গত ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯ ইং তারিখে বিডিআর সদরদপ্তরে সংঘটিত ঘটনায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বিস্ফোরক মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পাঁচশতাধিক বিডিআর সদস্যদের পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মানবিক আবেদন করে মানববন্ধন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকাল ১১ টার সময় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে স্বজনরা এই মানববন্ধন করেন। এ সময় তাদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, পিলখানা ঘটনায় আমাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। বিডিআর আইনের বিভাগীয় মামলা, ফৌজদারী আইনের হত্যা মামলা ও ফৌজদারী আইনের বিস্ফোরক মামলা। ইতিমধ্যে আমাদের স্বজনরা বিডিআর আইনের সাজা ভোগ শেষ করেছে এবং ফৌজদারী আইনে হত্যা মামলা হতে খালাস পেয়েছে। হত্যা মামলা থেকে খালাস পাওয়া সদস্যের সংখ্যা প্রায় পাঁচশতাধিক, তার মধ্যে চট্টগ্রামের ১শ ‘রও অধিক। তারা হত্যা মামলায় ফৌজদারী আইনে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা ভোগ শেষ করেছে। শুধু মাত্র বিস্ফোরক মামলাটির জন্য মুক্তি মিলছেনা পাঁচশতাধিক বন্দি বিডিআর সদস্যদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত শুধুমাত্র বিস্ফোরক দ্রব্য মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় এবং সাংবিধানিক অধিকার থাকা সত্ত্বেও জামিন না পাওয়ায় আমাদের স্বজনদের আমরা ফিরে পাচ্ছি না। এই দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত আমাদের এই অসহায় পরিবার গুলো উপার্জনক্ষম কারো পিতা, কারো স্বামী, কারো সন্তান কারাগারে থাকায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করতেছি এবং দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে থাকার কারণে আমাদের স্বজনরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু শয্যায় রয়েছে। পিলখানার সংঘটিত ঘটনায় দায়েরকৃত বিস্ফোরক মামলাটি ইতিমধ্যে ১৬ বছর অতিবাহিত হয়েছে। হত্যা মামলাটির ২ বছর ১১ মাসে ৬৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ও সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে রায় প্রদান করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত বিস্ফোরক মামলাটি ১৬ বছরে মাত্র ২৮৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। মামলাটির দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। বিস্ফোরক মামলায় জামিন প্রদানে আইনগত বাধা না থাকলেও খালাস প্রাপ্তদের একজনকেও জামিন দেওয়া হয়নাই। এভাবে ধীরগতিতে মামলা চলতে থাকলে আসামীদের জীবদ্দশায় শেষ হবে কিনা সন্দেহ থেকে যায়। আমরা বারবার বিস্ফোরক মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নিম্ন আদালতে আবেদন করলেও কেউ কোন কর্ণপাত করেনি। মামলাটি উচ্চ আদালতে পরিচালনার জন্য আর্থিকভাবে অক্ষম বিধায় পুরোপুরিভাবে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারছি না এবং আইনজীবীদের কে আর্থিক অভাব অনটনের কারণে নিয়োগ দিতে পারছি না। শুধুমাত্র বিস্ফোরক মামলার কারণে ১৬ বছরের অধিক সময় ধরে আমাদের স্বজনেরা কারাভোগ করিতেছে। আমরা প্রত্যেকই নিম্মবৃত্ত পরিবার থেকে এসেছি। আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বিডিআর সদস্যরা যারা ইতিমধ্যে চাকরি হারিয়ে জেলখায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। একদিকে পরিবারের ব্যয় ভার এবং মামলা পরিচালনায় আইনজীবীর ব্যয় ভার বহন করতে আমরা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছি। অপরদিকে বছরের পর বছর তাদের মামলার ঘানি টানতে গিয়ে পরিবার গুলো আজ নিঃস্ব। বিভিন্ন জেলার দূরদুরান্ত থেকে ঢাকায় এসে মামলা পরিচালনা করা এবং বন্দি বিডিআর সদস্যদের খোঁজখবর রাখা দূরহ হয়ে পড়েছে। অভিযুক্তদের অনেকেই বয়স্ক হওয়ায় জেলের মধ্যে থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এটা ভেবে যে তারা আর কোন দিন বাহিরের আলো বাতাস দেখতে পাবে কিনা? অনেক বিডিআর সদস্য মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আজ আমাদের বাবা থাকা সত্ত্বেও সন্তানরা এতিম, স্বামী থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীরা বিধবা, ভাই থাকা সত্ত্বেও আমরা ভাই হারা, ছেলে থাকা সত্ত্বেও বাবা-মা সন্তান হারা। আমরাও চাই প্রকৃত ন্যায় বিচারের স্বার্থে দোষীদের বিচার হোক এবং যারা নির্দোষ তারাও অবিলম্বে মুক্তি পাক। আমরা বন্দীদের স্বজনরা বর্তমান সরকার ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে এবং নিরাপরাধ ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় ভূমিকা পালন করবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত আবেদন করছি তিনি যেন বিস্ফোরক মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন, যাতে করে হত্যা ও বিডিআর পরিচালিত আইনে মামলা থেকে খালাস পাওয়া বন্দিরা জেল থেকে মুক্তি পায়।