সাভারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর এর সামনেই ছেলেকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে বিবস্ত্র করে পেটানোর পর মায়ের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ ঘটেছে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এতে সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকার মৃত সেলিম মন্ডলের ছেলে আব্দুল কাদের(৩৮) ও তার মা বৃদ্ধ পরিবানু বিবি(৬৫) গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ধস্তাধস্তিতে অপরপক্ষের আলমগীর হোসেনও আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও ডিউটি অফিসার রাজিব সিকদার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকার মৃত সেলিম মন্ডলের ছেলে আব্দুল কাদের তার দুইতলা ভবনের ছাদে একটি ছাদ বাগান করেন। সেই ছাদ বাগান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় গরম পানি ও ভাতের মার নিক্ষেপ করেন প্রতিবেশী নয় তলা ভবনের মালিক আলমগীর হোসেন ও তার স্ত্রী ঈশিতা আলম।
এর প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে মাসখানেক আগে আলমগীর হোসেন প্রতিবেশী আব্দুল কাদের এর বিরুদ্ধে উল্টো ছাদ বাগানে জুতা লাগানোর অভিযোগ এনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে অভিযুক্ত আলমগীরের ছেলে সৌরভ হোসেন তার ফেসবুক আইডি থেকে আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য জুড়ে লাইভ ভিডিও করে অপপ্রচার চালান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।
সোমবার বিকেলে সাভার পৌরসভার এক নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রমজান আহমেদ রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনার কাজে ভাটপাড়া এলাকায় গেলে দুই পক্ষ উভয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কাউন্সিলর এর কাছে বিচার দাবি করেন। বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে দুই পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন কাউন্সিলর রমজান আহমেদ। এর মধ্যেই কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে কাউন্সিলরের সামনেই আব্দুল কাদেরকে কিল ঘুষি শুরু করেন আলমগীর হোসেন।
অভিযুক্ত নয়তলা ভবনের মালিক আলমগীর হোসেন(৫০), তার স্ত্রী ঈশিতা আলম(৩০), ছেলে সৌরভ ও নিয়াজ সহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজন মিলে প্রতিবেশী দুই তলা ভবনের মালিক আব্দুল কাদেরকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ফেলে এলোপাথারি রড দিয়ে পেটানো শুরু করলে ভুক্তভোগী আব্দুল কাদেরের মা বৃদ্ধ পরিবানু বিবি(৬৫) এগিয়ে আসলে তাকেও পেটানো হয় এতে তার পা ভেঙে যায়। এসময় আলমগীর নিজেও তার ছেলের আঘাতে কপালে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
স্থানীয়রা আহত অবস্থায় বৃদ্ধ পরীবানু বিবি ও আব্দুল কাদেরকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দায়িত্বরত চিকিৎসক আব্দুল কাদেরের মা পরিবানু বিবিকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় অপর পক্ষের আলমগীর হোসেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। পরে উভয় পক্ষ সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে সাভার পৌরসভার কাউন্সিলর রমজান আহমেদ বলেন, সোমবার বিকেলে সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকায় একটি রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা কাজে গেলে আব্দুল কাদের ও আলমগীর হোসেন উভয়ে উভয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমি মীমাংসার আশ্বাস দিলেও আলমগীর হোসেন সহ তার পরিবারের সদস্যরা আব্দুল কাদেরকে আমার সামনেই আক্রমণ করে বসেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
এলাকাবাসী জানান, নয়তলা ভবনের মালিক আলমগীর হোসেন প্রতিবেশীদের সাথে বিভিন্ন সময় খারাপ আচরণ করে থাকেন। প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়ায় তিনি কাউকেই পরোয়া করেন না। কয়েকদিন আগে তার আরেক প্রতিবেশী বেলাল হোসেন তার নিজের বাড়ির রাস্তায় সিসি ক্যামেরা লাগান। এতে বেলাল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আলমগীর হোসেন। এছাড়াও আলমগীরের বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তার রড চুরির অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে আলমগীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে জানান, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অসত্য। ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে তিনি কলটি কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন জানান, তদন্তপূর্বক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।