্রেসক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা।ছয় দফা দাবি আদায়ে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান, সাব্বির হোসেন, ফুয়াদ হাসান, রায়হান ইসলাম ও জান্নাতুল মাওয়াসহ আরো অনেকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে রংপুরসহ সারাদেশ ব্লকেড করার মতো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ার দেন তারা।শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি আদায়ে নানাভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তালবাহানা করেছে। তাই নিজেদের দাবি আদায়ে ছুটির দিন শুক্রবারেও আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, হাইকোর্টের রায়ে অবৈধভাবে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পাওয়া ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের রায় বাতিল করতে হবে। সেই সঙ্গে পদবি পরিবর্তন ও মামলার সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে কোনো শক্তিই আন্দোলন থেকে হঠাতে পারবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না হলে ফের পুনরায় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান।সমাবেশে রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাড়াও ইমেজ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রিট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, আইইটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।শিক্ষার্থীদের ৬ দাবি ,জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের প্রমোশনের হাইকোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা। ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল এবং মামলার প্রধান কারিগর ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) পদে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) থেকে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছাত্রদের ন্যূনতম দশম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬ হাজার টাকা দেওয়া।কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্ব বা নিয়োগ দেওয়া।কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সকল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সকল শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাস করতে হবে এবং বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।