কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার ইছাপুর গ্রামের মাওলা মিয়া (৬০) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তা দখল করে বসতঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ইছাপুর গ্রামের মৃত আহাদ আলীর পুত্র মো. মানিক মিয়া (৬৫) সহ ইছাপুর গ্রামবাসী অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর পৃথক ভাবে দুইটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এ প্রতিনিধিকে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন দুই অফিসের একাধিক স্টাফ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইছাপুর গ্রামের মৃত মনসুর মিয়ার ছেলে মাওলা মিয়া (৬০) প্রায় ১০-১২ বছর যাবৎ একই গ্রামের সুলাইমান মিয়ার ছেলে আব্দুস সালাম (৩৮) ও মৃত তোতা মিয়ার ছেলে আলী নেওয়াজ ওরুফে ফুরু (৫০) এর সহযোগিতায় ভাটুরা মৌজার ৭ ও ৮ নং দাগের পার্শ্ববর্তী ইছাপুর মসজিদ হাটি থেকে দক্ষিণ দিকে ইছাপুর মূলরাস্তা পর্যন্ত কাঁচা রাস্তার ৪ ভাগের ৩ ভাগ রাস্তা অবৈধ ভাবে দখল করে সেমি পাকা টিনসেট বসতঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। সরকারী রাস্তা থেকে ঘর অপসারণ করে তার নিজ জায়গায় নেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ এলাকাবাসী একাধিকবার বলার পরও মাওলা মিয়া কোন কর্ণপাতই করছেনা বরং গ্রামবাসীকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে সে। এ রাস্তা দিয়ে ইছাপুর গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ গ্রামের সহস্রধিক মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে থাকে। প্রায় ৪০ ফুট প্রস্থের রাস্তাটির প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত রাস্তার জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে বসত ঘর নির্মাণ করার ফলে রাস্তাটি সরু হয়ে গেছে। এর ফলে এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অছিরেই এ রাস্তার উপর অবৈধ ভাবে নির্মাণ করা বসত ঘর উচ্ছেদ করে জনসাধারণের চলাচলের সুবিধা করে দেওয়ার জোর দাবী জানান এলাকাবাসী।
এব্যাপারে গত ১৪ জানুয়ারি রোববার দুপুরে সরেজমিনে ওই রাস্তায় গিয়ে অভিযুক্ত মাওলা মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি সরকারি রেকর্ডভূক্ত রাস্তা দখল করে ঘর নির্মাণ করার কথা স্বীকার করে বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব ও মাতব্বরগন এ জায়গা আমাকে দিয়ে গেছেন এবং বলে গেছেন এটা মরা রাস্তা আপনি কইরা খান।
এব্যাপারে অভিযুক্ত আলী নেওয়াজ ওরুফে ফুরু মিয়া (৫০) এর সাথে যোগাযোগ করা হলে সরকারি রেকর্ডভূক্ত রাস্তা দখল করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমিও এলাকার একজন নেতা-ই। এটা হিন্দুদের জায়গা ছিলো। এ রাস্তা পূর্বকালের রেকর্ডের হালট। রাস্তাটি এখন অকেজো হয়ে গেছে। এলাকার চেয়ারম্যান আছে। এলাকার সর্দার পর্দান আছে তাদের কাছে বলুক। তারা কি করে দেখুক। চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের এই জায়গা দিয়ে গেছেন। আপনারা দেখে গেছেন না? এখান দিয়ে রাস্তা আছে কি না? যতটুকু রাস্তা আছে, এই রাস্তা দিয়ে আমরাওতো চলা ফেরা করতেছি। আমাদেরতো কোন সমস্যা হচ্ছে না। ইউএনও স্যার আসুক, এসিল্যান্ড সাহেব আসুক, নায়েব সাহেব আসুক ওদের সাথে আমরা জবাবদিহি করবো। যারা অভিযোগ করেছে তাদেরকে বলে দিয়েন তাদেকে রাস্তা দেওয়া হবেনা। তারা যে ভাবে পারুক মামলা মোকাদ্দমা করে রাস্তা নিয়ে আসুক। তাদেরকে আর রাস্তা দেওয়া হবেনা।
এব্যাপারে স্থানীয় আদমপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাগজপত্র দেখেছি এটা সরকারি রেকর্ডভূক্ত রাস্তা। এ রাস্তা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করার ফলে এ রাস্তা দিয়ে এলাকার মানুষ চলাচল করতে ও নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে যেতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। মাওলা মিয়াকে এই জায়গার দখল ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হলে তিনি বলেন, সরকারি ভাবে এখান দিয়ে রাস্তা হলে তিনি রাস্তার দখল ছেড়ে দেবেন।
এব্যাপারে স্থানীয় আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মন্নাফের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উবায়দুর রহমান সাহেল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইছাপুর গ্রামবাসীর লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. দিলশাদ জাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্যাপশান: ছবিতে অভিযুক্ত মাওলা মিয়া সরকারি রাস্তার জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণের কথা অকপটে স্বীকার করছে।