যীশু সেন, বিশেষ প্রতিনিধি :
রাউজান উত্তর গুজরাস্থ ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ ও শ্রীশ্রী জ্বালামুখী মন্দিরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অষ্টপ্রহরব্যাপী মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, পবিত্র গঙ্গা পুজা, পাল্টা কীর্তন , নগরকীর্তন, অন্নপ্রসাদ বিতরণ ও অষ্টপ্রহরব্যাপী মহানাম সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজনের শুরুতেই মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। এছাড়া পবিত্র গঙ্গা পূজায় উপস্থিত ভক্তরা পূজারী ও পুরোহিতদের সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণ করে গঙ্গায় অর্ঘ্য প্রদান করেন।
উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু ছিল অষ্টপ্রহরব্যাপী শ্রীশ্রী শুভ তারকব্রহ্ম মহানাম সংকীর্তন, যা রাত দিন চলতে থাকে। ভক্তবৃন্দ গভীর ভক্তি এবং অনুরাগ নিয়ে উজ্জ্বল পরিবেশে এই সংকীর্তনে অংশগ্রহণ করেন। এসময় উৎসব উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা সাবেক মেম্বার বাবুল সেন, মতিলাল দাশ, আশীষ চক্রবর্তী, সাতকড়ি সেন, দীপক সেন, হারাধন মহাজন, শিবু প্রসাদ বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।
উৎসব কমিটির সভাপতি লায়ন কৈলাশ বিহারী সেন, প্রধান সমন্বয়ক রাজন সেন,
চন্দন কুমার চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক রুপম পালিত, রাউজান প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি যীশু সেন, অর্থ সম্পাদক সঞ্জয় সেন, জিতুল চক্রবর্তী, উজ্জ্বল দত্ত বাসু, প্রকৌশলী সুমন সেন, তাপস সেন,বাজীব দে, রিটু চক্রবর্তী, রনি দেওয়ানজি, রাজু দাশ, অভি চক্রবর্তী, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, জুয়েল চক্রবর্তী, রানা সেন প্রমূখ ব্যক্তিত্ব উৎসব পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
লায়ন কৈলাশ বিহারী সেন বলেন-
‘এই উৎসব আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং সামাজিক ঐক্যের এক শক্তিশালী প্রকাশ। মায়ের আশীর্বাদে সমাজে শান্তি, ভালোবাসা ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভক্তি ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে আমরা শুদ্ধ জীবন ধারণ করতে পারি এবং মানবিক মূল্যবোধে উন্নতি ঘটাতে পারি’।
যীশু সেন বলেন- ‘বার্ষিক জ্বালামুখী মায়ের মহোৎসব আমাদের ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের শক্তি। মায়ের পূজা আমাদের জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল নিয়ে আসে। ধর্মের প্রেরণা, সঠিক পথের অনুসরণ এবং মানবিকতা বজায় রাখার গুরুত্ব। এই আধ্যাত্মিক পরিবেশ আমাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে’।
১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত শুভ গন্ধাধিবাসের অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত রঙিন এবং ধর্মীয় আবেগে পূর্ণ ছিল। এদিন পৌরোহিত্য করেন চুনতী লোহাগাড়ার বৈষ্ণব প্রবর ধনঞ্জয় গোস্বামী। শুভ অধিবাস কীর্তন পরিবেশন করেন আশালতা কলেজের অধ্যাপক রাজীব বিশ্বাস, যার কারণে উপস্থিত দর্শকগণ গভীর আধ্যাত্মিক অনুভূতিতে মগ্ন হন। দুপুর ১২ টায় পাল্টা কীর্তন পরিবেশন করেন দীলিপ সরকার ও ঝুলন আচার্য। বহু দুর্দান্ত হতে আগত হাজা হাজার ভক্তের সঙ্গে সমাগম ঘটে।
১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মহানাম যজ্ঞে বিভিন্ন সম্প্রদায় নাম সংকীর্তনে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষত চট্টগ্রামের জগন্নাথ সম্প্রদায়, খুলনার প্রভু দয়াল কৃষ্ণ সম্প্রদায়, খুলনার লোকনাথ সম্প্রদায় ও কুমিল্লার নব দেব বাণী সম্প্রদায়ের ভক্তরা সম্মিলিতভাবে মহানাম সংকীর্তন পরিবেশন করেন।
উল্লেখযোগ্য যে, উক্ত মহোৎসবে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হন, যা মন্দির চত্বরকে এক মহামিলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যিক এই মহোৎসব রাউজানের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।