এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রংপুর মহানগরীসহ বিভাগের আট জেলায় সূর্যের দেখা মিলেনি। তবে গতকাল বুধবার বিকেলে সূর্য উকি দিলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এতে প্রচন্ড শীত ও ঠান্ডা বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে।এদিকে প্রচন্ড শীত ও ঠান্ডা বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে রংপুরের জনজীবন। হাট-বাজার ও শপিং সেন্টারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে যানবাহনগুলোতে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দি সহ শীতজনিত রোগের র্প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। গবাদি পশু-পাখি নিয়ে দুশ্চিতায় পড়েছেন মানুষজন।মানুষজন জানিয়ে, এবারের শীতের মাত্রাটা অনেক বেশি। শীতের মৌসুমের শুরুতে শীত না হলেও শেষের দিকে মানুষকে ভোগান্তি করছে। এতে শীত নিবারণের জন্য অনেকেই আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভীড় বাড়ছে। চরাঞ্চল ও ছিন্নমুল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্রের সংকট দেখা দিয়েছে।নগরীর পার্কের মোড় এলাকার দিনমজুর নিতিশ চন্দ্র বর্মণ ও হায়দার আলী বলেন,হামার কি বসি খাওয়ার দিন আছে। শীতত হাত পাও সিক নাগে তবু কামত যাওয়া নাগে। কাম না করলে খামু কী। অইদ হউক আর শীত হউক হামাক কাম করিয়ে খাওয়ায় নাগবে।তামপাট এলাকার ইছার আলী ও আশরাফুল আলম বলেন, আমরা সারা বছর দিনমজুরি করি সংসার চালাই। ভোরে বাড়ি থেকে বের হই এরপর রংপুরের যেখানে কাজ পাই সেখানে চলে যাই। কাজ শেষে বিকেলে বাড়ি ফিরি। যেদিন যা উপার্জন হয় তা দিয়েই সংসার চলে। আর যেদিন কাজ পাওয়া যায় না সেদিন খালি হাতে ফিরতে হয়। সেদিন বাড়িতে কাজ করি।তারাগঞ্জের হাজীপাড়া এলাকার আব্দুস সালাম বলেন, ঠান্ডাত তো কিছু করার ইচ্ছা করে না। পেটের দায়ে করা লাগে। কাজ-কামও আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। যখন যা পাচ্ছি তাই করছি।রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে রংপুরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কম হওয়ায় প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে এ অঞ্চলে।এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রায় ৪২ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের বেশির ভাগই শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। আবার কেউ কেউ শীত নিবারণে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়েও দগ্ধ হয়েছেন। এছাড়া রমেক হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের প্রকোপে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির চাপ। গত কয়েক দিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে ১৮জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।