ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীন জরাজীর্ণ ব্যারাক প্রতিস্থাপনে কোটি টাকা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ১০ জুন সোমবার প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে নির্মিত এসব ঘর গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করবেন বলে কথা রয়েছে।
নান্দাইল উপজেলায় ২০০১ সালে নির্মিত চর মহেষকুড়া, বারোপাড়া, মেরাকোনা ও ভাটি পাঁচানী গ্রামে আশ্রয়ন প্রকল্প রয়েছে। এ সব প্রকল্পে বেশ কয়েকটি ব্যারাকে পাকা ভিটে ফ্ল্যাটবারের উপর টিনের চালা ও বেড়ার অনেক গুলো ঘর রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ সব ঘরে গৃহহীনরা বসবাস করে আসছেন। কিন্তু কোন সংস্কারনা হওয়ায় সেগুলি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়লে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব ঘরের জায়গায় নুতন করে আধাপাকা ঘর নিমার্নের নির্দেশ দেন। সে নির্দেশনা অনুযায়ি নান্দাইল উপজেলায় চর মহেষকুড়া আবাসন প্রকল্পে ১০৯ টি মেরাকোনায় ৫৪ টি বারোপাড়ায় ১৯ টি সহ মোট ১৮২ টি টিনের ঘরকে আধাপাকা ঘরে রুপান্তন করা হয়। একাজে সরকারিভাবে বরাদ্ধ করা হয় প্রায় ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্ধ ৩ লাখ ৪ হাজার ৫ শত টাকা। মালামাল পরিবহন খাতে রয়েছে আরও ৫ হাজার টাকা করে। এ কাজ সুষ্টভাবে সম্পন্নের জন্য উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও)কে প্রধান,প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও)কে সদস্য সচিব,উপজেলা প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে সদস্য করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়। অভিযোগ রয়েছে নান্দাইলের ইউএনও কমিটির কারোর কোন মতামত না নিয়ে একাই চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঠিকাদার এনে সমস্ত কাজ করিয়েছেন। ঘর নিমাণের্র সকল মালামালও তিনি এনেছেন তাঁর নিজ জেলা নেত্রকোনা থেকে।
গত দুদিন উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ন প্রকল্পে গিয়ে নুতন করে নির্র্মিত এসব ঘর নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের দূনীতি ও অবহেলার প্রমান পাওয়া গেছে। খারুয়া ইউপির চর মহেশকুড়া আশ্রয়ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায় নুতন ঘর নির্মানে ব্যবহার করা হয়েছে অপরিপক্ক ইউক্লিপ্টাস গাছের কাঠ। চালে ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি সাইজের কুড় ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে পৌনে দুই বাই পৌনে দুই সাইজের এবং ২ বাই ১ ইঞ্চি সাইজের খাপ ব্যবহার করার বদলে ব্যবহার করা হয়েছে পৌনে ২ বাই পৌনে ২ সাইজের খাপ। ১৩ ফুট চালে দেওয়া হয়েছে ৬টি কুড় ও ৪ টি খাপ। পিছনের বারান্দায় কাঠ বাচাতে গিয়ে চালের টিন এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে একটু বৃষ্টিতেই ঘরে পানি ঢুকছে। জানালায় দেওয়া হয়নি কোন সানসেড। সে আবাসন প্রকল্পের সভাপতি আবদুর রহিম জানান, প্রতিটি ঘরে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, এছাড়াও নুতন করে নির্মিত ঘরে ২ ও ৩ নাম্বার ইট এবং নিন্মমানের টিন, কাঠ, কম বালি সিমেন্ট ব্যবহার করায় কাজের মান খুব খারাপ হয়েছে। তারা এসবের প্রতিবাদ করলেই ইউএনও স্যার রেগে ঘর দেওয়া হবেনা বলে হুমকি দিতেন। আবুল কাশেম নামে অন্য একজন জানান, চালের স্ক্রুগুলি স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে না বসিয়ে হাতুড়ির আঘাতে বসানো হয়েছে। এ কারণে সেখানদিয়ে পানি পড়ে ঘর ভেসে যাচ্ছে। আশ্রিতরা জানান, কোন টেন্ডার না দিয়ে পুরাতন প্রতিটি পুরাতন ঘরও ভালো দামে বিক্রি করা হয়েছে। সে টাকা কোথায় এবং কোন খাতে জমা হয়েছে সে বিষয়টিও তারা অবগত নন।
শেরপুর ইউপি মেরাকোনা প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায় সেখানে এখনো কাজ চললেও কোথাও কোথাও ইতিমধ্যেই জানালার পার্ট খুলে পড়ে গেছে। দরজা জানালায় ব্যবহার করা হয়েছে নিন্মমানের প্লেনশীট। তাছাড়াও প্রতিটি শীট জোড়ার রয়েছে ফাঁকা জায়গা। সেখান দিয়েও ঘরে পানি ঢুকছে। কয়েকটি নব নির্মিত ঘরের ভিটের ওয়ালে ফাটল ধরেছে। নিন্মমানের কাঠ ব্যবহার করায় ইতিমধ্যে অনেক ঘরের বারান্দার চাল নিচের দিকে ঝুলে গেছে। ঘরের মেঝে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেবার কথা থাকলেও কাদামাটিতে মাত্র দেড় ইঞ্চি ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। পিলারে ১২ এমএম রড দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ১০ এমএম। বাসিন্দা লাকি আক্তার ও আব্দুল হেকিম জানান, কাজ নিয়ে কোন কথা বললেই আমাদের ধমক দিয়ে ঠিকাদার বলেন, আপনারা কি ইঞ্জিনিয়ার, এত বুঝেন কেন ! ৪৫ হাজার টাকায় এরচেয়ে ভাল ঘর কিভাবে পাবেন।
ঠিকাদার চাপাইনবাবগঞ্জের কামরুল ইসলাম জানান, ইউএনও স্যার সমস্ত মালামাল এনে দিয়েছেন। তিনি শ্রমিক লাগিয়ে শুধু ঘর তৈরী করে দিচ্ছেন। প্রতিটি ঘর তৈরীতে তিনি শ্রমিক বাবদ নিচ্ছেন ৪৫ হাজার টাকা।
আশ্রয়ন প্রকল্পের আশপাশে যেসব ভূমিহীন পরিবার রয়েছে তাদের ঘর বরাদ্ধ না দিয়ে দূর দূরান্তের স্বচ্ছল পরিবারকে টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্ধ দেবার অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। আবার পূর্বে আবাসনের যে ঘরে যারা এতদিন বসবাস করতেন নুতন ঘর তাদের নামে বরাদ্ধ না দিয়ে অন্যদের দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ হাতেম আলী নামে এক বাসিন্দার। মুসল্লী ইউপির বারোপাড়া প্রকল্পে গিয়েও একই ধরনের কাজ হতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্য খারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসনাত ভূইয়া মিন্টু জানান, তিনি কমিটিতে আছেন তা শুনেছেন কিন্তু কাজের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা। ইউএনও স্যার কাজ করাচ্ছেন সবকিছু তিনিই(ইউএনও)বলতে পারবেন।
উপজেলা প্রকৌশলী শাহবো রহমান সজীব বলেন,কাজের শুরুতে কমিটির সদস্য হিসাবে আমি একদিন ইউএনও স্যারের সাথে মাঠে গিয়েছিলাম,এর বাহিরে কিছু জানিনা।
নান্দাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও)ও কমিটির সদস্য সচিব আহসান উল্লাহ জানান, তিনি কমিটির সদস্য সচিব হওয়াতে কাজের সকল দায়ভার তাঁর হলেও কাজ করিয়েছেন ইউএনও স্যার। কাজের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে ইউএনও স্যারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও)অরুণ কৃষ্ণ পালের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,উপজেলা প্রকৌশলীকে সাথে নিয়ে কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত কাজের মান নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। পেলে বিষয়টি দেখব।