রবিউল আলম গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুর মহানগরীর ৪০নং ওয়ার্ডের জামিয়া সিদ্দীকিয়া মেঘডুবী মাদরাসার মুতাওয়াল্লির আহবানে আজ শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও গাজীপুরের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের অংশগ্রহণে জামিয়া সিদ্দীকিয়া মেঘডুবী মাদরাসার কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
মাদরাসার সাময়িক বরখাস্তকৃত মুহতামিম জয়নাল আবেদীন ফয়েজীর স্বেচ্ছাচারিতা ও চারিত্রিক অধঃপতনের বিষয়টি তুলে ধরা হলে, সভাপতি এম এম নিয়াজ উদ্দিন তাকে স্থায়ীভাবে ভাবে মাদরাসা মসজিদ থেকে বহিষ্কার আদেশ জারী করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা, মুফতি নাসির উদ্দীন খান সহ গাজিপুরস্থ ওলামায়ে কেরামগণ। এছাড়াও গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মাদরাসার সূচনা ও মুহতামিমের স্বেচ্ছাচারিতা:
১৯৯৬ সালে ঢাকার সন্নিকটে মেঘডুবি এলাকায় ৫৩ শতক জায়গা কেনেন আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী নামক এক ইংরেজী শিক্ষিত সরকারী অবঃকর্মকর্তা। কিছুদিন পর বড় মেয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন এবং দুনিয়া বিমুখ জিন্দেগী কাটানো শুরু করেন। একপর্যায় আখিরাতের চিন্তায় বিভোর হয়ে তিনি ১৯৯৭ সালের মে মাসে তার নামে ও তার মেয়েদের নামে কেনা জায়গা থেকে ৩০ শতাংশ জায়গা মাদরাসার জন্য ওয়াকফ করেন। মৃত মেয়ের রূহের মাগফিরাতের জন্য প্রথমে মহিলা মাদরাসা চালু করলেও, এলাকাবাসী ও বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বুঝানোর কারণে উহাকে জামিয়া সিদ্দীকিয়া মেঘডুবী নামে পুরুষদের মাদরাসায় রূপান্তর করেন। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে আব্দুস সাত্তার সাহেবের সাথে ছিলেন, তার অনেকদিনের পরিচিত মানুষ উস্তাদুল হুফফাজ বিশ্ববিখ্যাত হাফেজ আব্দুল হক দা.বা.।
স্থানীয় আলেম মাওলানা সাইদুল হকের যোগ্য তত্ত্বাবধানে মাদরাসা দিন দিন উন্নতি ঘটতে থাকে। ছাত্র সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে উঠছিল। কিন্তু হঠাৎ এক দুষ্ট লোকের ইশারায় সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়। মাদরাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত সাধারণ শিক্ষক মুফতি জয়নুল আবেদীন ফয়েজী তার মুহতামিম মাওলানা সাইদুল হককে এক ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলে, সে নিজেই মুহতামিম হয়ে মাদরাসায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে৷ মাদরাসার মুতাওয়াল্লি হাজী আব্দুস সাত্তার সাহেবের ব্যক্তিগত সম্পদও ভূলভাল বুঝিয়ে সে আত্মসাৎ করতে শুরু করে। এক পর্যায় মাদরাসার পাশেই জায়গা ক্রয় করে তার জন্য ফাউন্ডেশন বাড়ি বানিয়ে ফেলে।
এছাড়াও ওস্তাদদের সাথে দুর্ব্যবহার সহ, শরীরে হাত পর্যন্তও তুলতে শুরু করে। শিক্ষকদের বেতন মাসের পর মাস বকেয়া পড়ে বিধায় শিক্ষকরাও চলে যেতে থাকেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সে এই ত্রাসের রাজত্ব এলাকায় প্রতিষ্ঠা করে। তার এই কার্যক্রমে এলাকাবাসী ততটা ক্ষুব্ধ ছিল না, যতটা না মাদরাসা ধ্বংস করায় হয়েছে। কিন্তু সে এই মাদরাসাকে ধ্বংসের এমন কিনারায় নিয়ে যায় যে, মাদরাসা ধ্বংস হওয়ার জন্য আর কিছুই বাকি থাকে না।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হাজী আব্দুস সাত্তার সাহেব শেষ বয়সে মুতাওয়াল্লির দায়িত্ব সমর্পণ করেন, তারই সুযোগ্য সন্তান মোহাম্মদ সালেক পারভেজকে। বুযুর্গদের সাথে চলা ফেরা ও সুহবতের কারণে তার ৬ ছেলেকেই তিনি মাদরাসায় শিক্ষায় শিক্ষিত করেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর, তিনি মাদরাসার করুণ অবস্থা দেখে, হাল ধরতে চাইলে, জয়নাল আবেদীন তার মাফিয়া বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অপমানিত করেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, জমির দালালী করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় স্বার্থ হাসিলের জন্য যে কোনো ব্যক্তির নামে নকল দলিল বানিয়ে কাজ উদ্ধার করত নির্দ্বিধায়। ২০০৭ সালে তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আজ অবধি মাদরাসায় ছাত্র সংখ্যা শুধু কমেই এসেছে। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার দুই যূগের বেশী অতিবাহিত হয়ে গেলেও, এখন প্রায় ত্রিশ জনের মত ছাত্র আছে বলে জানা যায়। তাকে বহিষ্কার করায় এলাকাবাসী অত্যন্ত খুশী এবং আনন্দিত বলে স্থানীয়দের থেকে সংবাদ পাওয়া যায়।