ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার
৫৫ পয়েন্টে বাঁধে ভাঙন ও বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপকূল কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একইসঙ্গে খুলনার দাকোপ উপজেলায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে গেছে।
রোববার (২৬ মে) দিবাগত রাতের এ ঘটনায় ভেসে গেছে চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের খেত, উপড়ে গেছে বহু গাছ। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে খুলনা মহানগরীর নিম্নাঞ্চল। ঝড়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়েছে। সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, রোববার ২৬ মে দিবাগত রাতে জোয়ারের চাপে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বেলাল গাজীর বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া বাঁধের নিচু কয়েকটি জায়গা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব জায়গায় এলাকার মানুষ রাতভর মেরামত কাজ চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। এতে ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।
কয়রা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম তারিক উজ জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ও তুলনামূলক নিচু স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কাজ করছেন। আমি নিজেও সেখানে যাচ্ছি। জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন ঝড়ো বাতাস বইছে।
দাকোপ উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে গেছে। উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগী ফকিরকোনা, ঝুলন্তপাড়া এবং পন্ডিতচন্দ্র স্কুল সংলগ্ন এলাকা সম্পূর্ণ প্লাবিত। এ অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে দাকোপের তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্ষিতীশ গোলদার বলেন, একই এলাকায় পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে এখন পানি ঢুকছে। কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ও বাজুয়া ইউনিয়নের -১নং ওয়ার্ডের বাজুয়া বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ৩ টি এলাকা ও লাউডোব ইউনিয়নে মাছের ঘের প্রায় পুরোটা লোনা পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নম্বর ও ৩২ পোল্ডারের আওতাভুক্ত। সোমবার ২৭ মে ভাঙ্গন এলাকা বটবুনিয়া ও কামিনী বাসিয়া পরিদর্শন করেছেন খুলনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডল।তিনি দুর্যোগ উপেক্ষা করে ঐ সময় ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং স্হানীয়দের সাথে কথা বলেন।
স্বজল বম্ম্রচারী বলেন, এত উঁচু জোয়ার আগে তিনি দেখিনি। ঢাকি ও শিবসা নদীর মোহনায় কামিনীবাসিয়া পুরাতন পুলিশ ক্যাম্প-সংলগ্ন ওই এলাকায় বেড়িবাঁধের অংশ খুব বেশি দুর্বল ছিল না। তবে বেশ কিছুটা নিচু হওয়ায় উচ্চ জোয়ারের চাপে পানি বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে ভেতরে ঢোকে। এরপর বেড়িবাঁধের পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে যায়।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে প্রচণ্ড ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি উপজেলায় বাঁধ ভেঙে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে সহস্রাধিক মৎস্য ঘের। ভেঙে গেছে ৭৭ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। রিমালের প্রভাবে খুলনায় চার লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে এসে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হলেও বৃষ্টি ও বাতাসের গতিবেগ রয়েছে আগের মতোই।
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ৭৬ হাজার ৯০৪টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫২টি ওয়ার্ড সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু উপজেলাগুলোতেই নয়, খুলনা মহানগরীতে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা। উপড়ে পড়েছে গাছপালা। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চার লাখ ৫২ হাজার ২০০ মানুষ।
ঘূর্ণিঝড় চলাকালে বটিয়াঘাটা উপজেলায় গাছচাপা পড়ে লালচাঁদ মোড়ল নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি গাওঘরা গ্রামের গহর মোড়লের ছেলে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, সকালে তিনি একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় গাছ ভেঙে পড়ে। গাছের নিচে চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয়। তবে ঝড়ে আর কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, জোয়ারের পানিতে দাকোপের বেশকিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। আমার ইউএনও বাংলোর সামনের পুকুর তলিয়ে গেছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে নগরীর লবণচরা, টুটপাড়া, মহিরবাড়ি খাল পাড়, শিপইয়ার্ড সড়ক, রূপসা, চানমারী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো ওই সব সড়কে পানি রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ মো. আমিরুল আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বর্তমানে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকা কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। শুনেছি বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ঝড়ের কারণে খুলনা বিভাগে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন খুলনার কয়েক লাখ মানুষ। খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান জানান, দমকা হাওয়ায় ৯ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের আটটি খুঁটি ভেঙে গেছে। এ ছাড়া ১২১টি জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে, ২৪৫টি মিটার ও ৪৮টি ক্রস আর্ম ভেঙে গেছে। এতে উপজেলার প্রায় চার লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ ব