ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রস্তুত করা হয়েছে। ইশতিহারে আগামী পাঁচ বছরের সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকবে বলেও জানা গেছে।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইশতেহার উপস্থাপন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, এবারের ইশতেহারে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দুর্নীতি রোধের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এছাড়াও তরুণদের আকৃষ্ট করতে কর্মমুখী শিক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উন্নয়নের ধারাকে চলমান রাখার প্রতিস্রুতিও থাকবে এতে।
আরও জানা যায়, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, মাদকমুক্ত দেশ গড়া, টেকশই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তথা দেশে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী জনবল গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি সহ অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গঠনের উপর জোড় দেয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ক্যাশলেস সোসাইটি, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, উদ্যোক্তা সৃষ্টি, গবেষণা ও উদ্ভাবননির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলার বিষয়টি ইশতেহারে থাকবে। চলমান মেগাপ্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করা ও আগামী পাঁচ বছরে উন্নয় রূপরেখার মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গঠনেও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে।
সূত্রটি জানায়, এবারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি গঠনের উপর জোড় দিবে। ২০৪১ সালের মধ্যে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে নাগরিকদের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করে স্মার্ট সিটিজেন হিসাবে গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে।
ইশতেহার নিয়ে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা এবারের ইশতেহারে সাধারণ জনগণ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়েছি। তারা অর্থনীতি, অবকাঠামো, কৃষি, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুতের উৎপাদন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা তাদের এসব মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমাদের নেত্রীর যে ১৫ বছরের উন্নয়ন, বিশেষ করে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন, ইনভেস্টমেন্ট এগুলোকে কিভাবে জনকল্যাণে কনভার্ট করা যায় এজন্য বাস্তবিক পদক্ষেপ আমাদের এবারের ইশতেহারে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যতগুলা লংটার্ম প্রোগ্রাম আছে, প্ল্যান আছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ যেন সমানভাবে সকল সুবিধা পায় এরকম একটা বক্তব্য আসবে। কর্মসংস্থানে গুরুত্ব আসবে। দারিদ্রবিমোচনে গুরুত্ব আসবে।
তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের নামে প্রতিটা সেক্টরে, যেন এফেসিয়েন্সি বাড়ে সে বিষয়টি থাকবে। দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স থাকবে। আমাদের উদ্যোগের কারণে যে দেশে ব্যাপক দুর্নীতি কমেছে এটা কেউ বলছে না। যেমন বাংলাদেশের টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়ে গেছে, নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের দুর্নীতির প্রধান দুটি ক্ষেত্র ডিজিটালাইজেশনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। সারা দেশে লিখিত পরীক্ষা মাস্ট করা হয়েছে সরকারি বেসরকারি সকল পরীক্ষায়। লিখিত পরীক্ষার নিয়ন্ত্রণ নিয়োগ প্রদানকারীর হাতে নেই। এই মেসেজ থাকবে।
সেলিম মাহমুদ বলেন, আমরা ইশতেহারে তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান এবং এন্টারপ্রেনারশিপ এই দুই দিকে জোড় দিচ্ছি। প্রযুক্তিকে আমাদের গভর্নেন্স, আমাদের ডেভেলপমেন্ট, আমাদের ওয়েলফেয়ার ব্যবহারে জোড় দেয়া হবে। আমরা হাইটেক এর দিকে যাচ্ছি। আমাদের জিডিপিতে অংশগ্রহণ থাকে প্রাইমারিলি এগ্রিকালচার, সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের। এগুলোকে ইমারজিং ইকোনোমিকের ক্ষেত্রে কোথায় কতটুকু কনট্রিবিউশন বিজ্ঞানসম্মতভাবে দরকার সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
এর আগে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ‘দিন বদলের সনদ’ শিরোনামে ইশতেহার দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালে ১০টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ইশতেহার দেয় দলটি। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ইশতেহার প্রকাশ করে ক্ষমতাসীন দলটি। এবার টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার পর চতুর্থ দফায় নির্বাচিত হবার প্রত্যয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ করতে চায় দলটি।
জানা যায়, এদিন সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসন গ্রহণ করবেন। সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাগত বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক। এরপর বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তারপর দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা ইশতেহার পাঠ করবেন।