চাঁদপুর হাজীগঞ্জ,‘টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত’ বলে ঘুষের টাকার নিচ্ছেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার সেই উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান। এমন ভিডিও ভাইরালের পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সাময়িকভাবে এসআই মাহফুজুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ দে-কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
‘চাঁদপুরে ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় এসআই মাহফুজ ক্লোজড’ শিরোনামে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এ এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঘটনার পর তাকে প্রাথমিকভাবে হাজীগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ আবদুর রকিব।
এর আগে গত সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে এসআই মাহফুজুর রহমানকে হাজীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, হাজীগঞ্জের একটি দোকানে বসে সাদা পোশাকে এসআই মাহফুজুর রহমান ঘুষের টাকা গুনে নিচ্ছেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, এসআই মাহফুজুর রহমান স্থানীয় একটি দোকানের চেয়ারে খোশ মেজাজে বসে আছেন। তিনি বলছেন, ১০ হাজার টাকা কইছি। সামনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, সবুরে মেওয়া ফলে। পুলিশ কর্মকর্তা তার দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, এক টাকাও কম হইতো ন।
সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, বস, একটু বসেন। এসআই তখন মুচকি হাসেন। মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেন, কাম শেষ, এখন টিয়া। এসময় আরেক ব্যক্তি বলেন, মাহফুজ ভাই, আসলে যে মুরুব্বি, সে বেকার মানুষ তো জানেন।
এসময় এসআই মাহফুজ হেসে হেসে বলেন, বেকার না আকার। তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, যাই হোক তার ছেলেমেয়ে বাদ, তিনি বেকার মানুষ। তিনি আগে ড্রেজার ব্যবসা-টেবসা করতেন। অনেকের কাছে টাকা পাওনা ছিল। এর আগে যাই দিছি দেখছেননি? তারে একজন দিয়ে গেছে, তার আবার ওষুধ কিনা লাগে, এরপর এ ঝামেলা লাগি গেছে।
এসময় মাহফুজ বলেন, দেন দেন। তখন প্রথম ব্যক্তি বলেন, গরিব মাইনশের লাগি একটু দিলটা নরম করেন। যেডিন ঝামেলা আছে।
এরপর মাহফুজ আরেক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে হাত এগিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মাহফুজের হাতে দেন। ওই ব্যক্তি টাকা দিতে দিতে বলেন, আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন। আমি আরেকদিন এসে ডিটেইলস বলব, তখন বুঝবেন। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না। যদি অফিসিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম। এসময় প্রথম ব্যক্তি বলেন, টাকা গইন্নেন না, গইন্নেন না।
তখন মাহফুজ বলেন, টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত। প্রথম ব্যক্তি বলেন, রুম অন্ধকার, আল্লাহ কইছে মাইনসেরে দেহাই কিল্লাই।
এসময় মাহফুজ মুচকি হাসতে হাসতে টাকা গুনছেন কয়েকবার। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন, চা খাবেন? মাহফুজ জবাব দেন, পরে খাব। এ কথা বলে টাকা হাতের মুঠে নিয়ে বের হয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ছেলের নামে থানায় অভিযোগ দিতে আসেন হাজীগঞ্জ থানার কংগাইশ গ্রামের এক বাসিন্দা। অভিযোগ দিতে এসে এসআই মাহফুজকে দিতে হয় ঘুষের প্রথম কিস্তি। তারপর স্ত্রীসহ ছেলে তার বাবার কাছে ক্ষমা চাইলে পরিবারিক সমস্যা মিটে যায়। তবুও এসআই মাহফুজকে দিতে হয় ঘুষের দ্বিতীয় কিস্তি। আর সেই কিস্তি নিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘টাকা গুনে গুনে নেওয়া সুন্নত’।
এর আগে ফরিদগঞ্জ থানায় কর্মরত অবস্থা স্থানীয় অনেককে রাজনৈতিক মামলায় ফেলে ঘুষ বাণিজ্য করেন মাহফুজুর রহমান। কিন্তু ওই থানা থেকে হাজীগঞ্জে এসেও পুরোনো স্বভাব পরিবর্তন করেননি তিনি