নাম জাহিদুল ইসলাম (৪০)। বসবাস করেন সাভার উপজেলার রেডিও কলোনি এলাকায়। তবে তার গ্রামের বাড়ি ধামরাই উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নে। আয়ের উৎস হিসেবে দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই তার। তবে বাবা মায়ের দেওয়া নিজের নাম পাল্টে হয়ে গেছেন জাহিদ খান। বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচারণা করে পরিচয় দেন প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার এনামুর রহমানের প্রোটোকল অফিসার। তবে তা অস্বীকার করেছেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমার কোন প্রটোকল অফিসার নেই।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা ছবি ব্যবহার করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকজন বেকার যুবক-যুবতীর কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাহিদুল ইসলাম ওরফে ভেলকা জাহিদ ওরফে ছবি জাহিদ (৩৩) নামে এই প্রতারকের বিরুদ্ধে। এসবের কারণে দীর্ঘদিন যাবত তিনি ধামরাইয়ের নিজগ্রাম ছেড়ে পরিবার নিয়ে সাভারে বসবাস করছেন। সাভারে এসেও পরিচিতজনদের জমি ক্রয় করে করে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজের স্ত্রীর নামে জমি কিনেছেন এমন অভিযোগও উঠেছে জাহিদুল ইসলাম ওরফে ভেলকা জাহিদের বিরুদ্ধে।
বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্টি বিএনপি’র রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিজের পরিবারকে মামলা মুক্ত রাখতে জাহিদ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের পদলেপন করা শুরু করেন। তবে ধামরাই অঞ্চলের স্থানীয় নেতারা তার বাপ-দাদার রাজনৈতিক পরিচয় জানতে পেরে সেখানে তেমন সুবিধা করতে পারেননি জাহিদ। পার্শ্ববর্তী উপজেলা সাভারে এসে সুযোগ নিয়েছেন তিনি। এরপর ছবির রাজ্যে নিজেকেই গড়ে তোলেন আস্ত এক আওয়ামীলীগার হিসেবে।
ভেলকা জাহিদ কখনো সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীবের ভাগিনা, কখনো ধামরাইয়ের এমপি বেনজির আহমেদের খালাতো ভাই, আবার কখনো ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর প্রোটোকল অফিসার পরিচয় দিয়ে মানুষদের আকৃষ্ট করতেন।
গোলকধাঁধার অন্তরালে প্রধানত প্রতারণা ব্যবসার সাথে সাথে টার্গেটকৃত সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে কথিত সম্পর্ক গড়ে ব্যবসার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণাই বহুরুপী এই জাহিদের মূল পেশা। তার প্রতারণার জালে জড়িয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন শতাধিক নারী ও পুরুষ। এমনকি তার ছলনা ও প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাননি খোদ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, জাহিদ ওরফে ভেলকা জাহিদ বাবার হাত ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল। ধামরাই উপজেলার ভাড়াটিয়া ইউনিয়ন বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় তারা পারিবারিকভাবে সেই রাজনীতির সাথে সংযুক্ত ছিল। ভোল্ট পাল্টে রাতারাতি সরকার দলীয় নেতা পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সাভার আশুলিয়া ধামরাইসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল।
তার জালে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীব, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার এনামুর রহমান, ধামরাইয়ের এমপি বেনজির আহমেদ। এবংকি যার করুণায় জাহিদ এত দূর সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক কেউ সে ছাড় দেননি। সাংবাদিকদের লেলিয়ে দিয়ে আতিক এর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে আতিকের কাছে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রতারক জাহিদ।
তবে ভেলকা জাহিদের এই চতুর্পনা সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, জাহিদের মত হাইব্রিডদের স্থান না দিয়ে প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের নিয়ে পথ চলতে হবে।
জানা গেছে, কিছুদিন পূর্বে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ছেলের শুভ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে ধুমধাম এই আয়োজনের দাওয়াত কার্ড চুরি করে দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকদের দাওয়াত দেয় জাহিদ। সেখানে গিয়ে তিনি ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে ফোন কলে সক্ষতার কথা শোনান। এই পরিচয়ের ব্যাপারটি যাচাই-বাছাই করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সাথে পূর্ব সম্পর্ক থাকায় বড় ধরনের প্রতারণা থেকে বেঁচে গেছেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রীকে জানানো হলে তিনি এরপর থেকেই সতর্ক হয়ে যান।
এর আগে সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীবের বিরুদ্ধে মানহানিকর কুৎসা রটায় এই জাহিদ। আবার চেয়ারম্যানের সামনে গেলে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানিকর কুৎসা রটানো হয়। শুধু তাই নয় বিএনপি’র এজেন্ডা বাস্তবায়নে আওয়ামীলীগ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেওয়ার পটু হচ্ছেন ভেলকা জাহিদ ওরফে ছবি জাহিদ। সরকার দলীয় কোন পদ না থাকলেও সাভার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দেওয়া ভেলকা জাহিদ থেকে সাবধান থাকতে বলেছেন ঢাকা ২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদ সহ সংশ্লিষ্টরা। তার প্রতারণার দায় একান্তই এই ভেলকা জাহিদের। (১ম পর্ব)
দ্বিতীয় পর্বে থাকছে কারা হয়েছেন ভেলকা জাহিদের প্রতারণার শিকার..! কিসের ভয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। ভেলকা জাহিদের খুঁটির জোর কোথায়.?