সাভার উপজেলার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপ-নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বকুল ভূঁইয়ার ছেলে ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্র হিমেল ভুঁইয়াসহ(২১) কয়েকজনের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ৯ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটের দিকে সহপাঠীদের নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া বটতলা এলাকার রেইন ফরেস্ট পার্কের সুইমিং পুলে গোসল শেষে বাড়ি ফেরার পথে জামগড়া এলাকার আরফান মার্কেটে অবস্থিত আজাদের মালিকানাধীন ঝুট গোডাউনের সামনে এই হামলার ঘটনার ঘটে।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ ওরফে সুমন ভুঁইয়ার ছেলে কাব্য ভূইয়ার নেতৃত্বে ২৫/৩০ এ হামলার সঙ্গে জড়িত।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে আহত নাহিদ হাসান বাদী হয়ে তাঁর ভাই মেহেদী হাসান ভূঁইয়ার মাধ্যমে চেয়ারম্যানের ছেলে কাব্য ভূইয়া (২৩) সহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
হামলার ঘটনায় আহতরা হলেন, ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়া ভুঁইয়াপাড়া এলাকার মোতালেব ভুঁইয়ার ছেলে এবং গাজীরচট এএম স্কুল এন্ড কলেজের ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাহিদ হাসান (২২), একই এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে এবং গাজীপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নূর হাসনাত নাধভি (১৮) এবং পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বকুল ভূঁইয়ার ছেলে এবং রাজধানীর উত্তরা এলাকার মাইলস্টোন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হিমেল ভুঁইয়া (২১)। তাদের সবাইকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়াও মাসুম ভুঁইয়া(২৩), রনি ভুঁইয়া(১৯), রিজভী(১৬), রিয়াদ(১৫), আলামীন(২২) ও সাইফুলকে(২২) সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহত নাহিদ হাসানের ডান পায়ে ৬ টি এবং বাম পায়ে ৩ টি সেলাই, নূর হাসনাত নাধভির মাথায় ৫ টি সেলাই এবং হিমেল ভুঁইয়ার ঘাড়ে এবং বাম হাতে ২ টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাভার উপজেলার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে অন্যান্যদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ ভূইয়ার বিপরীতে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী বকুল ভূঁইয়া ঘোড়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এরপর থেকেই দুই পরিবারের মাঝে বিরোধ চলে আসছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ ওরফে সুমন ভূঁইয়ার ছেলে কাব্য ভূঁইয়ার (২৩) নেতৃত্বে মনোয়ার হোসেন ওরফে রাজকুমার রাজু(২৮), সোহাগ (২৬), মারুফ ভুঁইয়া (২৫), ইমন(২৮) ও ইভানসহ (১৮) আরো ২০ জন যুবক অতর্কিত হামলা চালায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে নাহিদ হাসান তার সহপাঠীদের নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া বটতলা এলাকার রেইন ফরেস্ট পার্কের সুইমিং পুলে গোসল শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে জামগড়া এলাকার আরফান মার্কেটে অবস্থিত আজাদের মালিকানাধীন ঝুট গোডাউনের সামনে অভিযুক্তরা ধারালো রামদা, রড ও হকিস্টিক নিয়ে ভুক্তভোগীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় নাহিদ হাসানসহ আহতরা হামলার শিকার হন। পরে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগেও দুই পরিবারের লোকজনের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে অভিযুক্ত কাব্য ভূইয়ার বাবা সুমন ভুইয়া ও আহত হিমেল ভুঁইয়ার বাবা বকুল ভূঁইয়া একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ফলে নির্বাচন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঘিরে দুই পরিবারের মধ্যে নতুন করে বিরোধ শুরু হয়েছিল।
হামলার বিষয়ে আহত নাহিদ হাসান বলেন, ‘হামলাকারীর সংখ্যা ৩০-এর বেশি ছিল। সবার হাতেই ধারালো রামদা, রড ও হকিস্টিক ছিল। হামলার পর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার আসামি মনোয়ার হোসেন ওরফে রাজ কুমার রাজু আমাদের ব্যবহৃত ১৫০ সিসির একটি পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।’
বকুল ভূঁইয়া দাবি করেন, পূর্ববিরোধের জেরেই তাঁর ছেলে ও সহপাঠী এবং অন্যান্য নিকট আত্মীয়দের ওপর হামলা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ ওরফে সুমন ভুঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অমিতাভ চৌধুরী অমিত জানান, ঘটনা শুনেছি। এখনো লিখিত অভিযোগ হাতে পাইনি। নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগের কপি হাতে আসলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।