ঢাকাশনিবার , ১২ এপ্রিল ২০২৫
  1. অভিযোগ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন আদালত
  4. আটক
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. আলোচনা সভা
  8. ইতিহাস
  9. এক্সক্লুসিভ নিউজ
  10. কক্সবাজার
  11. কচুয়া
  12. কবিতা
  13. কিশোরগঞ্জ
  14. কুড়িগ্রাম
  15. কুমিল্লা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মঙ্গল” একটি শব্দ,

প্রতিবেদক
majedur
এপ্রিল ১২, ২০২৫ ১০:৫০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 

যীশু সেন : দৈনিক বাংলার অধিকার।।
‘মঙ্গল’একটি ছোট্ট শব্দ, কিন্তু এর গভীরতা অসীম। এই শব্দের ব্যঞ্জনা ছড়িয়ে রয়েছে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, এমনকি পুরো মানবজাতির কল্যাণচিন্তায়। ‘মঙ্গল’ মানে কেবল দিনের বার অথবা সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ নয়, এটি একটি অনুভূতি, একটি আকাঙ্ক্ষা, একটি প্রার্থনা এবং সর্বোপরি একটি জীবনদর্শন। বাংলাভাষায় ‘মঙ্গল’ শব্দটি নানা প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়—ধর্মীয় আচারে, সামাজিক কাজকর্মে, পারস্পরিক সম্পর্কের শুভকামনায়, এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনাতেও। ‘মঙ্গল’ শব্দটির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করব।ব্যক্তিগত জীবনে মঙ্গল: শুভকামনার প্রতীক। মানুষের জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপ যেন মঙ্গলের আশায় পরিচালিত হয়। মা সন্তানের জন্য মঙ্গল কামনা করেন, গুরুজন আশীর্বাদ করেন মঙ্গলের জন্য, বন্ধুরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায় ‘তোমার মঙ্গল হোক’ বলে। এই ছোট ছোট প্রার্থনাগুলো একধরনের মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। ভালো কাজ করলে মঙ্গল আসবে—এই বিশ্বাসই মানুষকে সৎ পথে চলার উৎসাহ দেয়।
সামাজিক প্রেক্ষাপটে মঙ্গল: কল্যাণ ও সহযোগিতার পথ- সমাজের মঙ্গল ব্যক্তি ও ব্যক্তিসমষ্টির আচরণ ও উদ্যোগের ওপর নির্ভর করে। ‘পরোপকারে মঙ্গল নিহিত’—এই প্রবাদ বাক্যটি বহু শতাব্দী ধরে আমাদের নৈতিকতার দিশা দেখিয়েছে। একটি ছোট উদ্যোগ, যেমন পরিচ্ছন্নতা অভিযান, গাছ লাগানো বা দুঃস্থের সাহায্য করাও সমাজের বৃহৎ মঙ্গলের অংশ হতে পারে। সমাজে যদি প্রতিটি ব্যক্তি মঙ্গল ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করে, তাহলে সম্মিলিতভাবে একটি সুস্থ ও সচেতন সমাজ গড়ে ওঠে।
জাতীয় জীবনে মঙ্গল: উন্নতির মূল ভিত্তি-
একটি দেশের প্রকৃত মঙ্গল নির্ভর করে তার নাগরিকদের দেশপ্রেম, সততা ও পরিশ্রমের ওপর। দেশের মঙ্গল মানেই জাতির কল্যাণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ। দেশপ্রেমে জাতির মঙ্গল নিহিত—এই চেতনা জাতিকে শক্তি জোগায়। দেশের নীতিনির্ধারকরা যখন শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যনীতি বা পরিবেশ-রক্ষার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেন, তখন তা দেশের সার্বিক মঙ্গলের পথ প্রশস্ত করে।
ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতায় মঙ্গল: চেতনার শুদ্ধতা প্রায় সব ধর্মেই মঙ্গলের কথা বলা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে ‘মঙ্গল প্রদীপ’ প্রজ্বলনের মাধ্যমে দেবতার কাছে কল্যাণ কামনা করা হয়, ইসলামে ঈদের নামাজে ও প্রার্থনায় সবার মঙ্গল কামনা করা হয়, বৌদ্ধ ধর্মে করুণা ও শান্তির মাধ্যমে মঙ্গলের উপদেশ দেওয়া হয়। আধ্যাত্মিক চর্চায় মঙ্গল একধরনের অভ্যন্তরীণ প্রশান্তির অনুভূতি—যা আত্মউন্নতি ও সমাজসেবার পথ দেখায়।
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে মঙ্গল: উন্নয়নের আধুনিক রূপ আজ ‘মঙ্গল’ শব্দটি শুধু মানসিক বা আধ্যাত্মিক নয়, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রতীকও বটে। মঙ্গল গ্রহে রোভার পাঠানো হয়েছে—এটি আমাদের প্রযুক্তির এক অসাধারণ অর্জন। বিজ্ঞান যেভাবে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে, তা মানবজাতির বৃহত্তর মঙ্গলের দিকেই নির্দেশ করে। পরিবেশ রক্ষা, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি, কৃষিক্ষেত্রে উদ্ভাবন সবই মঙ্গলের হাতিয়ার।
মঙ্গল ও পরিবেশ: জীবনের ভারসাম্য রক্ষা প্রকৃতির সুরক্ষায়ই নিহিত রয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গল। পরিবেশ দূষণ রোধ, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা ও প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চললেই সম্ভব একটি মঙ্গলময় ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা।
মঙ্গল ভাবনায় ভবিষ্যতের পথ,
‘মঙ্গল’ একটি শব্দ নয়, এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটি জীবনচর্চা। ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক সম্পর্কে, সমাজ গঠনে, রাষ্ট্র পরিচালনায় এমনকি বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষে সর্বত্রই মঙ্গল ভাবনা আমাদের প্রেরণা দেয়। আমরা যদি এই ভাবনাকে ধারণ করি, তবে শুধু নিজের নয়, গোটা বিশ্বের কল্যাণ সাধন সম্ভব। আসুন, আমরা সবাই মিলেই বলি—“শুভ হোক, মঙ্গল হোক, কল্যাণ হোক সবার জীবনে।”

 

Don`t copy text!