রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের উত্তর চন্দনপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অন্য প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি ও দুইজন সহকারী শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (২২ মে ২০২৩) দুপুর ১২ টার দিকে সরেজমিনে গেলে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে উত্তর চন্দনপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আমরা যেয়ে দেখি স্কুল খোলা কিন্তু প্রধান শিক্ষক স্কুলে নেই। প্রধান শিক্ষক সপ্তাহে তিনদিন স্কুলে ক্লাস নেয়। বাকি দুই দিন স্কুলে আসেন না। সরকারি প্রধান শিক্ষক হয়েও সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আবু বক্কর সিদ্দিক তার নিজ এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে বেসরকারি ভাবে সালেহিয়া হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও লিল্লাহ্ বোর্ডিং নামের প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৪ সাল থেকে পরিচালনা করে আসছেন। সেই প্রতিষ্ঠানে তিনি গভর্নিং বডির সভাপতি। এরই পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে চন্দনপাট ইউনিয়নের কাজির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুবক্কর সিদ্দিক নিজেই সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে নিজের খেয়াল-খুশি মত করে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। এদিকে প্রধান শিক্ষকের আশ্রয়ে- প্রশ্রয়ে স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও লুৎফর রহমান অবৈধভাবে ভূয়া সনদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে সরকারকে ফাঁকি দিয়ে সরকারি বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে।
এদিকে সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান জানান, তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে উত্তর চন্দনপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এসএসসি পাশে সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করে। স্কুলটি ২০১৩ সালে সরকারিভুক্ত হয়। তিনি শিক্ষক থেকে সহকারী শিক্ষক পদে উন্নতি করার জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। সেই এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করেন। পাশ করার জন্য উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের হুমায়ন কবির লেবুর কাছে টাকা দেন। তিনি তাকে পরীক্ষায় পাশ করে দিবে বলে টাকা নিয়ে পরবর্তীতে হুমায়ন তাকে এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেন।
লুৎফর রহমানকে সহঃ শিক্ষক আব্দুর রশিদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমরা একই সঙ্গে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেই। আবার একসঙ্গেই ফেল করি। আমরা দুজনেই পাশের জন্য হুমায়ন কবির লেবুকে পাশ করার জন্য টাকা দেই। লেবু আমাদেরকে এইচএসসি পাশের সার্টিফিকেট দেন।
সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য উত্তর চন্দনপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিককে মুঠো ফোনে দিলে তিনি রিসিভ করে বলেন, আমি এখন স্কুলে যেতে পারবো না। আমি মাদ্রাসায় আছি আপনারা এখানে আসেন কি বক্তব্য লাগবে আমি দিচ্ছি। পরবর্তীতে আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা মাদ্রাসায় গেলে দেখি তিনি মাদ্রাসার তালা মেরে চলে গেছেন। পরে বারংবার মুঠোফোনে ফোন দিলে আর রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক ও সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও লুৎফর রহমান অভিযোগ পাইলাম। আমাদের কোন শিক্ষক অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নর বডির সদস্য বা সভাপতি হতে পারেন না। আমি ইতিমধ্যে জেনেছি যে আবু বক্কর সিদ্দিক একটি মাদ্রাসার পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি। এটি ওনার অসৎ আচরণের পর্যায়ভুক্ত অপরাধ। এটা তদন্ত করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব। এবং সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও লুৎফর রহমান এদের সার্টিফিকেট সংক্রান্ত বিষয় যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে দ্রুত পদক্ষেপ নিবো।##