জেলা শহরের নিউটাউন বিলপাড় এলাকায় নিজ বাসার শয়নকক্ষ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বৃদ্ধা জোছনা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বৃদ্ধার নাতি সাম্মাম হোসেন সিনহাসহ ৩ কিশোরকে মঙ্গলবার ভোরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি জোছনা বেগম হত্যার পুরো রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছে। পুলিশ বলছে–বাসার আলমিরাতে থাকা ১০ লক্ষ টাকা নিতে নাতিসহ ৩ কিশোরই এই হত্যা সংঘটিত করার বিস্তারিত স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে –জোছনা বেগমের বড় ছেলে ফারুক হোসেন মিল্টনের ছেলে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাম্মাম হোসেন সিনহা, তার বন্ধু নেত্রকোণা পৌরসভার পূর্ব চকপাড়ার আব্দুল হকের ছেলে সাব্বির হাসান চয়ন ও সদর উপজেলার উলুয়াটি গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে রিয়াদ হাসান অনিক। তাদের বয়স প্রায় ১৫ বছর।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণা জেলা শহরের নিউটাউন বিলপাড়ের বৃদ্ধা জোছনা বেগমের ৩ ছেলের মধ্যে ১ ছেলে বগুড়া, ১ ছেলে বরিশাল থাকেন।তিনি বড় ছেলে ফারুক হোসেন মিল্টনের সাথে নিউটাউন বিলপাড়ের বাসায় বসবাস করতেন।প্রায় ১০ দিন আগে মিল্টন বরিশাল যান কাজে।মিল্টনের স্ত্রীও চলে যান জেলার আটপাড়ায় বাবার বাড়ীতে। এ কারণে তিনি কয়েকদিন ধরে বাসায় একা ছিলেন।সোমবার ছেলে মিল্টন বারবার ফোন করে মায়ের সাথে কথা বলতে পারছিলেন না। পরে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে জোছনা বেগমের ভাই ফেরদৌস দরজার তালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে হাত -পা বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে বোনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।
খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ সময় ঘরের ভিতরে জিনিসপত্র এলোমেলো ও স্টীলের আলমীরা খোলা ছিল। মঙ্গলবার সকালে জেলা শহরের বিভিন্ন স্হান থেকে ফারুক হোসেন মিল্টনের ছেলে সাম্মাম হোসেন সিনহা, জেলা শহরের পূর্ব চকপাড়ার আব্দুল হকের ছেলে সাব্বির হোসেন ওরফে চয়ন ও সদর উপজেলার পশ্চিম উলুয়াটির কামাল হোসেনের ছেলে রিয়াদ হাসান অনিককে আটক করেছে পুলিশ। রাতেই জোছনা বেগমের ছোট ছেলে নাজমুল হাসান রুজেন বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে নেত্রকোণা মডেল থানায় মামলা করেন। পরে ওই মামলায় ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সূচ,গ্লাবস, ইনজেকশন জব্দ করেছে এবং ওই ৩ কিশোরকে আদালতে পাঠিয়েছে।
নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান জানান ,সাম্মাম হোসেন ৯ম শ্রেণিতে পরীক্ষা না দেয়ায় বাসা থেকে তাকে বের করে দেন তার বাবা ও মা।এরপর থেকে সাম্মাম তার বন্ধুদের সাথে ও বিভিন্ন স্হানে থাকত। কয়েকদিন ধরে তার মা ও বোন আটপাড়ায় বেড়াতে যাওয়ায় বাসায় একা জোছনা বেগম থাকছিলেন ও বাসায় আলমিরাতে ১০ লক্ষ টাকা আছে জানতে পারে সাম্মাম।এই টাকা নিয়ে যেতে ৩ বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করে স্হানীয় একটি হাসপাতাল থেকে চেতনানাশক ইনজেকশন সংগ্রহ করে রবিবার রাত ৯ টার দিকে বাসায় ঢুকে। পরে ৩ বন্ধু মিলে জোছনা বেগমের হাত- পা বেঁধে শরীরে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করে অচেতন করে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আলমীরা থেকে টাকা নেয়ার চেষ্টা চালায়।কিন্তুু লকার ভাঙতে না পারায় আলমীরাতে থাকা ২ হাজার টাকা নিয়ে কিছু সময় পর তারা পালিয়ে যায়।পরে শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় ইনজেকশন, সূচ,হাতের গ্লাবস একটি পুকুরে ফেলে দেয়।