চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার অজ্ঞাত নামা নারীর পরিচয় ও ক্লুলেস হত্যা কাণ্ডের ৫ম দিনে ঘটনার মূল রহস্য উৎঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করল চাঁদপুর পিবিআই । এ বিষয়ে ৯ জুলাই রবিবার দুপুর ১২টায় পিবিআই চাঁদপুর কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন করেন পিবিআই চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তফা কামাল রাশেদ।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, লাশের সাথে একটি চিরকুঠ ও ২টি মোবাইল নম্বরের সূত্রধরে এ মামালার রহস্য উৎঘাটনে সফল হই। তিনি জানান, মতলব উত্তর থানার মামলা নং-৩ তারিখ- ৫ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড। আসামী অজ্ঞাতনামা। গত ইং ৪জুলাই’ ২৩খ্রিঃ তারিখ সকাল ৮টায় চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানাধীন বাগানবাড়ী ইউপিস্থ বাগানবাড়ী টু কালিরবাজার যাওয়ার পাকা রাস্তার নয়াকান্দি সাকিনে সালাউদ্দিনের বাড়ীর উত্তর পার্শ্বে পাকা রাস্তার ঢালুতে মৃত অজ্ঞাতনামা মহিলা বয়স অনুমান ২৮ এর মৃতদেহ পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে পিবিআই চাঁদপুর ছায়া তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশের পরিচয় সনাক্ত করে।
অজ্ঞাতনামা নারীর নাম পলি আক্তার (২৮), পিতা-তাজুল ইসলাম, মাতা ফাতেমা বেগম, সাং-শিবপুর (জাগিদার বাড়ী), নোয়ান্নাই, থানা-সুধারাম, জেলা-নোয়াখালী ।
তিনি আরও জানান পিবিআই চাঁদপুর টিম ঘটনার মূল রহস্য উৎঘাটনে ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। মৃতের বড় ভাই মোঃ ফরহাদ হোসেন সোহাগ (৩২) মতলব উত্তর থানায় হাজির হয়ে তার বোন পলি আক্তারের স্বামী মোহাম্মদ আলী প্রকাশ সাদ্দাম হোসেন ও তাহার সহযোগী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুত্রোক্ত মামলা দায়ের করে।
পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পিবিআই চাঁদপুরের দিকনির্দেশনায় পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শামীম আহাম্মদ এর নেতৃত্বে পিবিআই, চাঁদপুর জেলার ছায়া তদন্ত টিম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার সংঘটনকারী মূলহোতা আসামী হান্নান মুন্সি (৪৪),পিতা- আদম আলী মুন্সি, মাতা-আনোয়ারা বেগম সাং-শ্রীকান্তদি (মুন্সি বাড়ী), থানা-দাউদকান্দি, জেলা-কুমিল্লাকে ৯জুলাই’২৩ খ্রিঃ চট্টগ্রাম ইপিজেড থানাধীন ফ্রিপোর্ট ২নং মাইলের মাথা সংলগ্ন আসামীর ভাড়াবাসা হতে গ্রেফতার করে।
আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায় যে, চট্টগ্রামে গার্মেন্টসে কাজের সুবাদের তার সাথে পরিচয় হয় ও সম্পর্কে জরিয়ে পরে এবং নিজ বাড়িতে জমি নিয়ে বিরোধে চাচাতো ভাইদের ফাসাতে হত্যার পর লাশের পাশে চিরকুঠ রেখে যায়। ভিকটিম পলি আক্তারকে গত ১ জুলাই ২৩ খ্রিঃ উক্ত আসামী চট্টগ্রাম হতে কুমিল্লা দাউদকান্দি থানাধীন মলয় শ্রীচাউল মোহাম্মদপুর গ্রামে তাহার পরিচিত জনৈক রুবেল এর বাড়ীতে তাহার স্ত্রী পরিচয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে এসে আসামী হান্নান ও তাহার কথিত স্ত্রী পলি আক্তারসহ একদিন একরাত অবস্থান করার পর পলি আক্তারকে রুবেল এর বাড়ীতে রেখে গত ২ জুলাই ‘২৩ তারিখ সকাল ১১ টায় দাউদকান্দি তাহার নিজ বাড়ীতে চলে যায় । গত ২ জুলাই ২০২৩খ্রিঃ দিবাগত রাত অনুমান ২টায় ভিকটিম পলি আক্তার রুবেলের বাড়ির টিউবওয়েলে গেলে আকস্মিক তার গর্ভপাত ঘটে। ভিকটিম রুবেলের স্ত্রীকে তার শারীরিক অবস্থার কথা জানান।
রুবেলের স্ত্রী রুবেলকে বিষয়টি মোবাইলে অবগত করে। রুবেল তার ওস্তাদ হান্নানকে বিষয়টি জানায়। হান্নান তাৎক্ষণিকভাবে ওইদিন রাতেই রুবেলের বাড়িতে এসে তার স্ত্রীকে নিয়ে চলে যায়।
পরদিন ৩জুলাই’২০২৩ খ্রিঃ সারাদিন দাউদকান্দি ও তার আশপাশ এলাকায় গাড়ি চালিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটান। ওইদিনই দিবাগত রাত অনুমান ৩টায় ভিকটিমকে নিয়ে আসামী মতলব উত্তর থানাধীন সিকদার বাড়ির নিকটে একটি নির্জন স্থানে ভিকটিমের পরিধেয় কাপড়ের ব্যাগে রক্ষিত জামা-কাপড় দিয়ে গাড়িতে বসা অবস্থায় ভিকটিমের নাকে মুখে চাপ দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে ভিকটিমকে হত্যা করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মৃতদেহ নিজ গাড়িতে করে ঘটনাস্থলের রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
পুলিশ সুপার দৈনিক বাংলার অধিকার কে আরও অবগত করে বলেন আসামীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক দেখানো ও তার সনাক্ত মতে ঘটনাস্থলের পাশে প্রজেক্টের পুকুর হইতে ভিকটিমের ব্যাগে রক্ষিত কাপড় উদ্ধারপূর্বক আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। মামলা তদন্ত অব্যাহত আছে ও আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হবে