ভূমি অফিস মানে ভোগান্তি, দীর্ঘদিনের এই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রাসেল নূর। ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে ভোগান্তি ছাড়াই সাভারবাসী এখন সব ধরনের ভূমি বিষয়ক সেবা পাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক বা অফিসের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কাজে থাকলেও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্বশীল ব্যক্তির উপরে নামজারি শুনানির নির্দেশ দেন। যাতে জনগণ দূর-দূরান্ততে এসে নামজারি শুনানি করে তার নামজারিটি সঠিকভাবে নিতে পারেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের বাগানের বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে দিচ্ছেন নাগরিক সেবা ও গণশুনানি। এতে উপস্থিত থাকেন সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ। ভূমি অফিসের প্রবেশদ্বারের বারান্দায় রয়েছে দালালমুক্ত অফিসের ঘোষণা। টানানো হয়েছে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা গ্রহণের গাইডলাইন ও সিটিজেন চার্টারসহ নামজারি, জমি খারিজ ও জমা একত্রীকরণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী ও সরকারি খরচের বিবরণ। সদর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে বাগধনিয়ায় অবস্থিত সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সবকিছুতে এসেছে বড় পরিবর্তন। এসিল্যান্ড অফিসের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ তফসিল অফিস থাকার জন্য সাথে সাথে সেবা নিতে পাচ্ছেন এই এলাকার বাসিন্দারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাভার ভূমি অফিসে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হননি এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম। জমির নামজারি, ভূমিকর পরিশোধ, খাসজমি বরাদ্দ ও জমি ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে খোঁজখবর জানতে এবং রেকর্ড জানাসহ ভূমি সংক্রান্ত সেবা নিতে এসে মানুষ কখনো দালালের খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত টাকা গচ্চা দিয়েছে। কখনো বা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা ঘুষ, হয়রানির শিকার হয়ে মাস, বছর পার করে কাজটি সারিয়ে নিয়েছেন। ভূমি অফিস নিয়ে এমন নেতিবাচক ধারণা সেবাগ্রহিতাদের মন থেকে দূর করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম রাসেল নূর।
সেবা গ্রহিতাদের জন্য ভোগান্তি ছাড়া কাঙ্ক্ষিত সুবিধা নিশ্চিত করতে কর্মরত সকলকে দিয়েছেন কঠোর নির্দেশনা। পাশে উপজেলা প্রশাসন হওয়ার কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সুযোগ্য কর্মকর্তাদের বিচরণ সাভার উপজেলা পরিষদে। ভিআইপিদের আসা যাওয়া থাকে সারাবছরই।
সাভার উপজেলা ভূমি অফিস ঘিরে ইউনিয়ন তহশিল অফিসগুলোও সাধারণের জন্য খুলে দিয়েছে ভূমি সংক্রান্ত সেবার দরজা। শহর আর গ্রামের মানুষ এখন নিজ ভূমির কাজের কথা অফিসে এসে বলতে পারছেন সরাসরি সহকারী ভূমি কমিশনারকে।
সাভার পৌরসভার গেন্ডার এলাকার মো. নজরুল (৫০) বলেন, আমি এর আগে আমার জমির খারিজ করার জন্য এসেছিলাম। সেই সময় আমার কাগজ হাতে পেতে তিন মাসের বেশি সময় লেগেছিল। তবে আজ সকালে আমি একটি নতুন খারিজের তথ্যের জন্য এসেছি। আমাকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন দায়িত্বে নাজির হুজুর। এতে আমি খুব খুশি আমি চাই সকল মানুষ যেন এইভাবে সেবা পায়।
সেবা নিতে আসা রহিম বলেন, সাভার ভূমি অফিসের আওতাধীন বাগধনিয়া, ফুলবাড়িয়া ও নয়ারহাট ভূমি অফিস বিভিন্ন জমির জটিলতা নিরসনে আমাদের মাঝে মধ্যে সাভার এসিল্যান্ড অফিসে আসতে হতো। আগে সেই কাজ করতে মাস লেগে যেত। কিন্তু এখন ডিজিটাল হওয়া ও ভূমি অফিসারের সহযোগিতায় আমরা দিনের কাজ দিনে করতে পারছি। এটা আমাদের জন্য খুবই উপকার হয়েছে। আমরা যাতে নামজারি ঘরে বসে পেতে পারি সেটি হলে আরো খুশি হব।
এসিল্যান্ড রাসেল নূর তার নিজের প্রচেষ্টায় জনগণের সেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমে অফিসে আসা সেবা প্রত্যাশীদের বসার জন্য ফ্রন্ট ডেস্ক ও ভূমিসেবা কেন্দ্র ‘সিটিজেন চার্টার’ সিসি ক্যামেরা বসিয়ে করা হচ্ছে নজরদারি।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রাসেল নূর বলেন, আমি সাভারে যোগদান করে সকল শাখার অপেক্ষমাণ বিভিন্ন জমা ফাইলগুলো তদন্ত করে সমাপ্ত করে দিয়েছি। এতে প্রয়োজনীয় নথি বা ফাইল এখন বাছাই করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে এবং দিনের কাজ দিনে শেষ করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত নোটিশ আমার দরজায় লাগানো আছে।
তিনি আরও বলেন, আমার দফতরের সব কার্যক্রম অনলাইনে হওয়ায় নগদ টাকার ব্যবহারের সুযোগ নেই।
অফিস চলাকালীন অফিসের কর্মচারীদের গলায় নিজের পরিচয়পত্র ঝুলানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে কর্মচারী ও দালাল সেবা গ্রহীতারা সহজে নির্ধারণ করতে পারছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, আমি এখানে যোগ দেয়ার পর থেকে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে সাভারবাসীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ভূমি অফিসের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করি। পুরো অফিস এখন দালালমুক্ত।
উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর ঢাকা জেলার সাভার উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ই-নামজারি কার্যক্রম পর্যালোচনা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশ ছিল মাঠ পর্যায়ে ভূমি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখতে হবে। জনগণের মাঝে ভূমি সেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
এদেরই লক্ষ্যে তখনকার সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনারুল ইসলাম। সেই সময়ে উক্ত মত বিনিময় সভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সচিব পর্যায়ে সকালেই উপস্থিত ছিলেন।
সাভার এসিল্যান্ড অফিসে প্রতিমাসে প্রায় ১৫০০-১৬০০ নামজারি দ্রুতভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে। নামজারি মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে শতকরা ২০ থেকে ৩০%। এছাড়া ভূমি সংক্রান্ত রিপোর্ট যেটি মিস কেস, বিবিধ কেস প্রায় মাসে ৫০ থেকে ৬০ % মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। এখানে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হচ্ছে শতভাগ। যেমন ব্যক্তিগত কর আদায় টার্গেট বছরে ৭০% পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভূমি উন্নয়ন কর আদায় গড়ে ৫৫%। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দলিল অব মূল্যায়ন। অনেকে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দলিল করেছেন নামজারি করতে এসে আটকে যাচ্ছেন। এখানে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০টি (প্রায়) দলিল অবমূল্যয়ন মামলা জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি খাস জমি উদ্ধার, খাল উদ্ধার বিভিন্ন