দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাঁদপুর জেলার ৫টি আসনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ২৯ জন প্রার্থী নির্বাচনী প্রতীক পেয়েছেন।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) এসব প্রতীক বরাদ্দ দেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে দলীয় মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও তাদের পছন্দের প্রতীক পেয়েছেন। কোন কোন প্রার্থী প্রতীক পাওয়ায় তাদের কর্মী সমর্থকদের তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা গেছে।
এর মধ্যে চাঁদপুর-১ কচুয়া আসনে ‘মশাল’ প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’র (জাসদ) সাইফুল ইসলাম, ‘নৌকা’ প্রতীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেলিম মাহমুদ এবং চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. সেলিম প্রধান ভোটযুদ্ধে অংশ নিবেন।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর দক্ষিণ) আসনে ‘নৌকা’ প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী মায়া, ‘একতারা’ প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) মো. মনির হোসেন, ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে জাতীয় পার্টির মো. এমরান হোসেন মিয়া, ‘মশাল’ প্রতীকে জাসদের মো. হাছান আলী সিকদার এবং ‘ঈগল’ প্রতীকে স্বতন্ত্র এম ইসফাক আহসান নির্বাচন করবেন।
চাঁদপুর-৩ সদর ও হাইমচর আসনে ‘ঈগল’ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সামছুল হক ভূঁইয়া, ‘নৌকা’ প্রতীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ডা. দীপু মনি, ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে জাতীয় পার্টির মো. মহসীন খান, ‘মোমবাতি’ প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের আবু জাফর মো. মাইনুদ্দিন, ‘ফুলের মালা’ প্রতীকে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের (বিটিএফ) মো. মিজানুর রহমান, ‘ট্রাক’ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেদোয়ান খান এবং ‘গোলাপ ফুল’ প্রতীকে জাকের পার্টির মো. কাওছার মোল্লা ভোটের মাঠে থাকছেন।
চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে জাতীয় পার্টির সাজ্জাদ রশিদ, ‘ট্রাক’ প্রতীকে স্বতন্ত্র জালাল আহমেদ, ‘নৌকা’ প্রতীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, ‘আম’ প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আব্দুল গনি, ‘ফুলের মালা’ প্রতীকে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের (বিটিএফ) বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী, ‘ঈগল’ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সামছুল হক ভূঁইয়া, ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির মো. আব্দুল কাদির তালুকদার এবং ‘নোঙ্গর’ প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মাঠ দাপিয়ে বেড়াবেন।
চাঁদপুর-৫ হাজীগঞ্জ শাহরাস্তি আসনে ‘নৌকা’ প্রতীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম, ‘চেয়ার’ প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী, ‘ঈগল’ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মাঈনুদ্দিন, ‘ফুলের মালা’ প্রতীকে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের (বিটিএফ) বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী, ‘ট্রাক’ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সফিকুল আলম এবং ‘ছড়ি’ প্রতীকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের আক্তার হোসেন ভোটযুদ্ধে অংশ নিবেন।
ভোটাররা বলছেন, বিএনপি মাঠে না থাকায় চাঁদপুর-১ কচুয়া আসনে আওয়ামী লীগের সেলিম মাহমুদ অনেকটা ফাঁকা মাঠেই গোল দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে চাঁদপুর-২ আসনে মায়ার নৌকার শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের এম ইসফাক আহসানের ঈগল, চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার দীপু মনির প্রতিপক্ষ হিসেবে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ সামছুল হক ভূঁইয়া।
চাঁদপুর-৪ আসনেও নৌকার প্রার্থী মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সামছুল হক ভূঁইয়া, ট্রাক প্রতীকের আওয়ামী লীগ নেতা জালাল আহমেদ, লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির সাজ্জাদ রশিদ, বিএনএম’র মহাসচিব ড. মোহাম্মদ শাহজাহানের নোঙ্গর এবং চাঁদপুর-৫ আসনে রফিকুল ইসলামের নৌকার শক্ত প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মাঈনুদ্দিনের ঈগল প্রতীকের মধ্যে খেলা হবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে অনেককেই উৎসাহিত করা হয়েছে। দল থেকে কাউকে বাধা দেওয়া হবে না। আমাদের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপর এবার কোনো চাপও থাকবে না। তবে আমরা দলের পক্ষ থেকে অবশ্যই চাঁদপুর জেলার ৫টি আসনে নৌকার প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতেই কাজ করবো।
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ বলেন, চাঁদপুরের ৫টি সংসদীয় এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৬০৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৭ জন এবং নারী ভোটার ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৩২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৬ জন। এই ভোটাররা ৭০০ ভোট কেন্দ্রে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে চাঁদপুর-১ কচুয়ায় ১০৯টি, চাঁদপুর-২ মতলব দক্ষিণ ও উত্তরে ১৫৫টি, চাঁদপুর-৩ সদর ও হাইমচরে ১৬৫টি, চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জে ১১৮টি ও চাঁদপুর-৫ হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে ১৫৩টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের সকল প্রস্তুতির পরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর জেলায় ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নবম, দশম ও একাদশ সংসদীয় নির্বাচনে ৫টি আসনেই নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান ক্ষমতসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা।