রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় এক পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সালিশে ওই জমি ছেড়ে দেয়ার কথা বলায় ভুক্তভোগীর আত্মীয় প্রতিবেশী সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করা হয়। এতে কৌশলে গণমাধ্যম কর্মীদের অসত্য তথ্য দিয়ে তাদের ব্যবহার করেছে দখলকারীরা।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহান বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি আশুলিয়ার দুর্গাপুর মণ্ডলবাড়ি এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে।
তবে এর আগেই মিথ্যাচারের অংশ হিসেবে মূল ঘটনা এড়িয়ে আশুলিয়া থানায় তিন ব্যাক্তি বাদী হয়ে পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্রত্যেকটি অভিযোগে সাবেক ওই ছাত্রলীগ নেতাসহ তার অনুসারীদের টার্গেট করা হয়েছে। অভিযোগ দায়েরের পর গণমাধ্যম কর্মীদের অসত্য তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দখলকারীদের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডি ব্যাবহার করে ফলাও ভাবে তা একপাক্ষিক অপপ্রচার করা হয়েছে।
স্থানীয় সালিশে ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহানের মালিকানাধীন দখলকৃত জমি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলায় দখল কারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন আশুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা সোহাগ মন্ডল। তিনি আশুলিয়ার দুর্গাপুর মণ্ডলবাড়ি এলাকার আলমাস মন্ডলের ছেলে।
দখল ও মিথ্যাচারের পিছনে মূল ভূমিকায় ছিলেন আশুলিয়ার দুর্গাপুর এলাকার আলতাফ হোসেন মন্ডলের ছেলে চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও জমি ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন মন্ডল(৩৬) ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিয়ামউদ্দিনের ছেলে সোহেল মন্ডল(২৮)। এ ঘটনায় দুই নারীকে কথিত ভুক্তভোগী বানিয়ে অভিযোগ পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা হলেন, লাইজু আক্তার ও খাদিজা রহমান। তাদের জমি কিনতে সহায়তা করায় জমি ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন মন্ডলের সঙ্গে সখ্যতার খাতিরে এই মিথ্যাচার কাণ্ডে তারা স্ব-প্রণোদিত সাক্ষ্য হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহান অভিযোগে উল্লেখ করেন, তিনি আশুলিয়ার বড় রাঙ্গামাটিয়া মৌজার ৩১১ নং খতিয়ানের বিআরএস ৪৩৪৩ নং দাগের ২১.৮ শতাংশ এবং ৪৩৪৪ নং দাগের ৫.২৫ শতাংশ সর্বমোট ২৬.৩৩ শতাংশ জমি পৈত্রিক সূত্রে মালিক হয়ে ভোগ দখলে আছেন।
তার বাবার মৃত্যুর আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা কাজে ব্যস্ত থাকায় এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও জমি ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন মন্ডল, আতিকুর রহমান ও খাদিজা রহমান ওই জমি থেকে ৩ শতাংশ জমি দখল করে তাদের ক্রয়কৃত জমির সঙ্গে একত্র করে ২০ ইঞ্চি বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করেন।
এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের কাছে বিচার দেয়া হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রতিবেশী আত্মীয় সোহাগ মন্ডল ও স্থানীয়রা একজন দক্ষ আমিনের মাধ্যমে ১ মার্চ সকালে সালিশ বৈঠকে দলিলপত্র যাচাই করে রুবেল হোসেন মন্ডল গংকে দখলকৃত জমি ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু সালিশের রায় না মেনে ভুক্তভোগীর পক্ষে কথা বলায় আশুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা সোহাগ মন্ডলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে উল্টো ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহানকে
হুমকি দিয়ে আসছে অভিযুক্তরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহানের চাচাতো ভাই মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে মুন্নাফ মন্ডল ওরফে মুন্না আব্দুস সোবহানের জমি নিজের দেখিয়ে এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও জমি ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন মন্ডলের কাছে বড় রাঙ্গামাটিয়া মৌজার ৩১১ নং খতিয়ানের বিআরএস ৪৩৪৪ নং দাগে ১৯ শতাংশের মধ্যে ১৬ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। তবে ওই দাগের সঙ্গে একত্র করে ৪৩৪৩ নং দাগে চাচাতো ভাই আব্দুস সোবহানের অংশ থেকে ৩ শতাংশ দখল বুঝিয়ে দেন।
জানতে চাইলে আশুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ মন্ডল দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় সালিশ হয়েছে। দলিলপত্র যাচাই করে আব্দুস সোবহানের কাগজপত্র সঠিক পাওয়া যায়। তাই দখলকারীদের জমি ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু আমিসহ স্থানীয়দের অনুরোধ মানা হচ্ছে না। এ কারণে ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহান প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
সোহাগ মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর পক্ষে কথা বলায় দখলকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছি। যারা আমাকে চিনেন না তাদেরকে দিয়েও আমিসহ আমার পরিচিতদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিউজ করিয়েছে। সাংবাদিকরা সমাজের আয়না আর তাদের দিয়েই মানুষ সত্য জানতে পারে। আমি প্রকৃত তথ্য যাচাই করে সাংবাদিকদের প্রতি সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ জানাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রুবেল হোসেন মন্ডল বলেন, ‘ ওই জমি আমাদের। আমাদের কাছে জমির কাগজপত্র রয়েছে। সোহাগ মন্ডল জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছে।
ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহান বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ মণ্ডলের ব্যাপারে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আমার এবং আমার চাচাতো ভাইয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবেশী এবং নিকটআত্মীয় হিসেবে তিনি ন্যায্য কথা বলায় ভূমিদস্যুদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। আমি কতৃপক্ষের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ঘটনা তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।