সবার সুখে হাঁসব আমি, কাঁদব সবার দুঃখে, কবিতার এ কথাকে বাস্তবে রুপ দিতে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগী করতে বাবা হারা এতিম মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মুহাম্মদ হামিমের (৯) হাতে নতুন পোশাক তুলে দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাটারা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাকারিয়াস দাস।
শুক্রবার বিকেলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মুহাম্মদ হামিমকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর মা সালমা আক্তার সাহায্যের জন্য হাজির হয় ভাটারা থানায়। অসহায় এই পরিবারটির দুঃখ দুর্দশা শুনে নগদ অর্থ এবং মাদ্রাসার প্রয়োজনীয় নতুন পোশাক তাদের হাতে তুলে দেন এই খ্রিস্টান পুলিশ কর্মকর্তা।
নগদ অর্থ ও ছেলের নতুন পোশাক হাতে পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি অশ্রুসিক্ত মা সালমা আক্তারের চোখে মুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ। এমন একটি আবেগঘন মুহূর্ত উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের চোঁখের সামনে পড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৩ সালে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার দত্তপাড়া গ্রামের আব্দুস সালামের মেয়ে সালমা আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন একই গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে বাস চালক মুহাম্মদ রাজু। তাদের দাম্পত্য জীবনে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ভালোই চলছিল তাদের সুখের সংসার। ২০১৩ সালে এই সংসারে নেমে আসে কালো ছায়া। সালমা আক্তার ৩ মাসের গর্ভবতী অবস্থায় দুর্বৃত্তদের পেট্রোল বোমার আঘাতে নিহত হন সালমা আক্তারের স্বামী বাস চালক মুহাম্মদ রাজু। স্বামীর মৃত্যুর পরও জীবন যুদ্ধে থেমে থাকেননি সালমা আক্তার। রাজধানীর খিলখেত খাপারা মহল্লায় ভাড়া বাসায় থেকে যমুনা ফিউচার পার্কে সামান্য বেতনে চাকুরি করে সংসার চালান তিনি। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ফাহিমা আক্তার (১৮) রাজধানীর শফিউদ্দিন কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। এছাড়াও মেজো ছেলে মুহাম্মদ মাহিম (১১) খিলখেত দারুল উলুম মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে এবং একই মাদ্রাসায় ছোট ছেলে মুহাম্মদ হামিম (৯) পড়াশুনা করছে। অভাব অনটনে থাকা এই অসহায় পরিবারটির পাশে থাকতে পেরে পুলিশ কর্মকর্তা মাকারিয়াস দাসের মাঝেও খুশির অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মুহাম্মদ হামিমের মা সালমা আক্তার জানান, অভাবের সংসারে তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর কর্মের সামান্য অর্থের পাশাপাশি ভাটারা থানা পুলিশের সহায়তায় এ পর্যন্ত সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। সাহায্য চাইতে এসে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পেয়েছি পুলিশ কর্মকর্তা মাকারিয়াস দাস স্যারের কাছে। ছেলের জন্য মাদ্রাসার প্রয়োজনীয় নতুন পোশাক পেয়ে খুব খুশী লাগছে। স্যারের কাছে ঋণী হয়ে থাকলাম। আল্লাহর কাছে স্যারের জন্য আমাদের দোয়া থাকবে।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মুহাম্মদ হামিম বলেন, আমার আগে কোনো ভাল পোশাক ছিল না। এত দাম দিয়ে পায়জামা পাঞ্জাবি বানানো সম্ভব না। আজ আমি খুব খুশী।
জানতে চাইলে ভাটারা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাকারিয়াস দাস বলেন, দুর্বৃত্তদের ছোড়া আগুনে নিহত বাস চালক মুহাম্মদ রাজুর রেখে যাওয়া পরিবারটি অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল না। মা হিসেবে সালমা আক্তারের পক্ষে তিন সন্তানের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ চালানো কষ্টসাধ্য। বিষয়টি জানার পর সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মুহাম্মদ হামিম নতুন জামা পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। আজ যেনো তাদের ঈদ এমন এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আগামীতেও তাদের পাশে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে ভাটারা থানা পুলিশের।