মুরগী ও ছাগল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে খামারীদের জন্য ঘর বরাদ্দ দেয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। ২০২৩ সালে প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের অধিনে এই বরাদ্দ পায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার ৪ টি প্রডিউসার গ্রুপের(পিজি) ১৬০ জন সদস্য। তবে বরাদ্দকৃত অর্থ নয়-ছয় করে লুটপাট করেছে কথিত ঠিকাদার সিন্ডিকেট।
যার মুল কারিগর মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: জাকির। গেল বছর মতলব উত্তর উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি । সে সময় তার পছন্দের ৩ জন কথিত ঠিকাদার মতলব উত্তরে এবং ১ জন মতলব দক্ষিণে ঘর নির্মাণের কাজ হাতে নেন। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয় নিম্ন মানের সামগ্রী, ব্যবহার অনুপযোগী কাঠ, নিম্ন মানের টিন এবং প্লাষ্টিকের তৈরি জালি ।
এসব মানহীন পণ্য ব্যবহার করে তৈরি করা হয় খামারীদের বরাদ্দকৃত ঘর। ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও মাত্র ৪ মাসে এসব ঘরের টিনের চালে মরিচা ধরে নষ্ট হতে শুরু করেছে।অব্যবহৃত ও ব্যবহার অনুপযোগী কাঠ ব্যবহার করায় অল্প সময়ের ব্যবধানে ফাটল ধরে কাঠামো নষ্ট হচ্ছে।
তবে এসব বিষয়ে ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ পিজি সদস্যরা। সরেজমিনে দেখা যায়, মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ি ইউনিয়নে বরাদ্দ পাওয়া ৪০ টি ঘরের অবস্থাই বেহাল। এ ঘর গুলো নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলার ছেঙ্গারচর বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ি কথিত ঠিকাদার আমির হোসেনকে। তবে মানহীন এসব ঘর হস্তান্তর করার আগেও টাকা হাতে পেয়েছেন এবং পরেও পুরো টাকা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়াও উপজেলার ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের পিজি সদস্যদের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার পর কিছু সদস্য তাদের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ফেলে।
এই পিজি সদস্যদের ঘর নির্মাণ করে দেন আরেক ঠিকাদার ওয়াসকুরুনি। যে সব সদস্যরা টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছিলেন তারা ঠিকাদারকে টাকা ফেরত দেয়ার পর ঘর বুঝে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অপরদিকে একই উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নে ছাগলের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ঘরের কাজ শুরুই করেননি ডাঃ জাকিরের মদদপুষ্ট ঠিকাদার শাহজালাল।সূত্র জানায় কাজ শুরু করার আগেই টাকা হাতে নিয়ে এখন পর্যন্ত ঘর নির্মাণ শুরু করেননি তিনি।
এমনি ভাবে প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের এসব টাকা উপজেলা কর্মকর্তার হাতের ছোঁয়ায় নয়-ছয় হচ্ছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা । যার মধ্যে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
মতলব দক্ষিণ উপজেলায় পিজি সদস্যদের ঘর নির্মাণ বাবদ অগ্রিম টাকা নিয়েছিলেন ডা: জাকিরের মদদপুষ্ট কাসেম আলী দেওয়ান। তবে সেই গ্রুপটির ঘরের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সদস্য মহলে ।
তবে এসব বিষয়ে চুপ থাকতে ডা: জাকিরের কঠোর হুমকি আছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নটির লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) কবির। এছাড়াও মতলব উত্তরের বাগানাবাড়ি ইউনিয়ন এলএসপি ববিতা রাণী , ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন এলএসপি খালেদা এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তবে নিম্ন মানের ঘর নিয়ে তারা পড়েছেন বিপাকে।
যদিও ঘর নির্মাণের পর তা পরিদর্শন ও নিরিক্ষা করার পর অর্থ ছাড়ের কথা ছিলো । তবে পরিদর্শন করে কি দেখেছেন তা প্রকাশ করতে নারাজ মনিটরিং কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। তবে তিনি জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালককে তিনি নিরিক্ষা প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এদিকে কোন প্রতিবেদন পাননি বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির পরিচালক আব্দুর রহিম।
ঘর নির্মাণ ও টাকা নয়-ছয়ের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জ্যোতির্ময় ভৌমিক।