সাম্প্রতিক নতুন প্রতারণায় বেশ কয়েকটি ট্রাভেলস এজেন্সি এর মধ্যে ব্রাদার্স-ট্রাভেলস- ইন্টারন্যাশনাল একটি। বিদেশগামী যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। অগ্রিম টিকিট কেটে দেয়ার সংশ্লিষ্ট যাত্রীর টিকিটের অনুকূলে থাকা পুরো টাকা রিফান্ড করে নিচ্ছে অসাধু ট্রাভেলস এজেন্সিটি। বিষয়টি আগে থেকে জানার সুযোগ থাকছে না যাত্রীদের। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অনেক আশা করে বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীরা অবগত হচ্ছেন প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি। তাও প্রথম দফায় নয়, দ্বিতীয় দফায় প্রতারিত হওয়ার পর তারা জানতে পারছেন আসল কাহিনী। তখন তাদের মাথায় ভেঙে পড়ছে আকাশ।
ঠিক তেমনটি ঘটেছে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ওটারচর গ্রামের সিংগাপুর প্রবাসী মো: রবিউল সরকার এর সাথে। ব্রাদার্স- ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল এর ফেসবুক পেজে ১৫% ডিসকাউন্ট দেখে রবিউল পেইজে দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপে নক দেন। হোয়াটসঅ্যাপে কথা পাকাপাকির পরে ২৬ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ৩ মে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ টু সিঙ্গাপুর এর টিকেট সরবরাহ করেন। প্রতারক তাকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি pdf টিকেটের কপি পাঠান। পরে প্রতারক টাকা পরিশোধের জন্য একটি ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার পাঠান। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের একাউন্টের হিসাব নাম:SHAHANAZ AKTER হিসাব নম্বর: 20501110207238314 এই নাম্বারে রবিউল স্ত্রী মর্জিনা বেগমের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের একাউন্ট থেকে ২৬০০০ টাকা পাঠান। অতঃপর রবিউল কম্পিউটার দোকান থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করে টিকিট সরবরাহ করেন। টিকেট সরবরাহের পর লক্ষ্য করেন তাকে সিঙ্গাপুর টু ঢাকা টিকেট প্রদান করা হয়েছে। পরে তিনি বিষয়টি বললে আবার পুনরায় ঢাকা টু সিঙ্গাপুর টিকেট প্রদান করা হয়। আশার আলো নিয়ে রবিউল ২২ মে রাত দশটার অপেক্ষায় দিনগুনে। কিন্তু ২২ মে সিঙ্গাপুর যাত্রী রবিউল বিমানবন্দরে এসে জানতে পারেন তার টিকিটটি ভুয়া। টিকিটের টাকা রিফান্ড করে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি রবিউল জানার পর তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ব্রাদার্স ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল এর সাথে যোগাযোগ করলে সে বলে আমি দেখছি অতঃপর তাকে ব্লক করে দেওয়া হয়। তিনি নিরুপায় হয়ে পূনরায় গ্রামের বাড়ি মতলবে চলে আসেন। পরে অন্য ট্রাভেল থেকে টিকেট সরবরাহ করে গতকাল রাত ১০:৩০ এর ফ্লাইটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে সিংগাপুরে পৌছান। এদিকে তিনি বিষয়টি দৈনিক বাংলার অধিকারের মতলব প্রতিনিধিকে জানালে তিনি ব্রাদারস ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল এর হোয়াটসঅ্যাপ (01811274651) নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন দু একটি ভুল হতে পারে ধৈর্য ধরুন, পরে তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য পুনরায় একাউন্ট নাম্বার নেন। কিন্তু সময় গড়িয়ে যায় টাকা আর পাঠান নি এবং কল করলে তা কেটে দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়, আসন্ন হজকে ঘিরে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ই-টিকিটিংয়ের ক্ষেত্রে বিছিয়েছে প্রতারণার জাল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ নিয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলাও হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে ডিবির উপকমিশনার (ডিসি) বলেন, আমরা বেশকিছু ট্রাভেলিং অ্যান্ড ট্যুর এজেন্সির খবর পাচ্ছি। যারা ব্যক্তি পর্যায়ে বা সাব-এজেন্টের কাছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেন। নির্দিষ্ট টাকা দেয়ার পর তারা যাত্রীদের কাছে ই-টিকিট সরবরাহ করেন। টিকিটে নাম-ঠিকানা সবই সঠিক থাকে। ওই টিকিট পাওয়ার পর যাত্রী নিশ্চিত হয়ে টিকিটটি পাসপোর্টের সঙ্গে রেখে দেন। নির্দিষ্ট দিনে লাগেজ নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। বিমানবন্দরে গিয়ে বোর্ডিং পাস নেয়ার পর সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, আপনার বুকিং সঠিক ছিল। কিন্তু বুকিং দেয়ার এক বা দুইদিন পর সমুদয় টাকা রিফান্ড করা হয়েছে। তাই এই টিকিট দিয়ে আর ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। সব ঘটনাতেই যেন যাত্রীদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তাদের কানেক্টিং ফ্লাইটগুলো মিস হয়।
ডিসি আরো বলেন, যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের কেউ কাজের উদ্দেশ্য, কেউ চিকিৎসার জন্য এবং কেউ জরুরি মিটিংয়ের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। কেউ পড়াশোনার জন্য বা নিয়মিত চাকরিতে যোগদানের জন্য এয়ার টিকিট কিনেছিলেন। নির্ধারিত দিনে ফের বিমানবন্দরে গেলে সেই টিকিটটি ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরে আর ওই টিকিট এজেন্সিদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন। এমনকি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিস বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে গেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এটা একটি অভিনব প্রতারণা। আমরা আশঙ্কা করছি, আসন্ন হজ মৌসুমে অনেক এয়ারলাইন্স যাতায়াত করবে। টিকিটের জন্য মানুষ হাহাকার করবে। ওই সময় এসব প্রতারক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে। তখন একটি বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এ বিষয়টি সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এজেন্সিগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, এই এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যেসব কর্তৃপক্ষ কাজ করবে তাদের সচেতন হওয়া উচিত। যথাযথ কর্তৃপক্ষ সচেতন হলে সাধারণ মানুষ প্রতারণার কাছ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাবে। কর্তৃপক্ষ প্রো-অ্যাকটিভ কাজ করলে প্রতারকদের সমূলে উৎপাটন করা না গেলেও প্রতারকদের লোভ কিছুটা সংবরণ করানো যাবে। তিনি আরো বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। দেখি বিদেশগামী যাত্রীদের আমরা কতটুকু স্বস্তি দিতে পারি।