বর্তমান কারিকুলাম নিয়ে পক্ষে / বিপক্ষে অনেক মতবাদ আছে। বেশিরভাগ বিপক্ষে কিছু সংখ্যক পক্ষে অনুমান নির্ভর কথা বলতেছে। আমার দীর্ঘ আট বছরের শিক্ষকতা পেশায় (ঢাকা শহর ও গ্রামের স্কুলে) যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করছি। সবটুকু পড়ার পর মন্তব্য করার অনুরোধ করছি। পক্ষ / বিপক্ষে মতবাদ থাকতেই পারে। তবে গঠনমূলক সমালোচনাকে শ্রদ্ধা করি। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে নিম্নের পয়েন্টগুলো বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রুটি বলে মনে করছি।
১ঃ- বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা বই রচনা করেছেন তারা বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যায়ের হওয়াই বইগুলো মূল তাত্বিক না হয়ে গবেষণা ধর্মী হয়ে গেছে। কিন্তু মূলতত্ত্ব আগে গবেষণা পরে করতে হয়। বই রচনার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে সাথে অবশ্যই স্কুল কলেজের শিক্ষক রাখতে হবে। এবং তাদের কথা ও যুক্তি বেশি মূল্যায়ন করতে হবে কারণ তারা সরাসরি ক্লাস রুমের সাথে জড়িত।
২ঃ- বই রচনার ক্ষেত্রে আগের ক্লাসের শিখনফলের সাথে বর্তমান ক্লাসের সামঞ্জস্যতা নাই এবং বয়সের সাথে যোগ্যতার মিল না থাকায় শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে বুঝতে পারছে না।
৩ঃ- শিক্ষার্থী নিয়ে যারা সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে অর্থাৎ শিক্ষক, ও অভিভাবক কারও নিকট থেকে কোনো পরামর্শ নেয়নি। যদিও তারা শিক্ষার্থীর সবল দূর্বল দিকগুলো সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে।
৪ঃ- মূলতত্ত্ব না শিখিয়েই অনেক জায়গায় গল্পগুজব শুরু করে দেওয়া হয়েছে। যা শিক্ষার্থীদেরকে বিভ্রান্ত করছে।
৫ঃ- বইগুলোতে পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ রাখা হয়নি যার জন্য শিক্ষার্থীদের স্কীল বৃদ্ধি হচ্ছে না।
৬ঃ- বইগুলোর কাগজ এবং লেখার কালির মান খুবই নিম্ন পর্যায়ের। তাই তারা আগ্রহ নিয়ে বই খোলে পড়ে না
৭ঃ- সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হলো পরীক্ষা পদ্ধতি ও শ্রেণিরোল না থাকা। কারণ প্রতিযোগিতা ছাড়া জীবন জড় পদার্থের মতো।
৮ঃ- দলগতকাজের প্রাধান্যের কারণে ক্লাসের প্রথম সারির কয়েকজন শুধু উপকৃত হচ্ছে আর সবাই ফাঁকি দিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামের স্কুলগুলোতে।
৯ঃ- শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যবিত্ত এবং গরীব অভিভাবকদের পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্কুল থেকে ঝড়ে পরার প্রবণতা বাড়ছে।
১০ঃ বিভিন্ন প্রজেক্ট দলগতভাবে করতে হয় বিধায় শিক্ষার্থীরা একসাথে মিলিত হতে হয় বিভিন্ন বাসায় যেটা সময় নষ্ট করে এবং সঙ্গ দোষে বাচ্চাও নষ্ট হতে পারে।
১১ঃ- প্রজেক্টগুলো করতে বিভিন্ন তথ্যের দরকার হয় বিধায় শিক্ষার্থীরা ডিভাইসমুখী হচ্ছে এবং হুবহু কপি করে নকলিবাজি শিখছে। আর সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হলো তারা বিভিন্ন ডিভাইসে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। যা জাতির জন্য অশনিসংকেত।
১২ঃ- পরীক্ষা না থাকার অযুহাতে তারা টেবিল বিমুখ হচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে সময় অপচয় করে নেশাগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামে অভিভাবকদের অসচেতনতার জন্য।
১৩ঃ- কোনো বইয়ে পর্যাপ্ত অনুশীলন না থাকায় এবং বইয়ের ফাঁকা জায়গায় লিখতে বলায় শিক্ষার্থীরা খাতায় লেখা ভুলে যাচ্ছে এরফলে তাদের হাতের লেখা অসুন্দর এবং রাইটিং স্কিল মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।
১৪ঃ- ত্রিভুজ, বৃত্ত ও চতুর্ভুজের মাধ্যমে সবার মূল্যায়ন সঠিকভাবে করা যায় না বলে অনেক ভালো শিক্ষার্থী মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আরও দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক -শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী- শিক্ষার্থী, এবং শিক্ষক অভিভাবকের মাঝে মনমালিন্য ও দুরত্ব তৈরি হচ্ছে ত্রিভুজ, বৃত্ত নিয়ে।
১৫ঃ- চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল পরীক্ষা যুদ্ধ থাকায় এবং স্কুলে পরীক্ষা না থাকাতে তা একেবারে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে সবার কাছে।
১৬ঃ- এই শিক্ষা ব্যবস্থায় মুখস্থ বিদ্যাকে এমনভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মনে হচ্ছে মুখস্থ করা বিরাট অন্যায় কাজ। অথচ অনেক মূলতত্ত্বের জন্য মুখস্থ জরুরী।
১৭ঃ- শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিনের সাথে তাদের সিলেবাস শেষ করানোর কোনো মিল নেই। যেমন বিজ্ঞানে সপ্তাহে সরকার কর্তৃক মাত্র তিনদিন ক্লাস। এই তিনদিনে তাদেরকে কোনোভাবেই সব পড়ানো সম্ভব নয়।
১৮ঃ কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে বলা হয়েছিলো তারা বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে আনন্দের সাথে শিখবে। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। তাদের স্কুলের টাইম হচ্ছে সকাল ১০ টা হতে বিকাল ৫ টা। আবার এর আগে সমাবেশ। মানে ৯ঃ৩০ এর মধ্যে তাকে প্রতিষ্ঠানে থাকতে হবে। গ্রামে অনেকে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে/ অটোতে স্কুলে আসে তাই তাদেরকে গোসল খাওয়াদাওয়ার জন্য মিনিমাম সকাল ৮ টা থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার স্কুল শেষে বাসায় ফিরে সন্ধ্যার পর ক্লান্ত হয়ে। তাহলে তাদের খেলাধুলা ও বিনোদনের সময় কোথায়? এই বয়সে খেলাধুলা অত্যাবশ্যক। তাহলে চাপ বাড়লো নাকী কমলো?
১৯;-এই শিক্ষা ব্যবস্থায় ট্রেনিংয়ের সময় শিক্ষা কর্মকর্তা / মাষ্টার ট্রেইনাররা পরোক্ষভাবে শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে বলে আপনাদের কোনো মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও তারা এখানে মতামত দেওয়ার বেশি হকদার। এটা শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। তাই তারা ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও কথা বলতে পারছে না।
২০ঃ- এ শিক্ষা ব্যবস্থায় অযথা অনেক বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা হয়েছে যেগুলো মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই শিখে যায়। যেমন রান্না বান্না
২১ঃ- এই শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক জায়গায় ইতিহাস বিকৃত করে ভারতীয় প্রভাব বিস্তার করার অপচেষ্টা করা হয়েছে এবং মুসলিম ও ইসলামকে অনেক জায়গায় বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করার পায়তারা করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
২২ঃ- বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সায়েন্স, আর্টস ও কমার্সের আলাদা আলাদা বিভাগ উঠিয়ে এক করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিজ্ঞান বিভাগের একজন পূর্বের শিক্ষার্থী হিসাবে বলতে পারি এসএসসি লেভেলের পদার্থ, রসায়ন, জীব বিজ্ঞান এবং উচ্চতর গনিত আলাদাভাবে ভালো করে অধ্যায়ন করার পরও ইন্টারের বিজ্ঞান সিলেবাস কভার করা কষ্টকর হয়ে যায়। বিজ্ঞানে এসএসসি পর্যায়ে যদি খাল হিসাবে বিবেচনা করা যায় তাহলে ইন্টার কিন্তু বিশাল নদীর মতো হবে। যেখানে মৌলিক বিজ্ঞান পড়ার পরও এইচএসসি তে শিক্