মতলব উত্তর প্রতিনিধি:
তীব্র খরায় চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ৩-৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান রোপনে বাধাগ্রস্থ কৃষক।
খরায় কেড়ে নিয়েছে কৃষকের মুখের হাসি। খরার কারণে ফসল উৎপাদন কমার আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।খরার কারণে আউশের আবাদ শুরু করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। কৃষি উদ্যোক্তা পরিষদ মতলব উত্তর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মো: শরীফুল ইসলাম বলেন, ফসল উৎপাদনের সঙ্গে রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা,পানি—সবকিছুই জড়িত। কিন্তু আবহাওয়ার তারতম্য ঘটায় এর প্রভাব পড়বে ফসল উৎপাদনের ওপর। আউশ আবাদের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে অথচ বৃষ্টি হচ্ছে না। যত দেরি হবে, ততই ফসল উৎপাদন কম হবে বলে মনে করছেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতাধীন প্রায় ৩-৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ করা হয়। আউশ আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছয় হাজার কৃষকের মাঝে ইতিমধ্যে বীজ ও সার প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকরা বীজতলা রেডি করেছেন চারার বয়স পর্যাপ্ত হয়ে গেছে।কিন্তু তীব্র খরার কারণে খেতেই এসব বীজতলার ধানের চারা পরিপক্ক হয়ে যাচ্ছে। আবার তীব্র খরায় পানি সংকটের জন্য অনেকে বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। ওটারচর গ্রামের কৃষক সাহেবআলী সরকার জানান, তিনি ২০০ শতাংশ জমিতে আউশ আবাদ করবেন। বীজতলা তৈরি হয়েছে । কিন্তু বৃষ্টির অভাবে খেত শুকিয়ে যাওয়ায় ধান রোপণ করতে পারছেন না। ওটারচর কৃষি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি আবদুল মালেক সরকার বলেন, সমিতির আওতাধীন ৫০ বিঘা জমিতে আউশ চাষ করার জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে ধানের চারা রোপন এর সময় পার হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির অপেক্ষায় দিন গুনছেন কৃষকরা। আকাশ মেঘলা হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি না হওয়ার ফলে তাদের এই অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে না। বদরপুর এলাকার কৃষক মোঃ সুজন আহমেদ জানান, খরায় তাঁর খেতের পাশের খাল শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে এখনো তিনি বীজতলা করতে পারেননি। কীভাবে আউশের আবাদ করবেন, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
এ ব্যাপারে কৃষকদের পক্ষে কৃষি উদ্যোক্তা পরিষদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও সেচ ফেডারেশন মিলে নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর তিনটি লিখিত আবেদন জমা দেন যেন মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে আউশে সেচ কার্যক্রম চালু রেখে কৃষকদের এ দুর্ভোগ লাঘবের স্বার্থে অস্থায়ীভাবে পানি সেচের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু কোন ফল পাওয়া যায় নি।
নির্বাহী প্রকৌশলী জানায়, আমরা আবেদন পেয়ে ইতিমধ্যে সেচ নালা গুলো পানি প্রবাহের উপযোগী করে তোলার জন্য কাজের নোটসীড উর্ধতন কতৃপক্ষের বরাবরে পাঠিয়েছি,অনুমতি পেলে কাজ করে পানি প্রবাহ চালু করবো।
তবে স্থানীয় কৃষকরা এ সমস্যা সমাধানের জন্য জোর দাবি জানান। তারা বলেন প্রতি বছর আমরা এ ধরনের পানির সংকট এর সম্মুখীন হই। যদি মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প কৃষকদের তথা দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে সারাবছর চাহিদা অনুযায়ী জরুরী পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখে। তাহলে মতলব উত্তর তথা মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের উৎপাদিত শস্য দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রাখবে।