নিথর মাহবুব দেশের একজন নন্দিত মূকাভিনয় শিল্পী। কথা ছাড়াই অভিনয় করে তিনি দর্শকদের মধ্যে আনন্দ বেদনার সঞ্চার করতে পারে। শিশু—কিশোরদের কাছে মূকাকু হিসেবে রয়েছে তার বিশেষ পরিচিত। তাকে বাংলাদেশের মূকাভিনয় শিল্পের কাণ্ডারি বলা হয়। এবার অভিনয়ে তিনি দেখালেন আরেক চমক। মূকাভিনয়ের বাইরে মঞ্চ ও টিভি নাটকে অভিনয় করেও তিনি দর্শকদের মুগ্ধ করছেন। সম্প্রতি তিনি নির্মাণ করেন ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ নামের একটি এক মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এটি নির্মাণের পাশাপাশি তিনি এতে অভিনয়ও করেন। ‘আন্তর্জাতিক বাভাসি চলচ্চিত্র উৎসব—২০২৩’ এর আসরে সিনেমাটি জমা দিলে প্রতিযোগিতায় সকল শিল্পীদের পাশ কাটিয়ে মাত্র এক মিনিটের এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্যই সেরা অভিনয়শিল্পীর একমাত্র পুরস্কারটি জিতে নিয়েছেন নিথর মাহবুব।
প্রথমবার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত নিথর মাহবুব। তিনি বলেন, পর্দায় আমার খুব কম কাজ করা হয়। ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ নামে একমিনিটের সিনেমাটি বানিয়ে ছিলাম একজনের অনুরোধে। সেটা আন্তর্জাতিক একটা পুস্কার বয়ে আনার জন্য খুবই ভালো লাগছে। পর্দায় অভিনয়ের জন্য এটাই আমার প্রথম পুরস্কার। আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সংশ্লিষ্টদের কাছে।
‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ এক মিনিটের গল্প হলেও এই সিনেমায় একজন শিল্পীর দেশপ্রেম ও জীবন সংগ্রাম মানুষকে নাড়া দেয় গভীর ভাবে। সিনেমার গল্পে দেখা যায় এক তরুণ গাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক বই বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। কয়েকজন স্টুডেন্ট সেই বই কিনে। বিকল সেই স্টুডেন্টরা শিল্পকলায় আসে মূকাভিনয় শো দেখতে। দেশাত্মবোধক মাইম শোটি তাদের ভালো লেগে গেলে তারা গ্রিনরুমে যায় শিল্পীর সঙ্গে দেখা করতে। শিল্পী কেবল মাত্র সাদা গাড়ো মেকাপের আবরণ মুখ থেকে মুছেছেন; এমন সময় স্টুডেন্টরা গ্রিন রুমে ঢুকে চমকে যায়। কারণ সকালে বাসে যে লোকটার কাছে তারা বই কিনেছে এই শিল্পীর চেহারা তার মতো। একজন ব্যাগ থেকে বইটা বের করে শিল্পীকে জিজ্ঞাসা করে— এই বইটি তিনি বিক্রি করেন কি না। মূকাভিনেতা হে সুচক উত্তর দিলে সঙ্গে সঙ্গে স্টুডেন্টরা শিল্পীকে সেলুট দেয়। আর এখানেই গল্পের শেষ। ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ নিথর মাহবুব নির্মিত প্রথম কোন পর্দার কাজ ।
২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পর্দা নামে ‘আন্তর্জাতিক বাভাসি চলচ্চিত্র উৎসব—২০২৩’—এর সপ্তম আসরের। সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন সংস্কৃতিজন শংকর সাঁওজাল ও চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজু (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত) বিশেষ অতিথি ছিলেন। রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক বাভাসি চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।