চরভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলায় দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে চরভগবতীপুরের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে চরভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আশপাশের চারটি গ্রামের নদী-তীরবর্তী বিভিন্ন স্থাপনা।
বাড়ছে পানি, ভাঙছে নদী-তীরবর্তী এলাকা। কুড়িগ্রাম জেলার ১৬টি নদীতে ভাঙনের সুর বাজতে শুরু করেছে। বসতভিটা, ফসলি জমি নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ প্রধান প্রধান কয়েকটি নদ-নদীর তীরবর্তী মানুষ। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও রক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরভগবতীপুরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
ইতোমধ্যে চরভগবতীপুরের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে চরভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আশপাশের চারটি গ্রামের নদী-তীরবর্তী বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, ‘এখনও বন্যা দেখা দেয়নি। তার আগেই নদীর পানি বৃদ্ধিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আসন্ন বন্যায় নদী ভাঙন ভয়ংকর হয়ে উঠবে। সে সময় এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। এ অবস্থায় জরুরিভিত্তিতে নদী শাসনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে আমার দুই বিঘা আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। এখনও বন্যা আসে নাই। তাতেই ভাঙনের যে অবস্থা, জানি না এইবার কপালে কী দুঃখ আছে!’
চরভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ব্রহ্মপুত্রে অব্যাহত ভাঙন চলছে। অনেক জমি ও বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকটিও ভাঙনের মুখে। রোববার ক্লিনিকটির স্থাপনা নিলামে তোলা হয়েছিল। সরকারি শিডিউল অনুযায়ী মূল্য না ওঠায় বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
‘আজ যে অবস্থা দেখছি তাতে যেকোনো মুহূর্তে ক্লিনিকটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা ক্লিনিকের ভেতরের সব আসবাবপত্র ও ওষুধ অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়েছি। অস্থায়ীভাবে সেখানে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না। আবার কবে ওই চরে ক্লিনিক স্থাপন হবে জানি না। তবে অস্থায়ীভাবে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়া হবে।’
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, ‘নদী ভাঙনে চরভগবতীপুরে প্রায় ৩৬টি বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা বসতভিটা হারানো পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করছি। এই তালিকা দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মাণ করা একটি মাধ্যমিক স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একটিমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে, সেটাও ভাঙনের মুখে। ক্লিনিকটি না থাকলে এই অঞ্চলে আর কবে মানুষজন স্বাস্থ্যসেবা পাবে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়তে শুরু করেছ। তবে মাত্রা কম। চরাঞ্চলে কিছুটা ভাঙন রয়েছে। ভগবতীপুরে চরের ভাঙন রোধে অস্থায়ী কার্যক্রমের জন্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।’