চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এনএসআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে প্রতারক চক্রের মূলহোতা সহ ২ জন প্রতারক’কে আটক করেছে র্যাব-৭,চট্টগ্রাম। বুধবার সন্ধ্যা ৬:২০ মিনিটের সময় উপজেলার প্রেমতলা কলেজ রোড এলাকায় তার বসতবাড়ীতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে এই চক্রের মূলহোতা কাজীমুদ্দিন মিস্ত্রী বাড়ীর মোঃ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩৪) কে আটক করে র্যাব-৭। এ সময় তার বসতঘর তল্লাশী করে ৯৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারসহ আসামীর প্রতারণার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ডকুমেন্টও জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে মমতাজ বেগমের দেয়া তথ্য মতে র্যাব ও এনএসআই এর যৌথ আভিযানিক দল একই দিন অভিযান পরিচালনা করে মমতাজ বেগমের অপরাধের সহযোগী তার স্বামী কে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মাহমুদাবাদ দীঘির পাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কাজীমুদ্দিন মিস্ত্রি বাড়ীর সামছুরজ্জামানের পুত্র মোঃ মুজিবুর রহমান (৪৬) কে আটক করে র্যাব-৭। মামলা ও র্যাব সূত্রে জানা যায়, প্রতারক মমতাজ বেগম ও মুজিবুর রহমান এর দ্বারা প্রতারণার স্বীকার ভুক্তভোগী মুঞ্জুর আলম এসএসসি পাস করার পর থেকে চাকুরীর জন্য চেষ্টা করে আসছিল। গত ২০২১ সালে তার ভাগিনীর বিয়েতে মমতাজ বেগম এর সাথে ভুক্তভোগীর পরিচয় হয়। উক্ত পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি জানতে পারেন মমতাজ বেগম ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন, এনএসআই (যা আসলে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) এর উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছে। মমতাজ বেগম ভুক্তভোগী মুঞ্জুর আলমকে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার পদে চাকরী লাভের প্রলোভন দেখায়। উক্ত প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে চাকুরী প্রত্যাশী মুঞ্জুর আলমকে মমতাজ বেগম ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার পদে চাকুরী দিবে বল আশ্বস্ত করে। ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার পদে চাকুরী লাভের বিষয়টি ভুক্তভোগী মুঞ্জুর আলম অপর চাকুরী প্রত্যাশী তার বোন জামাই, মামা এবং বন্ধুকে জানালে তারা সকলে চাকুরীর জন্য মমতাজ বেগমের বাড়ীতে যায় এবং মমতাজ বেগমের স্বামী মুজিবুর রহমান তাদের সবাইকে চাকুরী দিতে পারবে বলে পুনরায় আশ্বস্ত করে। উক্ত আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে গত ২২ নভেম্বর ২০২১ তারিখে চাকুরী প্রত্যাশী ভুক্তভোগী মুঞ্জুর আলম ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তার মামা একরাম হোসেন ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তার বন্ধু নয়ন ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা এবং তার বোন জামাই ১২ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ৩৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা মমতাজ বেগমকে প্রদান করে। উক্ত টাকার সিকিউরিটি হিসেবে ষ্ট্যাম্পে প্রতারকরা লিখিত অঙ্গীকারনামা প্রদান করে এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার ৫ টি চেক প্রদান করে। দীর্ঘ ২ বছর ৬ মাস পর এনএসআই এর সার্কুলার হলেও মমতাজ বেগম তাদেরকে চাকুরী দিতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে তারা জানতে পারে যে মমতাজ বেগম ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন, এনএসআই (যা আসলে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) এর উপ-পরিচালক পদে কখনোই চাকরী করেনি এবং সে সরকারী কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে চাকরী দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীদের নিকট হতে অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে ৩৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে চাকরী প্রত্যাশীরা টাকা ফেরত চাইলে মমতাজ বেগম ও তার স্বামী তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাড়ী থেকে বের করে দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করে। এ বিষয়ে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিডিয়া নূরুল আবছার বলেন, ভুয়া এনএসআই এর পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বেকার যুবকদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতা সহ দুই জন কে আটক করা হয়। মুজিবুর রহমান সে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমকে এনএসআইয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে পরস্পর জড়িত হয়ে চাকুরী প্রার্থীদের চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন লোকজনদের নিকট হতে টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করে আসছে। এছাড়া মমতাজ বেগম দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রয় করে আসছিল। আটককৃত আসামীরা এবং উদ্ধারকৃত মাদক ও অন্যান্য আলামত সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে আসামীদেরকে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।