চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ব্যাপকহারে বেড়েছে মশার উপদ্রব্য। কি রাত! কি দিন! সকাল-সন্ধ্যা, ঘরে বাইরে মশার জ্বালায় বিপন্ন জনজীবন বলছিলেন সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার (৩০)। বেশ কিছু দিন ধরে খেয়াল করছেন আশেপাশে বাড়ী-ঘরে মশার উপদ্রব্য বেড়েছে কয়েকগুণ। কোথাও বসলেই চারদিক থেকে ঘিরে ধরে মশা। মশার কয়েল জ্বালিয়েও নিস্তার মিলছেনা কিঁছুতেই। গত সপ্তাহে রাতে আচমকা বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ার পর থেকে এই উপদ্রব্য বেড়ে এখন পৌরবাসীর যন্ত্রণার পর্যায়ে পৌঁছাতে শুরু করেছে। শুধু ৪নং ওয়ার্ড নয়, প্রায় সব এলাকায় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে মশা। দিনের বেলাতেও বাড়ীঘরে মশার উৎপাত চলে। সন্ধ্যা থেকে মশার আক্রমণে ঘরে বাইরে টিকা দায়। খোলা জায়গায় আরো বেশী, বছরের এই সময়ে এমনিতেই মশার উপদ্রব্য বেড়ে যায়। তার উপর অল্প বৃষ্টিতে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বেড়েছে মশার বংশ বিস্তার। পৌরসভার খাল, নালা-নর্দমায়, দিঘীতে জমে থাকা আবর্জনা থেকে বেড়েছে মশা। পৌরসভার ময়লার ডাম্পিং ব্যবস্থানা থাকাই বিশাল স্তুপ থেকে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মশা। পরিচ্ছন্ন বিভাগ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়মিত নিবিড় নজরদারীর কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন বাসিন্দারা। কারণ পৌরসভার ডাষ্টবিন থেকে শুরু করে ড্রেন পরিস্কার এবং রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার ওপরই মশকমুক্ত ও জলাবদ্ধহীন দৃশ্যমান হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। মশক নিধনে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ এখনো নিতে দেখা যায়নি। নিয়ম অনুযায়ি পৌর এলাকায় সবসময় মশার ঔষুধ ছিঁটানো থেকে শুরু করে এলাকার খাল, নালা-নর্দমাগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে নাগরিকদের পরিবেশ নিশ্চিত রাখা। এই ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পর্যায়ে ভূমিকা প্রশ্নবৃদ্ধ। মশার এমন উপদ্রব্যে নিজ থেকে পৌরসভার কোন উদ্যােগ নিতে দেখা যায়নি বলে জানান বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। পৌর এলাকা জুড়ে ছোট-বড় অনেক পুকুর ও দিঘী থাকলেও এসব ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। মানব সৃষ্ট বর্জে এসব পুকুর অনেক জায়গায় ব্যবহার অনুপযোগী। এসবে জমে থাকা বর্জ থেকে হচ্ছে মশার বংশ বিস্তার। এসব পরিস্কারে উদ্যােগ নেই কারো। নামার বাজার, কাঁচা বাজার, উত্তর বাজার, কলেজ রোড, ভোলাগিরিসহ সমগ্র পৌর এলাকাতে খাল ও ড্রেনে জমে থাকা ময়লা আর্বজনায় মশার উৎপত্তিস্থল। তবে এবিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে মনে করছেন কেউ কেউ। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে নষ্ট করছে পরিবেশ। সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মশক নিধনে ঔষুধ ছিটানোর জন্য ফগার মেশিন আছে মাত্র ৩ টি তার মধ্যে ১টি নষ্ট। পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জাম সংকট রয়েছে বলে জানান, সীতাকুণ্ড পৌরমেয়র বীর মুক্তিযুদ্ধা আলহাজ্ব বদিউল আলম। তিনি বলেন, আমরা মশক নিধনে সবসময় কাজ করছি। মশার উৎপাত বৃদ্ধিতে আবার ঔষুধ ছিটানোর কাজ শুরু করবো। সীতাকুণ্ড পৌরসভার নিদিষ্ট ডাষ্টবিন থাকার পরও পুকুর-দিঘীতে আর্বজনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে ওখান থেকে জন্মনিচ্ছে মশা। এবিষয়ে বার বার সর্তক করার পরও ঠেকানো যাচ্ছেনা।
শুধু পৌরসদরে নয় উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতেও মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ জনসাধারণ। পবিত্র রমজান মাসে একেতো গরম, তার উপর লোডশেডিং, সাথে যোগ হয়েছে মশা বাড়বাড়ন্ত। এযেন মরার উপর খাড়ার ঘা। গত ১৩ মার্চ সীতাকুণ্ড উপজেলা ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটির সভাপতিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটির সভাপতি মেয়র সহ অধিকাংশ চেয়ারম্যানই ছিলেন অনুপুস্থিতি। এতে করে ডেঙ্গু সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ইউপি চেয়ারম্যানরা নিজেরাই উদাসীন। মতবিনিময় সভাপরবর্তী উপজেলার কোথাও মশক সচেতনতা ও নিধনে ঔষুধ ছিঁটানোর মতো কার্যক্রম দেখা যায়নি। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও খোভ প্রকাশ করছেন নাগরিকরা রাশেদুল ইসলাম নামের একজন তার ব্যক্তি ফেইসবুকে লিখেছেন ‘সীতাকুণ্ডে মশার জ্বালায় বিপন্ন জনজীবন। সীতাকুণ্ড পৌরসভার উচিত মশার ঔষুধ ছিঁটানো। জয় চক্রব্রতী লিখেছেন ‘মশা তো পারতেছে না আমাকে তুলে নিয়ে যেতে’। ফজল করিম নামের একজন ‘মশক নিধনে সামাজিক সংগঠনগুলো কে এগিয়ে আসার আহবান জানান। প্রচন্ড জ্বর, সর্বাঙ্গে বিশেষত হাঁড়ে ও গাঁঢ়ে গাঁঢ়ে ব্যাথা, রক্তের অনুচক্রিকা দ্রুত কমে যাওয়া, কালসিটেপড়া, লিভার আক্রান্ত হওয়া, এতে রোগী দূর্বল বোধ করে, খেতে পারে না, বমি হয়, লিভার ব্যাথা করে সাধারণত ডেঙ্গুতে এসব উপসর্গ দেখা যায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সাধারণত চিকিৎসকরা প্যারাসিটেমল জাতীয় ওষুধ দিয়ে যন্ত্রণা এবং জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন। বিশেষ কোন চিকিৎসার না থাকায় অনেকে ঘরে থেকে এই রোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এব্যাপারে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, মশার বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ নাগরিকদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রত্যাকটা মানুষকে দায়িত্ববান হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। গত ১৬ মার্চ আমরা মতবিনিময় সভায় একটি রেজুলেশন পাশ করেছি, যেখানে সকল ইউনিয়নের নালা,খাল-ডোবা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা সহ জনসচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষে মশার উপদ্রব্য নিধন করতে ঔষুধ ছিঁটানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডঃ নূর উদ্দিন রাশেদ বলেন, সাম্প্রতিক মশার উপদ্রব্য অনেক বেড়েছে। এখনি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরবর্তী ভয়াবহ রুপ ধারণ করতে পারে। এর থেকে তৈরী হতে পারে ডেঙ্গু মশার লার্ভা। এখনি সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত। বাসা-বাড়ীর চারপাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রেখে, যতটা সম্ভব গাঁ ডেকে রাখতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারী টানাতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসা ও আমাদের মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা ডেঙ্গু সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। ডেঙ্গু প্রকোভে হাসপাতাল থেকে মৃত্যু ছাড়া প্রায় দুইশত তিন জন রোগীকে সুচিকিৎসা দিয়ে বাড়ী পাঠানো হয়েছে। বহিঃ বিভাগেও নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে উপজেলার জনস্বাস্থ্য দপ্তরের ভূমিকা রাখাও জরুরী, সেই ক্ষেত্রে কতটুকু স্বাস্থ্য বিষয়ক সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। এই ব্যাপারে উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শংকর প্রসাদ বিশ্বাসের সাথে একাধিকাবার মোঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।