মোঃ শান্ত খান ঢাকা জেলা প্রতিনিধি
‘JU Insiders’ নামের একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে, যেখানে নাম থেকেই ধারণা করা যায় যে, এখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পোস্ট করা হয়। এই পেজের ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ১২ হাজারেরও বেশি। প্রতি শিক্ষাবর্ষে যদি ১৫,০০০ ছাত্রছাত্রী হয়, তবে গত ২০-২১ বছরে সকল ছাত্রছাত্রী যদি এই পেজের ফলোয়ার হতো, তখন এমন সংখ্যা হতে পারত। তবে, ২০১০ সালের আগে অনেক বিভাগ ছিল না এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম ছিল। একই সাথে, ৩৫তম ব্যাচের পূর্ববর্তী সিনিয়রদের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারী তুলনামূলকভাবে কম। এসব বিবেচনা করলে বলা যায়, এই পেজের অনেক ফলোয়ারই জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রছাত্রী নন। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এই পেইজে যারা নিয়মিত রিএ্যাক্ট বা কমেন্ট করেন তাদেরও অধিকাংশই জাবির ছাত্রছাত্রী নন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় দুইটি ফেসবুক গ্রুপ ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’ এবং ‘শুধুই জাহাঙ্গীরনগর’ এর সদস্য সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪ হাজার এবং ৩৩ হাজার। উল্লেখ্য, এই গ্রুপগুলোতে পোস্ট করতে ব্যাচ ও বিভাগের পরিচয় দিতে হয়। অন্যদিকে, ‘JU Insiders’ পেজে নাম বা পরিচয় গোপন করে পোস্ট করা হয়, এবং সেখানে প্রায় প্রতিদিনই উদ্দেশ্যমূলক কিছু পোস্ট করা হচ্ছে। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যাকাণ্ডে জড়িত অনেকের তথ্য আড়াল করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পোস্টও এই পেজ থেকে করা হয়েছে। পেজটা মূলত পরিচালিত হয় এজেন্ডাভিত্তিক।
আন্দোলনে যেসকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সরাসরি অবদান রেখেছিলেন, তাদের বিষয়ে এই পেজ থেকে নিয়মিত বিভ্রান্তিকর পোস্ট করা হচ্ছে। এছাড়া, এই পেজ থেকে ছাত্রদল বা বিএনপির বিরুদ্ধে নিয়মিত বিরতিতে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে, ছাত্রদলের ত্যাগী ও কারানির্যাতিত নেতা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের বিরুদ্ধে একটি ভুয়া স্ক্রিনশর্ট প্রচার করে তা ভাইরাল করে বাবরের মানহানি করার চেষ্টা করা হয়। ইদানিংকালে ছাত্রদলের আরেক পরীক্ষিত নেতা নবীনুর রহমান নবীনকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। নবীন সাভার থেকে নবীনগর পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল এবং জাহাঙ্গীরনগরে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ১ নম্বর আসামি ছিল। আন্দোলন সফল না হলে পেটোয়া বাহিনীর হাতে তার আয়নাঘরের বাসিন্দা হওয়া বা ক্রসফায়ার ছিল প্রায় অবধারিত বলে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা মনে করেন।
অনেকে অভিযোগ করছেন যে, ‘JU Insiders’ পেজের সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের মুখে নিষিদ্ধ হওয়া একটি ছাত্রসংগঠনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই পেজের অ্যাডমিন প্যানেল গোপন থাকায় বিষয়টি ধোঁয়াশাপূর্ণ। পেজের এডমিনদের অতিউৎসাহী কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য একটি বিশেষ সংগঠনের পুনর্বাসন বলেই মনে করেন অনেকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাদের এই পেজের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেকেই।