ঢাকার সাভারে সাবেক পৌর কাউন্সিলর আয়নাল হক গেদুর বিরুদ্ধে অসহায় এক পরিবারের বাড়ি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তবে জাতীয় জরুরী পরিষেবা ৯৯৯-এ ভুক্তভোগীর ফোন পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ দখল ঠেকিয়ে দেয়।
বাড়ি রক্ষা এবং নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য পরিবারটি সাধারণ ডায়েরির মাধ্যমে (জিডি নং-২৫৮) সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকবর আলী খান, পিপিএম এর কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ডিউটি অফিসার এসআই মো: মাজহারুল ইসলাম।
এরআগে রবিবার সাভার পৌরসভার আনন্দপুর এলাকার বাসিন্দা ইভান ইবনে আসাদ এ আবেদন করেন। সাভার মডেল থানা পুলিশ আবেদনটি গ্রহণ করেছে।
অভিযুক্তরা হলেন, সাভার পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আনন্দপুর এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে আয়নাল হক গেদু ওরফে গেদু কবিরাজ(৬১), আয়নাল হকের ছেলে রাজীব হোসেন(৩৬), ইমন(২১) ও আঁখি ওরফে লেডি আঁখি। এছাড়াও আয়নাল হক গেদু ওরফে গেদু কবিরাজের অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাধারণ ডায়েরির আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আমার পৈত্রিক ৫ শতাংশ সম্পত্তিতে আমি, আমার স্ত্রী এবং আমার সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছি। এই সম্পত্তি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে দেওয়ানী মামলা নং – ২৪২/২৩ চলমান রয়েছে। কিন্তু আয়নাল হক গেদু ওরফে গেদু কবিরাজ তার সহযোগীদের নিয়ে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করে আসছে। আমি ও আমার পরিবার বাধা প্রদান করলে আয়নাল হক ও তার ছেলে রাজীব হোসেন আমাকে এবং আমার পরিবারকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হত্যার হুমকি দেয়। রবিবার (৩ মার্চ) দুপুর ২ টার দিকেও আমার বাসার রুমের তালা ভেঙ্গে ক্ষতি সাধন করে, আমি বাধা দিলে আমাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ আগস্ট এই বাড়ীটি দখল করার জন্য সাইনবোর্ড লাগানোর চেষ্টা করে আয়নাল হক গেদু ওরফে গেদু কবিরাজ। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় ইভান ইবনে আসাদ বাদী হয়ে (জিডি নং-৫০৩) ও অভিযোগ দায়ের করেন। একই দিনে ভুক্তভোগী ইভান ইবনে আসাদ ও তার স্ত্রী ফাতেমা জেসমিনকে মারধরের ঘটনায় আয়নাল হক গেদু ওরফে গেদু কবিরাজ, তার ছেলে রাজীব হোসেনসহ সহযোগী আরো ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। সেই মামলায় প্রভাব খাটিয়ে সাবেক কাউন্সিলর আয়নাল হক গেদু ওরফে গেদু কবিরাজ পার পেয়ে পুনরায় ক্যারাম খেলার বোর্ড ঢুকিয়ে বাড়ি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বিজ্ঞ আদালতে দায়ের হওয়া দেওয়ানী মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী ইভান ইবনে আসাদের বাবা আসাদুর রহমান এরশাদ বলেন, আমি সাভার আনন্দপুর এলাকার মোসাম্মৎ খোদেজা বেগমকে প্রায় ৩২ বছর আগে বিয়ে করি। আমাদের দাম্পত্য জীবনে দুইটি সন্তান হয়। ছেলে সন্তান হওয়ায় খুশি হয়ে আমার মা আমার নামে ঢাকা কালেক্টরির ১৭৪৪ নং তৌজিভুক্ত আনন্দপুর মৌজার ১১৫ নং খতিয়ানের এসএ – ১৮২ নং দাগ, আরএস-১৭২ নং দাগের ৫ শতাংশ সম্পত্তি সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১২৯৫২ নং দলিলের মাধ্যমে ১০ অক্টোবর ১৯৯৬ সালে লিখে দেন। দীর্ঘদিন আমি প্রবাসে থাকায় আমার স্ত্রী পরকীয়ার লিপ্ত হয়। এই শোকে আমি প্রবাসেই থেকে যাই। আমার সন্তান ইভান ইবনে আসাদ আমার মায়ের দেওয়া ওই সম্পত্তিতে বসবাস করে আসছে। আমি দেশে এসে জানতে পারি আমার সাবেক স্ত্রী খোদেজা বেগম একটি জাল দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তিটি নিজের দাবি করে তার আপন চাচাত ভাই আয়নাল হক গেদুর মাধ্যমে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজ্ঞ আদালতে এই সম্পত্তি নিয়ে দেওয়ানী মামলা চলমান রয়েছে। এই বাড়ি দখল হলে আমার ছেলে ইভান ইবনে আসাদ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পথে বসবে।
তবে অভিযুক্ত আয়নাল হক গেদু ওরফে গেদু কবিরাজ বাড়িটি নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তি বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, ঘটনা তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।