গল্পের পটভূমি –
(রেঁস্তোরায় বসা দুই জন আধুনিক মহিলার কথপোকথন। পাশের টেবিলে বসা একজন পরিশ্রমী জনৈক পুরুষ ব্যাক্তি চা সিঙ্গারা খাচ্ছেন এবং মহিলাদের সেই সব কথা গুলো শুনছেন। পরবর্তীতে পুরুষ ব্যাক্তটি একটু বিরক্তির সুরেই সেই সব কথা গুলোর যুক্তি খন্ডন করছেন।)
প্রথম মহিলা-
এই বেয়ারা দুটো চিকেন ফ্রাই দিয়ে যেও।
দ্বিতীয় মহিলা- পরে দুটো কফিও দিয়ে যেও।
প্রথম মহিলা- বোন, দেখছি তুমিতো
বেশ সুখের মধ্যেই আছ।
দ্বিতীয় মহিলা- আরে ধুর ছাঁই! যে পুরুষের সংসার করি,একবারে সেকেলে! খুবই বিরক্তিকর!
মনের মত করে চলতে পারি না। যে টাকা রোজগার করে, আজকাল ভিখারী যারা আছে তারাও তার চেয়ে বেশী রোজগার করে। এর সাথে সংসার করে আমার সোনার জীবনটাই শেষ!
দ্বিতীয় মহিলা- বলিস কি! শুনেছি সে নাকি ইঞ্জিনিয়ার?
( এমন সময় রেঁস্তোরার বেয়ারা চিকেন ফ্রাই ও কফি নিয়ে এলেন এবং তা খেতে খেতে তাদের পুনরায় কথা শুরু করলেন। পাশে বসা জনৈক পুরুষটি চা ও সিঙ্গারা খেতে খেতে তাদের কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনছেন)
শোনার পর পাশে বসা পুরুষটির
উত্তর –
এই যে ম্যাম, আপনাদের দুজনের কথা এতক্ষণ ধরে শুনলাম।এবার দয়া করে আমার একটু কথা অনুধাবন করুন!
একজন পুরুষের কান্না দেখেছেন কোনদিন ?
-দেখেননি।
একজন পুরুষের বুকের রক্ত ক্ষরণ দেখেছেন কোনদিন?
-দেখেননি।
যেই সংসারটির মধ্যে আপনি থাকছেন,যানেন -এই সংসারটির চাহিদা মিটাতে গিয়ে একজন পুরুষের কি করে তার জীবন উৎসর্গ করতে হয় প্রতিনিয়ত, তা ভেবে দেখেছেন কেনদিন?
– দেখেননি!
সংসারের সকল সদস্যদের জন্য খাওয়া দাওয়া, শিক্ষা দীক্ষার জন্য অর্থ জোগান দিতে গিয়ে কত রাত্র চিন্তায় ঘুমুতে পারেনি একজন পুরুষ, ভেবে দেখেছেন কোনদিন?
– দেখেননি কোন দিন!
তারপরে, ভবিষ্যতের জন্য জীবন পণ বাজি রেখে ধন সম্পদ সঞ্চয় করেও ঐ সম্পদের কোন কিছুরই মালিক ঐ পুরুষটি হতে পারে না!
যখন বৃদ্ধ বয়স আসে,তখন সন্তানের কাছে দশ টাকা চাইতে গেলেও অনেক কৈফিয়ৎ দিয়েই চাইতে হয়!
এটা কি একজন পুরুষের নিঃস্বার্থ ত্যাগ নয়? তা ভেবে দেখেছেন কোনদিন ?
– দেখেননি কোনদিন!
একজন স্বামী তার স্ত্রীর ভালোবাসা পাওয়া জন্য কত শত কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে প্রতিদিন,তা ভেবে দেখেছেন কোনদিন?
– তাও দেখেননি কোনদিন!
একজন পুরুষ তার নিজের জন্য কি এত কষ্ট করার দরকার আছে,বলুন?
-তাও ভাবেননি কোনদিন!
যদি তা নাই পারেন, তবে স্বামীর প্রতি একটু একাত্যতা দেখাতে ক্ষতি কি?
একটু ভালোবাসা দিয়ে,একটু শান্তনা দিতে ক্ষতি কি?
সংসারে এত এত অবহেলা, ঘৃণা,রক্ত চক্ষু, নিন্দা অপবাদ শুনেও বোবার মত থাকতে হয় প্রতিটা মূহুর্ত একজন পুরুষকে! যার ভার বইতে গিয়ে চোখের জল ফেলতে হয় নিরবে নিভৃতে!
যে আঘাতে রক্ত ক্ষরণ হয় প্রতিটা মূহুর্ত, তা কয় জন ভেবে দেখে,বলুন?
প্রত্যেক সংসারে যদি স্ত্রী তার স্বামীর দুঃখ বেদনা গুলোকে ভাগ করে নিতে পারতো, তবে কি আর ধন সম্পদ নিয়ে এত এত ভাগাভাগীর জন্য দ্বন্দ্ব ও বিচ্ছেদ তৈরী হতো?
-হতো না!
আর দ্বিতীয় বিবাহের কথাও ভাবা লাগতো।
পরিশেষে এই টুকুই বলে যাই- একজন স্ত্রী যদি স্বামীর দুঃখ বেদনা গুলোকে ভাগ করে নিতে পারে, তবে হয়তো এই পৃথিবীটাই হতে পারে একটি সুখময় স্বর্গরাজ্য!
(এই কথা বলার পর,পুরুষ লোকটি তার কাঁধের গামছা দিয়ে নিজের কপাল মুছতে মুছতে রেঁস্তোরা থেকে বেড়িয়ে গেলেন।অতপর সেই মহিলা দুজন পুরুষটির দিকে ফেল ফেল করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।)