খুলনার দাকোপ উপজেলায় ভিন্ন ইউনিয়নে প্রন্তিক জনগোষ্ঠীর উঠানে দেখাযাচ্ছে, কংক্রিটের তৈরি গোলাকার ভিত। তার ওপরে বসানো প্লাস্টিকের ট্যাঙ্ক। ওই ট্যাঙ্কে টিনের চালের সঙ্গে ঝুলানো পাইপ। পাইপের এক মুখ ট্যাঙ্কের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া। বর্ষা হলেই চালের পানি পাইপের মাধ্যমে চলে আসে ট্যাঙ্কে। খুলনার দাকোপ উপজেলার কালাবগী-সুতারখালী গ্রামের বাসিন্দা মো. শহিদুল গাজীর বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
শহিদুল গাজীর গ্রামসহ উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে লবণাক্ততা ও আর্সেনিক দূষণসহ বিভিন্ন কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এ সংকট আরও প্রকট হয় শুষ্ক মৌসুমে। তখন এলাকাজুড়ে শুধু পানযোগ্য পানি নয়, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের পানিরও চরম সংকট দেখা দেয়। এ সংকট নিরসনে এলাকায় রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
তিনি এ প্রতিবেদক কে বলেন, বছরজুড়ে এ অঞ্চলের সমস্যা নোনাপানি। এলাকায় বিশুদ্ধ পানি পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। সুপেয় পানির একমাত্র উৎস হলো পুকুর। তবে সেটাও আগের মতো নেই। বর্তমানে ড্রামে করে চালনা ও খুলনা থেকে ট্রলারে পানি আনতে হয়। এর মধ্যে আশার কথা হচ্ছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বর্ষার পানি সংরক্ষণের জন্য একটি ট্যাঙ্ক পেয়েছি। এতে পরিবারের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর পর স্বজনদের দিয়ে থাকেন।শুধু শহিদুল গাজী নন, দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ২ হাজার পরিবার উপকূলীয় জেলাগুলোয় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় এই ট্যাঙ্ক পেয়েছে। তবে এই প্রকল্প দুটির মাধ্যমে উপকূলীয় এই উপজেলায় মোট ৬ হাজার ৭৭০টি পানির ট্যাঙ্ক বিতরণ করা হবে।স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু কিছু এলাকায় ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূর থেকে পানযোগ্য পানি নিয়ে আসতে হয়। সেখানে সময় লেগে যায় প্রায় অর্ধদিবস। ৬০ শতাংশের বেশি পরিবার শুকনো মৌসুমে বর্ষার পানির পরিবর্তে পুকুরের পানি পান করে থাকে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বড় ট্যাঙ্কের অভাবে অনেক পরিবার সারা বছর খাওয়ার জন্য বর্ষার পানি ধরে রাখতে পারে না।জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা বলছেন, লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এ উপজেলায়। উপজেলার অধিকাংশ স্থানেই ভূগর্ভে পানযোগ্য পানির স্তর না পাওয়ায় গভীর নলকূপ চালু করা যায় না। অগভীর নলকূপের পানিতে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ও আর্সেনিক দূষণ। তাই এসব এলাকায় সুপেয় পানির অভাব সবসময়ই থাকে। এলাকার মানুষের পানির চাহিদা পূরণের জন্য পুকুর ও রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম হচ্ছে ভরসা।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দাকোপ উপজেলায় স্থায়ীভাবে পানি সংকটের জন্য দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামভিত্তিক রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ প্রকল্প দুটির আওতায় ৬ হাজার ৭৭০টি পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হলেও বাস্তবায়ন করা হয়েছে দুই হাজার পরিবারের মধ্যে। উপজেলা পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কমিটি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্প দুটির ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পূর্ণ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
দাকোপ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, লবণাক্ততা ও আর্সেনিক দূষণসহ বিভিন্ন কারণে উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। সংকট নিরসনের জন্য দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্প দুটি শতভাগ সম্পূর্ণ হলে ৩৩ হাজার ৮৫০ জন মানুষ সুপেয় পানির আওতায় আসবে। সেক্ষেত্রে সবমিলে উপজেলার ৭৮ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পাবেন।