বিশেষ প্রতিনিধি।
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ’ অর্থাৎ সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা দিতে হবে। আইনি কাঠামো দ্বারা সুরক্ষা না দিলে সাংবাদিক সমাজ প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে থাকবে এবং বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত তাই হচ্ছে।
আর একাজে রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক মানবিক ও নৈতিক পরিমাপে নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ হওয়া যা সময়ের দাবিও বটে।
রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সব স্তরে এবং আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আলোচনায় আসছে। যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হবে ততদিন পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতাও সম্ভব হবে না। বর্তমানে ব্যাপক হারে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব সম্পাদনে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে হচ্ছে কারনে অকারনে তাছাড়া মামলা-গ্রেপ্তারে পিষ্ট হচ্ছে এবং নিকট ভবিষ্যতে হবে।
এর ফলে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালনে গণমাধ্যম ক্রমাগতভাবে ব্যর্থ হতে থাকবে। তাই বাঙালির তৃতীয় জাগরণের এ কালে জাতি বিনির্মাণে আজ সাংবাদিক সমাজকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব এবং প্রশাসনে অংশগ্রহণের জন্য আওয়াজ তুলতে হবে।
দেশে কর্মরত সাংবাদিকগন নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে আজ বহু ভাগে বিভক্ত। সাংবাদিক সমাজের নিজেদের মধ্যকার বিরাজমান এই বিভক্তির সুযোগ নিচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ী, বিরোধী/সরকারি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সরকারি আমলা,কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাতারাতি শূণ্য থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাবার ফাঁদ পেতে রাখছেন তারা। আর এই ফাঁদে সাংবাদিক সমাজের একটি বিপদগামী অংশ না বুঝে, না শুনে পা দিচ্ছেন। কিছু সংবাদকর্মীই আছেন যারা নীচ থেকে উপর তলা পর্যন্ত সকলের আস্থাবাজন হয়ে তাদের পক্ষে মধ্য স্বপ্তভোগী হিসাবে কাজ করছে। এরা নিজেদের হীন স্বার্থে রাষ্ট্র তথা দেশের আমজনতার বৃহৎ ক্ষতি সাধন করতে কখনো একবারের জন্য বিবেচনায় নেন বলে মনে হয় না। তৃণমূল পর্যায়ে থানার দালালী, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তার ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে দেয়া থেকে শুরু করে অনৈতিক হেন সকল কাজে এই শ্রেণির সংবাদকর্মীগন সহযোগিতা করছে হরহামেশায় যার ব্যপ্তি নীচ থেকে উপর মহল পর্যন্ত বিস্তৃত। আর একাজে সংবাদকর্মীদের কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তাদের উপর নেমে আসে হামলা-মামলার ন্যায় ঘটনা। এমনকি কাউকে কাউকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে কেউবা পঙ্গু হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে আবার কারো কারো ভাগ্যে জুটেছে জেলের ঘানি ।
আমরা স্বাধীন হয়েছি ৫৩ বছর আগে। এই ৫৩ বছর শেষে এসে এখনও আমরা বলতে পারিনা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদপত্র আজ স্বাধীন। বলা বাহুল্য একুশ শতকের গোড়ার দিক থেকে দিনকে দিন সংবাদপত্রে যারা কাজ করে তাদের উপর বিভিন্ন সময় নেমে এসেছে রাষ্ট্রীয় কালাকানুন। এসময় সংবাদকর্মীদের উপর অহরহ হামলা-মামলার মত ঘটনা বাড়তে থাকে। কেউ কেউ দুর্বৃত্তদের হামলায় অকালে মৃত্যু বরণ করেছেন। এক্ষেত্রে কখনো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কাজ করেছে আর তাদেরকে গোপনে সহযোগিতা দিচ্ছে সংবাদকর্মীদের মধ্যে বিপদগামী কেউ কেউ। এ থেকে আমাদের বের হতে হবে রাতারাতি অর্থবিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে যাওয়ার জন্য সাংবাদিকগণ গা ভাসিয়ে দিলে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট হয়ে দাঁড়াবে। তাই আজ বড় বেশি প্রয়োজন সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সাংবাদিকগন যতদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক ছাতার নীচে না আসবে ততদিন সাংবাদিক সমাজ নিগৃহীত হতে থাকবে যা ব্যক্তি পরিবার কিংবা রাষ্ট্র কারো জন্যই কাম্য নয়।
সারা দেশের প্রিন্ট, ইলেক্ট্রোনিক্স এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত সকল মত ও পথের সাংবাদিকদের সামাজিক মর্যাদা ও পেশার সন্মান রক্ষায় “বিএমএসএফ” প্রতি বছর গণমাধ্যম সপ্তাহ উদযাপন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ‘বিএমএসএফ’ -এর কেন্দ্রীয় ট্রাষ্টি বোর্ডের ট্রাষ্টি ও সভাপতি আহমেদ আবু জাফর, “৩০ এপ্রিল, বুধবার ২০২৪ ইং ১ থেকে ৭ মে ৮ম জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহ উদযাপন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এবছর ১-৭ মে জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহ-২০২৪ উপলক্ষে সপ্তাহ ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী সফল করতে বিএমএসএফসহ দেশের সকল সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠন সমুুহের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি গণমাধ্যম সপ্তাহ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সপ্তাহটি অবশ্যই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করবেন। কেননা; দেশে বিভিন্ন পেশাজীবীদের অগনিত সপ্তাহ, দিবস যা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য একটি গণমাধ্যম সপ্তাহ যা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত।
“গণতন্ত্র-গণমাধ্যম রক্ষায় নিবেদিত হোক সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক সাংবাদিকতা” শ্লোগানে ৭দিন ব্যাপী
কর্মসূচীর মধ্যে সপ্তাহের প্রথমদিন পহেলা মে জেলা ও উপজেলায় স্বাগত র্যালী, ২ মে সাংবাদিকদের দাবি সম্বলিত ১৪ দফার প্রচারণা, ৩ মে বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আলোচনা ও সাংবাদিক প্রশিক্ষণ, ৪ মে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগীতা, ৫ মে বৃক্ষরোপণ, ৬ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং ৭ মে সাংবাদিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ে রাজধানীর মহানগর, সকল জেলা-উপজেলার সমন্বয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের দাবি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সপ্তাহ ব্যাপী নানা আয়োজনে সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত সমস্যা, সম্ভাবনা, দাবী ও অধিকারের কথা বলবেন( সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)।”
তাই আসুন সকল সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্লোগান তুলি “জেগে উঠো বাংলার বিবেক”।
লেখক পরিচিতি : মোঃ রুহুল আমিন
উপ-প্রচার সম্পাদক,
কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, বাংলাদেশ (বিএমএসএফ)
মোবাইল : 01853-778013
e-mail : aminruhul8660@gmail.com