যীশু সেন, বিশেষ প্রতিনিধি : রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেছেন- দেশের সুনাম দেশে বিদেশে তুলে ধরুন, সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক। দেশের সমস্যা, সম্ভাবনা ও উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকতায় রাউজান বরাবরই অগ্রগামী। বাংলাদেশের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনাবলির জন্য এ জনপদের সাংবাদিক, সম্পাদক, সংবাদপত্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাউজান আমাদের প্রাণের ঠিকানা। এ জনপদের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি তুলে ধরার পাশাপাশি নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করছি আমরা। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা শতভাগ বাস্তবায়ন করায় রাউজান এখন সারাদেশের মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সুন্দর বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছায় আমি রাজনীতি করি। গত ১৯ জুলাই বুধবার নগরীর কাজীর দেউড়িস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত রাউজান সাংবাদিক পরিষদ চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক, সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত একথা বলেন।
তিনি বলেন, রাউজান সাংবাদিক পরিষদ হওয়ায় অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। রাউজান ও চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে সবার কিছু দায়িত্ব আছে এই পরিষদ যেন দীর্ঘস্থায়ী হয় সে পরিকল্পনা করতে হবে। যাতে দেশের, মানুষের ও সাংবাদিকদের নিজেদের উপকার হয়। রাউজান নিয়ে আমি গর্ব করি। সাংবাদিক ভাইদের কাছে অনুরোধ, দেশটা আগে। আমরা দেশটা কার হাতে তুলে দেব? জঙ্গীদের হাতে? আবার জ্বালাও পোড়াও করার জন্য? মানুষের জন্য যদি কিছু করতে পারি তবেই সেটাই রাজনীতি। যারা দেশে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাদের কষ্ট লাগে না। দেশকে খাটো করে তারা কি পায়? মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি। সাংবাদিকরা পজেটিভ উদ্যোগ নেন। আপনাদের একটা ঠিকানা থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। সবাই মিলে ভূমিকা রাখব। সাংবাদিকদের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আসুন । পাশে থাকব সবসময়। আমি সেবক, শাসক নই। এটা আমার দেশ। এ মাটিতে আমি মিশে যাব। এ দেশ আমার গর্ব। যাবার আগে দেশ ও দশের জন্য কিছু করতে চাই।
তিনি আরো বলেন- রাউজান ২৪৩ বর্গ কিমি,
সাড়ে ছয় লাখ মানুষ, তিনশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৬০০ রাস্তা, ৩৪ হাজার কৃষক ১ লক্ষ ছাত্রছাত্রী- সব মিলে ২৪৩ বর্গ কিলোমিটারের রাউজান। মসজিদ ৫১২টি, মন্দির ৩১৪টি, বৌদ্ধ বিহার ১৩৭টি আছে। প্রথম আমরাই করোনার আগে স্কুলে মিড ডে মিল চালু করি। দীর্ঘ চার বছর আমরা করেছি। করোনায় ১ লাখ মানুষকে খাবার দিয়েছি। অক্সিজেন সেবা দিয়েছি। স্বাস্থ্যসেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে দিয়েছি। ১৭টি ইউনিয়নে পার্টি অফিস করেছি। ১২৬টি ওয়ার্ড অফিসের কাজ চলছে। সড়ক সম্প্রসারণ করেছি। ১৩টি কলেজ ও ১টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আমাদের শিক্ষার হার ৭৪%। বাসস্থানের কথা ভেবেছি, শিল্পনগর করছি, অটিস্টিক ও বৃদ্ধাশ্রম করছি ৫০০ শয্যার। মানুষের সেবার জন্য নাজিরহাটে ডেমু ট্রেন দিয়েছি। ঢাকায় সার্কুলার ট্রেন করছি। আখাউড়া-লাকসাম কাল থেকে ডুয়েল গেজ চালু করেছি। চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই রেল লাইন নিতে প্রস্তাব করেছি। আমাদের কৃষি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করছি। সবার হাতে টাকা আছে, কিন্তু কৃষি জমিতে কেউ বাড়ি বানাতে পারে না। আমাদের ৩৫ হাজার কৃষক আছে। তাদের সার, বীজ, আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা করছি। রাউজানে সরিষা ও সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। তেল তৈরি করতে মেশিন দিয়েছি দুইটি। আমরা ২৫ লাখ ফলের গাছ লাগিয়েছি। এক ঘণ্টায় লাগিয়েছি পৌনে পাঁচ লাখ। আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাব, একবার রাউজান ঘুরে আসুন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, কৃষি, পরিবেশসহ প্রতিটি সেক্টরে আমাদের কাজগুলো দেখুন। মানুষের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, ইতিহাস, রাজনীতি, সাহিত্যসহ সকল ক্ষেত্রে এক অগ্রসর জনপদ রাউজান। মাস্টারদা সূর্য সেন ও কবি নবীন সেন, কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীসহ অনেক গুণীজন এই রাউজানের সন্তান। দৈনিক আজাদী ও দৈনিক পূর্বকোণ দুটি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতাও রাউজানের। এরমধ্যে রাউজানে অনেক বড় অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়ন অভূতপূর্ব। উপজেলায় হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন। আরো হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। আমার বাবা চট্টগ্রামের মানুষের জন্য কাগজ করেছিলেন। অনেকে বলে ঢাকা থেকে কাগজ করেন। না কেন? সেটা আমার জীবদ্দশায় কখনো হবে না। আমরা এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের ভালোবাসায় পথ চলি। এখানকার সংস্কৃতিকে বিকশিত করার, সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। যখন প্রসঙ্গ আসে রাউজানের- তখন এই দায়বদ্ধতা, ভালোবাসা আমার কাছে ভিন্নমাত্রা পায়। এখানে জন্ম নিয়েছেন বহু যুগস্রষ্টা মনীষী, সমৃদ্ধ করেছেন এর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে। আমি সশ্রদ্ধ চিত্তে তাঁদের অবদান স্মরণ করছি। বর্তমানে রাউজান আবার ফিরে পেয়েছে তার হারানো গৌরব। এখন রাউজানের শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন প্রশংসনীয়। অগ্রসর হচ্ছে শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে। জেগেছে নতুন সম্ভাবনা। অন্যদের কাছে রাউজান হয়ে উঠেছে অনুকরণীয়, রোল মডেল। আমি আশা করি, সাংবাদিকদের সত্যনিষ্ঠ লেখনীতে উঠে আসবে এ সাফল্যের সার্বিক চিত্র।
এম এ মালেক আরো বলেন -চট্টগ্রামের মানুষের জন্যই এমপি ফজলে করিম সাহেবের কাছে আমার অনুরোধ- চট্টগ্রাম থেকে আশেপাশের এলাকায় ট্রেনগুলো যদি সচল করতে পারেন তাহলে শহরের ৩০% লোক প্রতিদিন নিজ বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করে অফিস করতে পারবে। মানুষের অনেক খরচ সাশ্রয় হবে। শহরে মানুষের চাপ অনেক কমবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম রমিজউদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের কাজ জনপদের চাহিদা তুলে ধরা। রাউজানের এমপির চোখে পড়লেই তিনি কাজ করবেন। উনি রাউজানের অভূতপূর্ব উন্নতি করেছেন। সাংবাদিকদের জনসাধারণের কথা বলতে হবে। মানুষের চাহিদা তুলে ধরতে হবে। রাউজানের এমপি আমার শৈশবের বন্ধু।নিজের কাজের প্রতি তিনি অত্যন্ত নিবেদিত। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জনপদ রাউজান। অনেক মনীষী ও বিভিন্ন ধর্মের আধ্যাত্মিক সাধকের জন্য এই জনপদে। এটা সর্বজনবিদিত যে শিক্ষার দিক থেকে রাউজান বহুকাল পূর্ব থেকে উন্নত। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়নে ছিল অবহেলিত। কিন্তু বিগত প্রায় দেড় দশকে রাউজান সম্পূর্ণ বদলে গেছে। নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাউজান এখন দেশের মডেল উপজেলা। এ জন্য রাউজান থেকে নির্বাচিত সাংসদ রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর অবদান প্রশংসাযোগ্য। এখানে উল্লেখ্য, সাংবাদিকতার লক্ষ্য হচ্ছে জনকল্যাণ। আমার বিশ্বাস, রাউজান সাংবাদিক পরিষদ চট্টগ্রাম এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। পরিষদকে রাউজানের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের চিত্র বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি রাউজানের সমস্যা নিয়ে ভূমিকা রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাউজান সাংবাদিক পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী খান। তিনি বলেন, আমরা রাউজানের সব বিষয় তুলে ধরতে চাই। আমাদের আয়োজনে যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ।
বক্তব্য রাখেন রাউজান উপজেলার চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। চট্টগ্রাম -১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, আমি রাউজানেরই সন্তান। গহিরা স্কুলের ছাত্র ছিলাম। ৪২ বছর আগে চট্টগ্রামে এসে রাউজানের আরেক সূর্য সন্তান বীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে থেকে কাজ করার সৌভাগ্য পেয়েছি। আমি রাউজানের সন্তান হিসেবে সকলের দোয়া চাই। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা বলেন রাউজানের এমপি একজন সাংবাদিক বান্ধব নেতা। চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের কল্যাণে তিনি এগিয়ে আসবেন আশাকরি। সিইউজে সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রামকে শহর করার যে ভিশন ঘোষণা করেছেন সেক্ষেত্রে মডেল রাউজান। সিআইপি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সভাপতি ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, রাউজানকে সন্ত্রাসমুক্ত এক সুন্দর জনপদে পরিণত করেছেন এমপি ফজলে করিম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে রাউজান সাংবাদিক পরিষদ, চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, রাউজান সব সময় এগিয়ে। রাউজানে আমরা একজন অভিভাবককে পেয়েছি যিনি সবসময় রাউজানের উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মনজুর কাদের, সিইউজের যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক আল রাহমান এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোরশেদুল আলম শামীমকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কনফিডেন্স সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক, সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, সাবেক সিভিল সার্জন সরফরাজ খান চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, রাউজান পৌরসভার প্যানেল মেয়র বশির উদ্দিন খান, রাউজান সমিতি দুবাইর সভাপতি খোরশেদ জামান, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ নবী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অভিষেক ও সংবর্ধনা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী ও সদস্যসচিব সৈয়দ আলমগীর সবুজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী দেবাশীষ চৌধুরী দেবা , শিল্পী রাহিনাতুল জান্নাত কান্না
ও শিল্পী প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়া।