পটুয়াখালী জেলা বাউফল উপজেলা সেই আলোচিত মরণফাঁদ নামক সেবা ক্লিনিকের চরম অনিয়ম ও ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নিহত প্রসূতি আখিনুর বেগম এর বাবা জালাল প্যাদা ও তার পরিবার কর্তৃপক্ষের কাছে মেয়ের লাশ ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে খুশি বনে গেছেন। এতে তাদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসব আমেজ।
যদিও প্রথম দিকে মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সহ ডাক্তার ও নার্সের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করার উদ্দেশ্যে লিখিত অভিযোগ দেন বাবা। এদিকে অলৌকিক শক্তির বলে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রসূতি মা নিহতের একদিন পরই গত মঙ্গলবার (১৬ই মে) পুনরায় ব্যবসার উদ্দেশ্যে খুলে বসেন মরণফাঁদ নামক সেবা ক্লিনিক। সেই সংবাদ প্রশাসনের নজরে আসলে ওইদিনই দুপুরের দিকে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা সহ অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করে দেন।
এদিকে উপায়ান্ত না পেয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ নিহতের বাবা জালাল প্যাদা ও তার পরিবারের লোকজন কে নিয়ে গোপন বৈঠক শেষে গত বৃহস্পতিবার (১৮ই মে) সন্ধ্যার পরে স্বামীর সহিস্বাক্ষর নিয়ে ৫ লক্ষ টাকা বুঝে নেন তারা। তবে প্রথমে নিহতের স্বামী ও শ্বশুর বিষয়টি জানেননা এবং ওই টাকা যদি নবজাতকের নামে ব্যাংকে ডিপোজিট করে না রাখা হয় তাহলে পুনরায় হত্যা মামলা দায়ের করার হুমকি দেয় স্বামী ও শ্বশুর।
পরে সপ্তাহ না পেরোতেই গত বুধবার (২৪শে মে) জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক একটি ৪ সদস্যের টিম তদন্তে এসে প্রথমে সেবা ক্লিনিকে সার্চ চালান। সেসময় তারা সিজার অপারেশনের কাজে ব্যবহার করতে ডেট ওভার ৫টি ইনজেকশন সহ একাধিক ঔষধ ও ফ্রিজে রাখা পচা মাছ মাংস উদ্ধার করেন। পরে তদন্তের স্বার্থে নিহতের বাবা – মা ও স্বামী – শ্বশুর, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সহ ডাক্তার নার্সদের ডাকা হয়। সেখানে সবাই উপস্থিত হলেও ডাক্তার অনুপস্থিত থাকেন।
সে ব্যাপারে তদন্ত শেষে টিম প্রধান ডাক্তার কেননং জানান, সেবা ক্লিনিক ও ডাক্তারের অনিয়ম ও ভুল চিকিৎসার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর নিহতের বাবা মা জানিয়েছেন তাদের নাকি কোনও অভিযোগ নেই। তবে স্বামী ও শ্বশুর এব্যাপারে বিচার দাবি করতে পুনরায় হত্যা মামলা দায়ের করবেন জানিয়েছেন। তবে তদন্ত চলমান রয়েছে শেষে সিভিল সার্জন কর্তৃক উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে একথা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কানে গেলে তারা নিহতের বাবা ও পরিবারের লোকজনকে নিহতের স্বামী ও শ্বশুরের সাথে দেওয়া টাকা নিয়ে মীমাংসা করতে বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার (২৮শে মে) নিহতের রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া মিলাদ করে বাবা জালাল প্যাদা তার স্থানীয় মেম্বারকে ডেকে নিহতের স্বামী ও শ্বশুর কে নিয়ে ওই টাকা ভাগবাটোয়ারা করে সবাই মিশে যান।
এবিষয়ে নাম না বলা শর্তে একাধিক স্বজন ও আশপাশের লোকজন জানান, আহ্ আফসোস। মেয়ে হত্যার বিচার না নিয়ে ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়ে গেল। এটা কেমন বাবা মা আর কেমন পরিবার। এই ক্লিনিক একেরপর এভাবে ঘটনা ঘটিয়ে টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে বহাল থাকছেন। ঘৃনা হয় ওই বাবা মা ও পরিবারের প্রতি।
উল্লেখ্য: উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাহাদুর বয়াতির স্ত্রী ও দাসপাড়া ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ জালাল প্যাদার মেয়ে আখিনুরকে প্রসবজনিত কারনে গত রোববার (১৪ই মে) বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত নার্স নরমাল ডেলিভারী করার উদ্যোগ নেন। এরই মধ্যে এক দালাল ও হাসপাতালের নার্স আখিনুর ও তার স্বজনকে ভয় দেখিয়ে দ্রুত সেবা ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করার নির্দেশ দেন। ওই দিন সন্ধ্যার পর সেবা ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে ডা. সোলায়মান নামের এক চিকিৎসক আখিনুরের সিজার করে একটি কন্যা সন্তানের জম্ম দেন। দীর্ঘক্ষণ পরেও আখিনুরের জ্ঞান ফিরে না আসায় অপারেশন থিয়েটারে থাকা টিম নিশ্চিত হন তার মৃত্যু হয়েছে। পরে তড়িঘড়ি করে সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অখিনুরের লাশ উন্নত চিকিৎসার নামে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। এরই ফাঁকে চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দেন। পরে আখিনুরকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা স্বজনদের জানান অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।