বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তত্ত্বাবধানে অংশ নিয়েছিল ৪১টি প্রতিষ্ঠান। মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এবারও ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।
তারা প্রায় ১০৬ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ পেয়েছে। ক্রয়াদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে প্রাণ এগ্রো লিমিটেড ও এলিন ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড।
শুক্রবার মেলার শেষ দিনে এ তথ্য জানিয়েছে ইপিবি। তাদের দাবি, বিগত বছরের তুলনায় এবার ক্রয়াদেশ বেড়েছে।
দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের জা’আবিল হল ফ্লোরে ৩৩৬ স্কয়ার মিটার জায়গা ভাড়া নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ড তৈরির লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের গুণগত মানের পাশাপাশি এবার প্যাকেজিংকেও গুরুত্ব দিয়েছে।
শেষদিন মধ্য দুপুর পর্যন্ত বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত সময় পার করেন তারা।
তাছাড়া ছাড়া মেলায় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলোও নতুন নতুন পণ্য সম্পর্কে জানতে হাজির হয়েছে। বিশ্বের কোন অঞ্চলে, কোন ধরনের পণ্যের সম্ভাবনা ও চাহিদা বেশি রয়েছে সে সম্পর্কেও জানতে পারছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো
মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই পরিধি বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে খাদ্যপণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশেষ করে বহির্বিশ্বের বড় প্রদর্শনীগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা, গুণগত মান যাচাই ও রপ্তানি চাহিদা তৈরিতে সক্ষমতা বাড়াচ্ছে তারা। তাদের মতে, দুবাইয়ের এই মেলায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা যাচাইয়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে।
সিটি গ্রুপের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর লুৎফুল কবির বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার তারা দ্বিগুণের বেশি ক্রয়াদেশ পেয়েছেন। গত বছর ২২ থেকে ২৫টি দেশে পণ্য রপ্তানি হলেও এবার তাদের নতুন আরও ৮টি দেশ যুক্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আগের তুলনায় পণ্য বেশি রপ্তানি হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসর’স অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতাদের দাবি, ৬১টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণের আবেদন করলেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২০টি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক খুরশীদ আহমাদ ফরহাদ বলেন, মেলায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিয়েছে। কিন্তু স্টলগুলোতে জায়গা স্বল্পতা থাকায় যথাযথভাবে কাস্টমারদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ হয়নি। এতে প্রত্যাশিত সাড়া পাননি অনেকে।
একই অভিযোগ বাপার সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ শোয়াইব হাসানের। তিনি বলেন, ৬০০ বর্গমিটারের জায়গা বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। আগামীতে পরিসর বৃদ্ধির পাশাপাশি মেলাকেন্দ্রিক আরও প্রচার-প্রচারণার জন্য ইপিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান তিনি।
দুবাইয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল অশেষ কুমার সরকার বলেন, মেলার মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য বিশ্ববাজারে বিস্তৃত করা আরও সহজ হবে।
এছাড়াও খুচরা পণ্যের বেচা-কেনা না থাকলেও মেলায় নিজেদের পণ্যের ক্রেতা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোক্তাদের চাহিদামতো খাদ্যপণ্য রপ্তানি করা গেলে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রেহেন উদ্দিন।
মেলায় অংশগ্রহণকারী আসফী মালদ্বীপ প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও মো. হাদিউল ইসলাম বলেন, ৫ দিনব্যাপী এই মেলায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য ক্রেতার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।