উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে হারিয়ে যেতে বসেছে আদি গ্রামীণ সাধারণ মানুষের খেলাধূলা।
এক সময় গ্রাম -গঞ্জের ছেলে- মেয়েরা পড়া -লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধূলায় অভ্যস্থ্ ছিল।
অবসর সময় ছেলে-মেয়েরা দলবেঁধে খেলতে যেত গ্রামের খোলা মাঠে। পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে গোসল করা সহ শৈশবে দুরন্তপনায় জড়িয়ে থাকতো বিভিন্ন খেলাধূলার মাধ্যমে।
কিন্তু আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এ সব জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলাধুলা। পাড়া- মহল্লাতে তেমন একটা চোখে পড়ে না শিশু-কিশোরদের এক সময়ের জনপ্রিয় মজার খেলাধূলা।
কানামাছি বৌ বৌ, হা-ডু-ডু, লাটিম খেলা, দাঁড়িয়া বান্ধা,গোল্লাছুট, ঢাংগুলি, মার্বেল, হাঁসধরা, রশিটানা, ইচিং-বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, মল্ল যুদ্ধ, লাঠিখেলা, লুকোচুরি, কক ফাইট (মোরগ লড়াই), কড়ি, ধাপ্পা, কুতকুত, বিস্কুট খেলা, যেমন খুশি তেমন সাজ, পুতুলের বিয়ে, চড়ই -ভাতি, এলাডিং বেলাডিং উল্লেখযোগ্য খেলা।
দুপুর ঘনিয়ে যখন বিকেল হতো, একটু ফাঁকা জায়গা পেলেই বিশেষ করে আমবাগানে কাছামাছি, বৌচি, হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা কিংবা ঢাংগুলি খেলায় মেতে উঠত। সন্ধ্যা হলে খেলাধূলায় মত্ত শিশু- কিশোর নিজ নিজ বাড়ী গিয়ে হারিকেন বা কুপির আলোতে পড়তে বসতো।
সেই সময় ক্রিকেট তো দূরের কথা, একক ভাবে ফুটবল কেনা ছিল বিশাল ব্যাপার। দুই দলের খেলোয়াড় চাঁদা তুলে প্রথম পুরষ্কার একটা আয়না এবং দ্বিতীয় পুরষ্কার একটা চিরুণি দিয়ে দুই দলের মধ্যে জমজমাট ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হতো।
ছোট বয়সে চাচাত ফুফাত,মামতো ভাইবোন, বন্ধু-বান্ধব, মিলে পড়ন্ত বিকেলে ও জ্যোৎস্না রাতে গোল্লাছুট, হা-ডু-ডু ও দাঁড়িয়াবান্ধা খেলাগুলোর কথা মনের গহিনে এখনো নাড়া দেয়।
এ ছাড়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বিয়ের গান, ছেলে-মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে উভয় বাড়িতে ৩/৪দিন ধরে চলতো মা -চাচিদের বিয়ের গান। বিয়ের আসরে বরপক্ষ আর কনে পক্ষের মধ্যে চলতো কথার লড়াই। বসতো পুথিঁপাঠের আসর। কিন্ত দিন বদলের পালায় গ্রামাঞ্চলে সেই ঐতিহ্য আর নেই।৷
নেত্রকোণা সদর উপজেলার রায়দুম রুহী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম (৪৫) জানান, বছর কয়েক আগেও এই গ্রামীণ খেলাধূলা গুলো প্রতিটি গ্রামে বিরাজ করতো ছেলে -বুড়ো সবাই খেলতো।
কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ এসব খেলা ধূলা নজরে আসেনা। শিক্ষক মোশাররফ হোসেন জানান,বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুব সমাজ কে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে গ্রামীণ খেলা ধূলা, মাদক মুক্ত সমাজ গঠনে আদি গ্রামীণ খেলাধূলার বিকল্প নেই, তাই আমাদের উচিত বর্তমান প্রজন্ম কে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের খেলাধুলার সাথে পরিচয় ঘটানো, এবং এসব খেলা ধূলাকে টিকিয়ে রাখা।