রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় চীনের অর্থায়নে এক হাজার শয্যার আন্তর্জাতিক মানের একটি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিস্তা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সরাসরি গঙ্গাচড়ায় স্থাপিত হলেও উপকৃত হবে পুরো উত্তরবঙ্গের মানুষ। সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর মৌজার চর কলাগাছি এলাকায় প্রস্তাবিত স্থানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের লিড ইকোনোমিস্ট শহিদুর রহমান খন্দকার, সাবেক সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট ইকোনমিস্ট ফরহাদ আহমেদ, রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী এবং অন্যান্য স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খান সজীব বলেন ,তিস্তার চরাঞ্চলে পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করা হচ্ছে। এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল গড়ে উঠলে পুরো উত্তরাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে।তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালটি কেবল স্থানীয় জনগণের জন্য নয়, পুরো দেশের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে, দেশের উত্তরাঞ্চলের গ্রামীণ জনগণ সহজে উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবেন। হাসপাতালটি ভবিষ্যতে একটি মেডিকেল কলেজ বা নার্সিং ইনস্টিটিউট তৈরির সুযোগও সৃষ্টি করবে।সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ২০ একর খাসজমিকে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য উপযোগী হিসেবে বিবেচনা করেছি। চীনা বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল শিগগিরই এখানে আসবে এবং তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। স্থানটি উচ্চ মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত উপযুক্ত।গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা জানান,গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর তীরে এক হাজার শয্যার আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগটি এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রস্তাবিত স্থানটি চর এলাকা হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও নির্মাণের উপযোগী। এই হাসপাতাল বাস্তবায়িত হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষ উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর রংপুর জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, “ভারত যখন চিকিৎসা ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে, তখন নিজেদের দেশে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এই হাসপাতাল উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।প্রস্তাবিত হাসপাতালের স্থান তিস্তা ব্রিজসংলগ্ন হওয়ায় এটি রংপুর শহর ও আশপাশের জেলার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপন করবে। এখানে প্রায় ২৯ একর খালি জমি রয়েছে, যা হাসপাতালের মূল ভবন, হেলিপ্যাড, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আবাসন ও গবেষণাগার নির্মাণে উপযোগী। সবুজঘেরা নিরিবিলি পরিবেশ রোগীদের দ্রুত সুস্থতায় সহায়ক হবে। চর এলাকা হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভালো, ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কম।এছাড়া, হাসপাতাল নির্মাণকালীন সময় থেকে শুরু করে চালু হওয়ার পরেও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নতি এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের দৃশ্যমান দৃষ্টান্ত হিসেবে হাসপাতালটি কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।