ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনে মালগাড়ির ধাক্কায় পেছন দিকের দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে নিহত বেড়ে পনেরজনে দাঁড়িয়েছে। আহত অন্তত ৩০ থেকে ৫০ জন। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার (১৭ জুন) সকালে শিয়ালদহের দিকে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেন।
দার্জিলিং পুলিশের অ্যাডিশনার এসপি অভিষেক রায় বলেন, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনে মালগাড়ি ধাক্কা দিয়েছে। এতে ১৫ জন নিহত হয়েছে। ৪০ জনের বেশি আহত। সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। গ্যাসকাটার দিয়ে কেটে মালগাড়ির ইঞ্জিন বের করতে হবে। সামনে একটি জায়গায় অস্থায়ীভাবে আহতদের নিয়ে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতালে পাঠানো হবে।’
আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল বলেও জানান তিনি।
শিলিগুড়িতে সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি চলছে। তার মাঝে এই দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজও ব্যাহত হচ্ছে। যে লাইনে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির সাথে রেল যোগাযোগের প্রধান লাইন সেটাই। ফলে আপাতত দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে সোমবার সকালে নির্ধারিত সময়েই রওনা দিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। নীচবাড়ি এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে। পেছন দিক থেকে একটি মালগাড়ি এসে ওই ট্রেনে ধাক্কা দেয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছন দিক থেকে পর পর দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে পাশে ছিটকে পড়ে।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা নিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে উদ্বেগ প্রকাশ করে পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
তিনি লেখেন, ‘এই মাত্র দার্জিলিঙের ফাঁসিদেয়া এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেলাম। বিস্তারিত এখনো জানতে পারিনি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে মালগাড়ি ধাক্কা মেরেছে শুনেছি। জেলা প্রশাসক, এসপি, চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হচ্ছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন রেলমন্ত্রীও।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ট্রেন থেকে ছিটকে যাওয়া কামরা দু’টি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। একটি কামরা লাইন থেকে ওপরের দিকে উঠে রয়েছে। তার নিচে ঢুকে রয়েছে মালগাড়ির কামরা। স্থানীয়েরা উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে, এলাকায় বৃষ্টিও চলছে। অনেকে ছাতা মাথায় ঘটনাস্থলে রয়েছে।
তবে কিভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, এখনো স্পষ্ট নয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস স্টেশনের আগে দাঁড়িয়ে ছিল কিনা, ওই লাইনে কেন মালগাড়ি চলে এলো, সিগন্যালের কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা, একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। একই সাথে আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
২০২৩ সালের ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনের সঙ্গে একটি মালগাড়ি এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের ধাক্কা লাগে। ২৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেই ঘটনায়।
এর আগে, ২০২২ সালে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির কাছে দোমোহনিতে লাইনচ্যুত হয়েছিল বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। পাঁচজন নিহত হয়েছিল সেই ঘটনায়। রাঙাপানি স্টেশনের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা সেই স্মৃতি ফিরিয়ে দিলো।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা