ঢাকামঙ্গলবার , ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  1. অভিযোগ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন আদালত
  4. আটক
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. আলোচনা সভা
  8. ইতিহাস
  9. এক্সক্লুসিভ নিউজ
  10. কক্সবাজার
  11. কচুয়া
  12. কবিতা
  13. কিশোরগঞ্জ
  14. কুড়িগ্রাম
  15. কুমিল্লা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কটিয়াদীতে সরিষার বাম্পার ফলনে, তৃপ্তির হাসি কৃষকের মূখে

প্রতিবেদক
admin
জানুয়ারি ১৪, ২০২৫ ৩:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আলী সোহেল, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :

যেনো হলুদ রঙের গালিচায় সেজেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ফসলের মাঠ। সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে বিমোহিত ফসলের প্রান্তর। সরিষার এমন ফলনে কৃষাণ-কৃষাণির মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।

ব্রহ্মপুত্র নদের চর-অধ্যুষিত এলাকা, খাল ও বিল পাড়সহ মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের হলুদ রঙের সমারোহ। চারদিকে হলুদ গালিচা বিছিয়ে যেনো অপরূপ সাজে সেজেছে ফসলের মাঠ। এ ফুলের মৌ-মৌ গন্ধ আর মৌমাছিদের গুঞ্জরণে মুখর হচ্ছে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের প্রান্তর। এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে বাড়ছে প্রকৃতি প্রেমীদের আনাগোনা। এ অঞ্চলের কৃষকেরা অল্প সময়ে ও অল্প খরচে উৎপাদিত বেশি দামে বিক্রিযোগ্য ফসল সরিষা ব্যাপক হারে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ভোজ্য তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এ ফসলটির উপযুক্ত মূল্যও রয়েছে বাজারে।

এ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে বাতাসে দূল খাচ্ছে সরিষা ফুলের হলুদের ঢেউ। দুর থেকে দেখে মনে হয় কৃষকের জমিতে হলুদের চাদর বিছানো। এ বছর আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকায় ফসলের মাঠ হলুদ আর হলুদ। সরিষার ভালো ফলনে কৃষকের চোখেমুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলের মাঠগুলো সরিষা হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। ফুলের সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ মানুষ। এ রূপ সৌর্ন্দয্যকে কাছ থেকে দেখতে আসছে নানা বয়সী মানুষ। সৌন্দর্য্যের এই মূহুর্তের ছবি ফ্রেমে বন্দী করছে আগত দর্শনার্থীরা। অনেকেই রংবেরঙ্গের সাজে সেজে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিমায় টিকটক ভিডিও তৈরী করছে দর্শনার্থীরা। অনেকেই পড়ন্ত বিকেলে স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এসেছেন হলুদ রঙ্গের সরিষা ফুলের সুবাস নিতে।

কটিয়াদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে গতবছরের তুলনায় অনেক বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। চলতি বছর এ উপজেলায় ৩৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। গতবছর এ উপজেলায় ৩২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছিল। এ উপজেলায় স্থানীয় জাত ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বারি, বিনা সরিষা-৯ ও বিনা সরিষা-১১ জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সরিষার বীজ বপন করা হয়েছে। কোন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে, আর বাজার মূল্য ভাল থাকলে সরিষা চাষিরা এবার অধিক লাভের আশা করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কটিয়াদী উপজেলা কৃষি অফিসের অধিনে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি এসিসটেন্স প্রজেক্ট (ফ্রিপ) এর আওতায় উন্নত জাত ব্যবহার, সুষম সার প্রয়োগ ও কীটনাশক-ছত্রাকনাশক ব্যবহার ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতিতে উপসহকারী কৃষি অফিসার (এসএএও) মো. মিজানুর রহমানের সার্বিক পর্যবেক্ষণে কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ব্লকের বাহেরচর গ্রামের কৃষণী আমিনা খাতুনের ৩৩ শতাংশ জমিতে তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়।

এছাড়া মো. মিজানুর রহমানের সার্বিক পর্যবেক্ষণে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের ঝিড়ারপাড় গ্রামের কৃষক মো. খোকন মিয়ার ৩৩ শতাংশ জমিতে তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়। একই গ্রামের কৃষক মো. বিল্লাল মিয়ার ৩৩ শতাংশ জমিতে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে বারি সরিষা-১৪ এর প্রদর্শনী বাস্তবান করা হয়।
অপর দিকে প্রনোদনার আওতায় লোহাজুরী ইউনিয়নের ঝিড়ারপার গ্রামের কৃষক জসিম মিয়ার ৩৩ শতাংশ, কৃষক জিয়া উদ্দিনের ৩৩ শতাংশ, কৃষক গোলাপ মিয়ার ৪০ শতাংশ, কৃষক নূরুল ইসলামের ৩৩ শতাংশ, কৃষক আবুল হোসেনের ৪০ শতাংশ, কৃষক আমিন মিয়ার ৩৩ শতাংশ, কৃষক জাহাঙ্গীর মিয়ার ৩৩ শতাংশ, কৃষক জয়নাল আবেদীনের ৩০ শতাংশ, কৃষক মস্তোফা মিয়ার ৩০ শতাংশ, কৃষক কাশেম মিয়ার ২০ শতাংশ ও বায়েজিদ মিয়ার ৩৩ শতাংশ জমিতে তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-৯ ও বারি সরিষা-১৭ জাতের আবাদ করে লাভের আশায় দিন গুনছেন। এছাড়াও লোহাজুরী ইউনিয়নের অন্যান্য ব্লকে আশানুরূপ সরিষা আবাদ করেছে কৃষক-কৃষানীরা।

স্থানীয় কৃষক বিল্লাল মিয়া বলেন, আমি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরিষার বীজ সংগ্রহ করেছি। আমন ধান কেটে সরিষার চাষ করেছি। সরিষার তেল আমার সংসারের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি সরিষার দানা থেকে তেল নিষ্কাশনের পর যে সরিষার খৈল পাওয়া যায় তা গরুর খাদ্য এবং জৈব সার হিসেবে সবজি খেতে ব্যবহার করতে পারি। তাছাড়া সরিষার গাছের পাতা ও ফুলের পাপড়ী পচে উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি হয়। শুকনা সরিষার গাছ রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সরিষা চাষে খরচ কম হয়। আমার জমিতে সরিষার ফলন খুব ভালো হয়েছে।

লোহাজুরী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ব্যাপক হারে সরিষা আবাদ করেছে কৃষকরা। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর ও বোরোধান রোপনের আগে মধ্যবর্তী অতিরিক্ত লাভজনক ফসল হিসেবে সরিষা আবাদ করে থাকে। এছাড়া সরিষা আবাদের পর পরবর্তী ফসল ভালো ফলন হয়।

কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ বছর সরিষার ফলন খুবই ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়নে ৩৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছে কৃষকেরা। গত বছর এই উপজেলায় সরিষার চাষ হয়েছিলো ৩২০ হেক্টর জমিতে। সরিষা চাষে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন উচ্চ ফলনশীল বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বারি, বিনা সরিষা-৯ ও বিনা সরিষা-১১ জাতের সরিষা বীজ ও সার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। আমরা সবসময় চাষীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এখন আগের চেয়ে কম সময় ও কম খরচে সরিষা ঘরে তুলতে পারবে কৃষক।

Don`t copy text!