ঢাকার ধামরাইয়ে ৭২ স্বাস্থ্যকর্মীর সাক্ষর নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন নাজমুন নাহার নামে এক স্বাস্থ্য সহকারী। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে বেশিরভাগ সাক্ষরকারীই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নূর-ই রিফফাত আরার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়।
তথ্য বলছে, মূলত কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে এ অভিযোগ করা হয়। যদিও অভিযোগকারীরা বলছেন, ’সব অভিযোগ সত্য। তদন্তে সব পাওয়া যাবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ডা. নূর-ই রিফফাত আরা। এরপর থেকেই হাসপাতালের ভেতরে টোকেন মানি নেওয়া, অতিরিক্ত ফি নেওয়া, দালাল চক্র উচ্ছেদ ও মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করেন। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল।
অভিযোগ আছে, মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা অনেকেই অধস্তন কর্মীদের দিয়ে প্রতিবেদন প্রদান করেন। এছাড়াও টিকা ও বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা না করেই প্রতিবেদন দেন। স্থানীয়ভাবে বাস না করে ঢাকা থেকে এসে-যেয়ে অফিস করায় অনেকেই সময়মতো কাজে যেতে পারেন না। এনিয়ে মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশও পেয়েছেন।
গত ১২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন উপসচিব ধামরাইয়ে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করেন। সেখানে স্বাস্থ্য সহকারী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার অনুপস্থিত থাকায় তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এরপর ২২ জুলাই মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হলে নাজমুন নাহার এই সতর্ক করার বিষয়টিকে ’অসদাচারণ’ হিসেবে উল্লেখ করে সভায় উপস্থিত ৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে নালিশ দেন। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় অভিযোগ দিতে সবার কাছ থেকে সাক্ষর নেওয়া হয়। তবে এর দুইদিন পর অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যস্ততায় বিষয়টি মীমাংসা হয়। ওই সময় তিনি সাক্ষর ও ’অসদাচরণের’ অভিযোগের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছেন বলেও জানান। তবে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সবাই জানতে পারেন, পুরনো সেই অভিযোগের সঙ্গে আরও অভিযোগ যুক্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন নাজমুন নাহার।।
৭২ জন সাক্ষরদাতার মধ্যে ৪৮ জন কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি)। এরমধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা সবাই জানিয়েছেন, ’অভিযোগ করা হবে এমনটি জানতেন না তারা। দুই মাস আগে যে সাক্ষর নেওয়া হয়েছিল ও পরে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু আসলে ছেঁড়া হয়নি। সেটিই নতুন করে ব্যবহার করা হয়েছে।’
পাঁচটি অভিযোগ সংবলিত চিঠির বিষয়ে কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) ধামরাই উপজেলা কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ বলেন, ’অভিযোগের বিষয়টি জানতাম না। যে ঘটনা সেটি সবার নয়। তার নিজের ব্যক্তিগত বিষয়। আমাদের বলার পর আমরা সেটি নিয়ে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম। যা পরে মিটমাট হয়েছিল। আমাদের না জানিয়ে অভিযোগের বিষয়ে আমরা সবাই একত্র হয়ে সবাইকে জানাবো।’
দুর্নীতি ও অসদাচরণ, যা বলছেন হাসপাতালকর্মীরা
পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে অসদাচরণ, অপমান করা, ভয় দেখানোর কথা বলা হয়েছে। বাকি দুটিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। তবে অভিযোগের সঙ্গে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রমাণ যুক্ত করা হয়নি। এমনকি তথ্য প্রমাণ আছে কি না প্রশ্নে নাজমুন নাহার বলেছেন, ’দুইটি বিষয়ই সবাই জানে।’
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। নার্স সুপারভাইজার জাহানারা আক্তার বলেন, আমরা কোভিড-১৯ এর সময়ের টাকা পেয়েছি। আর আচরণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যেটুকু প্রয়োজন তা করেন। কিন্তু খারাপ আচরণ পাইনি।
কোভিড-১৯ এর সময়ে কাজের টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফার্মাসিস্ট আনোয়ার হোসেন, কর্মকর্তা ইসহাক মিয়া ও আবাসিক চিকিৎসক ডা. তিতাস। অসদাচরণের বিষয়েও তাদের বক্তব্য একইরকম। এমন কোনো অভিযোগ তাদের নেই বলে জানান।
অভিযোগের নেপথ্যের কারিগররা
অভিযোগটি স্বাস্থ্য সহকারী নাজমুন নাহার করলেও তার সঙ্গে রয়েছেন- স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ওসমান গনি, মো. আব্দুল হান্নান, ফেরদৌস আরা বেগম, মোমেনা আক্তার, শুক্লা রানী সরকার, লুৎফুন নাহার আক্তার, আসমা আক্তার ও মো. শামীম।
গত তিন বছরে তারা সবাই কর্মস্থলে যথাসময়ে অনুপস্থিত থাকা, মাঠপর্যায়ে যথাযথ ভূমিকা না রাখায় দুই ততোধিক কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ’এসব স্বাস্থ্য সহকারীদের বেশিরভাগই কর্মস্থলের কাছাকাছি থাকার কথা থাকলেও তারা থাকেন দূরে। সেখান থেকে অফিস করায় নিয়মিতই বিলম্ব হয় তাদের। কখনও কখনও উচ্চপদস্থরা মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনে গিয়েও তাদের পান না। এসব নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জবাবদিহি করায় তার সঙ্গে তাদের বিরোধ ছিল।’
ওসমান গনির কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ সব সত্য। সবাই জানে।
তবে তার কাছে অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দেননি। তিনি বলেন, ’আমরা রিফফাত আরা স্যারের বদলি চাই।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুন নাহার বলেন, জুলাই ১২ তারিখ সভা ছিল। স্বাস্থ্য উপসচিব ছিলেন। তিনি আমাদের অফিস ভিজিট করেন। আমরা সেখানে যাইনি। তাই পরেরদিন স্যার আমাদের ডেকে অকথ্য গালিগালাজ করেন। এরপর জুলাই মাসের ২২ তারিখ একটা বৈঠক হয়। সেখানে তিনি সিএইসসিপিদের নিয়ে বৈঠক করেন। আমাদের আটজন ইন্সপেক্টরকে ইনসাল্ট করা হয়। এছাড়া আমাদের কোভিড-১৯ সময়ের কাজের টাকাও দেওয়া হয়নি। সেদিনই আমরা সবার সাক্ষর নেই। সেদিন আমরা তার বৈঠক বর্জন করি।’
তিনি বলেন, ’তিনি আমাদের ধমক দিচ্ছিলেন। তখন আমরা অভিযোগ দেইনি। আমরা পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তারপর অভিযোগ জমা দেই। এখানে যারা চাকরি করেন সবাই শিক্ষিত। তারা মুর্খ নন। জেনে-বুঝে এটায় সাক্ষর করেছেন সবাই। তার আন্ডারে আমরা কেউ কাজ করতে আগ্রহী না।’
আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ আছে কি না প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ’২০২২ সালের টাকা তিনি এ বছর দিচ