রাজধানীতে আগামীকাল সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। বেলা ২টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় দলের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও জাতীয় নেতৃবৃন্দরাও বক্তব্য দেবেন। যথাসময়ে দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণকে সমাবেশে যোগদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টায় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান অতি দ্রুতই দেশে ফিরবেন।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমাদের নেতা তারেক রহমান, তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করা হয়েছে। তিনি এ আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন, তাকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব।
প্রসঙ্গত, আন্দোলনের মুখে নির্বাহী আদেশে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরি থেকে কোটা প্রথা বিলুপ্ত করেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি সংগঠনের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর গত ৬ জুন হাইকোর্ট আবারও কোটা বহাল করে রায় দেয়। এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরদিন ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনে’র ব্যানারে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংগঠিত হতে থাকেন তারা।
এ ব্যাপারে সরকারপ্রধানের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দেওয়া বক্তব্য, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ছাত্রলীগের হুমকি আন্দোলনে গতি সঞ্চার করে। আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতি-পুতি হিসেবে ইঙ্গিত করায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অভিমানে নিজেদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে তারা স্লোগান দেন সারা দেশের ক্যাম্পাসে। অবস্থা বেগতিক দেখে ছাত্রলীগ পুলিশ ও বহিরাগত হেলমেট বাহিনীর সহযোগিতায় বেদম পেটায় আন্দোলনকারীদের। এক পর্যায়ে রংপুরে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
এ দৃশ্য লাইভে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় পুরো জাতি। ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভের আগুন সবখানে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়নও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সমন্বয়কদের কয়েকজনকে গুম এবং পরে তুলে নিয়ে আটকে রাখা হয় ডিবি অফিসে। তাদের দিয়ে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা পাঠ করান সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ।
এদিকে, আন্দোলনে যোগ দেয় অভিভাবকের সঙ্গে, শিক্ষক, নানা শ্রেণির পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ। ঢাকার আকাশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়। গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে মারা যায় ফুটফুটে শিশু, মেধাবী শিক্ষার্থী, নিম্ন আয়ের মানুষ, পথচারীসহ অনেকে। প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় লাশ পড়তে থাকে। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ, টিয়ার গ্যাসের শেল, বাতাসে বারুদের গন্ধে এক যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা দেয় দেশে।
আন্দোলনকারীদের ডাকে একের পর এক অভিনব কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে থাকে কবি-শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দল শুরু থেকে সহযোগিতা করে আসছিল। শুরুতে কোটা বাতিল চাইলেও আস্তে আস্তে চার এবং ৯ দফায় ওঠে আন্দোলন।
এরই মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস করে দুর্বৃত্তরা। প্রধানমন্ত্রী সেসব পরিদর্শনে গিয়ে সম্পদের জন্য কান্নাকাটি করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। কারফিউ জারি করার মধ্য দিয়ে সরকার নিজের কফিনে নিজেই শেষ পেরেক ঠুকে দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি মানা হবে বললেও তাদের ওপর হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার চলতেই থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করলেও আন্দোলন দমনে সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশিত হতে থাকে। দিন দিন দানা বেঁধে ওঠে গণঅভ্যুত্থানের ডাক।
অনেক দেরিতে টনক নড়ে সরকারের। আলোচনার প্রস্তাব দেন সরকারপ্রধান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেলে আন্দোলনকারীদের ডাকে সর্বস্তরের মানুষ জড়ো হলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বতঃস্ফূর্ত এক অভ্যুত্থান থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে একদফা ঘোষণা করেন। হাজারও জনতা সমস্বরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিকে সমর্থন করেন এক আঙুল দেখিয়ে। বাঙালির অহংকারের শহীদ মিনার, মুক্তির সোপানতল আবারও একটি আবেগের সাক্ষী হয়ে রইল।
পরদিন ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ দিন সারা দেশে ১৪ পুলিশ, শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। সমন্বয়করাও চাইছিলেন আন্দোলনকে দ্রুত পূর্ণতা দিতে। তাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনেন। ৫ আগস্ট ঠিক হয় ‘মার্চ টু ঢাকা’। ওদিকে, তিন বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
বারবার ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করেও গুজব আটকাতে ব্যর্থ হয় সরকার। শেষ মুহূর্তে জনগণ মুক্তির আভাস পেলেও বুঝতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ৪ আগস্টও আন্দোলনকারীদের জঙ্গি, বিএনপি-জামায়াত, সন্ত্রাসী উল্লেখ করে হামলা অব্যাহত রেখেছে।
রাতভর নানা গুঞ্জনের পর সোমবার ভোরে অবশেষে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। দেশকে সংকটে রেখেই চলে গেলেন তিনি। দেশজুড়ে চলছে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। এমনকি তার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণভবন লুট হয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল আক্রমণের স্টাইলে।
গত ১৫ বছরের দমন-পীড়নের বদলা নিতে এরই মধ্যে সারা দেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ, তাদের বাড়ি-অফিসে হামলা-আগুন দেওয়া অব্যাহত রেখেছে উন্মত্ত জনতা। শ্রীলংকান স্টাইলে চলছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সন্ধান। এদিকে, তিনি লাখো নেতাকর্মীকে বিপদে ফেলে রেখে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে আবারও আশ্রয় প্রার্থনায় পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশ বিভুঁইয়ে।