অনির্বাণ লাইব্রেরির কার্যকরী পরিষদের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সকলের প্রিয় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক কালিদাস চন্দ্র চন্দ্র সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে।১৬ই জুন ২০২৩ ভোররাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
অধ্যাপক কালিদাস চন্দ্র চন্দ্র এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন।তিনি বহুবার পাইকগাছা উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মর্যাদা লাভ করেছেন।অধ্যাপক কালিদাস চন্দ্র চন্দ্র স্যার ১৯৫০ সালের ২০ শে নভেম্বর পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নের মাহমুদকাটি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শ্রীযুক্ত বাবু সুধীর কৃষ্ণ চন্দ্র ও মাতা শ্রীমতী সরলা বালা চন্দ্র।তিনি স্থানীয় হরিদাশকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা এবং স্হানীয় হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির হতে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।
তিনি ১৯৬৬ সালে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির হতে এসএসসি,১৯৬৮ সালে সাতক্ষীরা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭১ সালে সরকারি স্কলারশীপ নিয়ে সরকারি ব্রজলাল কলেজ হতে বিএস-সি(সম্মান)পাশ করেন। উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় গ্রহণ করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতি রেজিস্ট্রেশন করেন এবং ক্যাম্প কমান্ডার জনাব খায়বার হোসেন পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট মহাকুমার টেট্ রা মুক্তি ফৌজের রিসিপশন ক্যাম্পে অফিশিয়াল পদে কর্মরত হন।
মুক্তিযুদ্ধের অবসানের পর তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত বিএস-সি (সম্মান) পরীক্ষা- ১৯৭১ এ অংশগ্রহণ করেন এবং কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।পরবর্তীতে তিনি আবারও সরকারি স্কলারশীপ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে পদার্থ বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে এম এস-সি সম্পন্ন করেন।১৯৭৪ সাল থেকে তিনি পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে দীর্ঘ ৩৫ বৎসর সুনামের সাথে অধ্যাপনা করেন এবং২০১০ সালে অবসর গ্রহণ করেন।উল্লেখ্য তিনি অধ্যাপনা জীবনে প্রায় ৩০ বৎসর যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষক এবং ৩ বৎসর প্রধান পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৯০ সালে জয়দেব কুমার ভদ্রের নেতৃত্বে মানিক ভদ্র সহ গ্রামের এক দল মেধাবী ছাত্র একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে তাহার কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করে। তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাহমুদকাটি হরিসভা প্রাঙ্গণে ১৯৯০ সালের ১০ই ডিসেম্বর একটি সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়।অধ্যাপক কালিদাস চন্দ্র চন্দ্র এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।বস্তুত এই সভার মাধ্যমে অনির্বাণ লাইব্রেরির আত্মপ্রকাশ ঘটে।তিনি লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা সভাপতি হিসাবে ১৯৯০ সাল হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১১বৎসর দায়িত্ব পালন করেন।তিনি লাইব্রেরির গঠনতন্ত্র রচনার নেতৃত্ব দেন।২০২০ সাল ১লা জানুয়ারি হতে তিনি পুনরায় কার্যকরী পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিদায় নেন।
এসময় অনির্বাণ আনুষ্ঠানিক ভাবে স্যারকে বিদায় জানায়।এবং গুনী শিক্ষকের সম্মাননা প্রদান ও অনির্বাণের আধুনিক মিলনায়তনের নামকরণ অধ্যাপক কালিদাস চন্দ্র চন্দ্র স্যারের নামে করা হয়।১৯৭৮ সালে তিনি মাহমুদকাটি গ্রামে বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ী জয়দেব দত্তের কন্যা ভারতী দত্ত কে বিবাহ করেন।তিনি চার কন্যার জনক।কন্যা ও জামাতারা হলেন:১. ডাঃ মহুয়া চন্দ্র, MBBS,BCS( Health)FCPS( Pediatrics),FCPS (Child neurology)ইনি বর্তমান সলিমুল্লাহ মেডিকেলে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।ডাঃ প্রভাত সরকার MBBS, BCS (Health),MCPS( Medicines), MD (Neurology)ইনি বর্তমানে বাংলাদেশ নিউরো সায়েন্সস এন্ড হসপিটাল এ সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।২. ডাঃ পম্পা চন্দ্র,MBBS,BCS(Health)FCPS (Darmatology & venerology)ইনি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন। ডাঃ মিলন চৌধুরী MBBS,BCS(Health) FCPS(ENT)বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হেডনেক সার্জন হিসাবে কর্মরত আছেন।
৩.মৌমিতা চন্দ্র,BSc (Ag Eng ) MS(Farm power & Machinery) Diploma(Banking) বর্তমানে সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এ প্রিন্সিপাল অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন।ডাঃ কল্যাণাশীষ সরদার MBBS,BCS(Health)FCPS (Medicine)ইনি বর্তমানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে কনসালটেন্ট হিসাবে কর্মরত আছেন।৪.কুসুম কেয়া চন্দ্র,২০১৯ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও স্কলারশীপ অর্জন করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত আছে।অনির্বাণ লাইব্রেরির সম্মানিত পাঠক,সদস্য,স্বেচ্ছাসেবক ও সংস্কৃতি কর্মীদের মাঝে থেকে তিনি অনাবিল আনন্দে অবশিষ্ট সময়টা অতিবাহিত করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু সময়টা খুবই সংক্ষিপ্ত।