চাঁদপুর সদরে একটি নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসনে মা বসে তার মেয়ের ভুল নাচের পরও তাকেই প্রথম ঘোষণা করায় অন্যান্য প্রতিযোগীদের হয়ে এক প্রতিযেগীর অভিভাবক ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি ওই বিভাগের নৃত্য প্রতিযোগিতা নিরপেক্ষ বিচারক দিয়ে পুনরায় নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
১৯ মে শুক্রবার দুপুরে ওই অভিযোগের কপি এ প্রতিবেদকের হাতে আসে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে গত ১৩ মে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে ‘খ’ বিভাগে সদর উপজেলা পর্যায়ে গণি উচ্চ বিদ্যালয়ে নৃত্য প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে নৃত্য বিষয়ে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য প্রশিক্ষক সোমা দত্ত। আর এতেই ঘটে যত বিপত্তি।
অভিযোগ রয়েছে, সোমা দত্ত ওই প্রতিযোগিতায় নিজের মেয়ে কুহুকে ভুল নাচের পরও ২টি স্থানে প্রথম স্থান দিয়ে জেলা পর্যায়ে নাচের সুযোগ দিয়েছেন। অতছ সেখানে রাত্রী রানী কর্মকারের মতো জাতীয় পর্যায়ে পুরুষ্কারপ্রাপ্ত নৃত্য প্রতিযোগীরা অংশ নিলেও সোমা দত্ত স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাদের বাদ দিয়েছেন। এমনকি ঐদিন সোমা দত্ত নিজের সাথে রূপা নামে আরও এক নারীকে বিচারকের আসনে বিচারকাজ পরিচালনা করেন। রূপা নামে ওই নারী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাই নন এমনকি তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও কোন নাচের শিক্ষিকা নন।
এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়া প্রতিযোগী রাত্রী কর্মকারের মা মেরী কর্মকার বলেন, আমার মেয়ে রাত্রী কর্মকার জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট নৃত্য শিল্পী হয়েছে। অতছ এখানে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কারনে আমার মেয়ের সাথে অন্যায় হয়েছে। বিষয়টি সকল প্রতিযোগীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রীয়া সৃষ্টি করায় অনেক প্রতিযোগী ওইদিন ওই প্রতিযোগিতায় অংশও নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, কুহু নামে যে মেয়েটিকে ২টি স্থানে প্রথম দেখিয়ে জেলা পর্যায়ে ১ম দেয়া হলো তা সম্পূর্ণ অন্যায়। কেননা ওই দিন কুহুর ড্রেস কোড ভুল ছিলো। তাছাড়া সে ঘুঙ্গুরের ওপর খাড়ু পরে থাকায় নাচার এক পর্যায়ে তার এক পায়ের ঘুঙ্গুর সবার সামনে খুলে গেছে যা সম্পূর্ণ ভুল। এছাড়াও কুহুর শাড়ী পরার পরও শরীরের অংশ বিশেষ প্রকাশ্যে দেখা গেছে। যা নৃত্যের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভুল। যেহেতু জেলা পর্যায়ে নৃত্য প্রতিযোগিতা হওয়ার এখনও সময় রয়েছে তাই আমি ওই বিভাগের নৃত্য প্রতিযোগিতা নিরপেক্ষ বিচারক দিয়ে পুনরায় নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে সোমা দত্ত বলেন, পূর্ব থেকেই এই ধরনের প্রতিযোগিতায় আমাকে বিচারকের দায়িত্ব প্রশাসন থেকে দেয়া হয়। তাই আমি বিচারকাজ পরিচালনা করেছি। তবে আমার সাথে আরও বিচারকরাও ছিলেন। একটি ইভেন্টে কুহু বাদে অন্য প্রতিযোগিরা ছিলো না বলে ওর নামটা এমনিতেই ১ম স্থানে চলে আসছে। আর অন্যটিতে অন্যান্য বিচারকদের নাম্বারের পর আমি নাম্বারিং করেছি।এসময় তিনি কুহুর নৃত্যে কোন ভুল ছিলোনা আখ্যায়িত করে অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা দাবী করেন।
রূপা নামের আরেক বিচারক বলেন, আমি নিজে থেকে বিচারক হতে চাইনি। ওখান থেকে সোমা দি বলায় আমি বিচারক হয়েছি। আমি ত নৃত্যের সাথে পরিচিত না। তবে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতায় প্রাথমিকের কোন শিক্ষক বিচারক হিসেবে থাকতে পারে কিনা আমার এই নিয়ম টা জানা নেই। বিষয়টা বুজতে পেরে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাদের ৩ জন বিচারক থাকার কথা থাকলেও ওখানে উপস্থিত ছিলাম আমরা দুজনই। পরে ৩য় বিচারক আসছে কিনা বিষয়টা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের নৃত্য পরামর্শক স্বপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়ের অধ্যক্ষ অনিমা সেন চৌধুরী বলেন, নাচের ক্ষেত্রে ঘুঙ্গুরই প্রধান। কেননা গানের যে তালে প্রতিযোগী নাচবে ঘুঙ্গুর সে তালে কথা বলবে। অতএব ঘুঙ্গুর যদি খুলে যায় তাহলে ওই প্রতিযোগী ডিসকলিফাইড। আর শাড়ী পড়ার পরেও যদি শরীরের অংশ বিশেষ দেখা যায় আর সেটা যদি বাছাই পর্ব হয়। তাহলেও সে নাম্বার কম পায়। এক্ষেত্রে অপর যে প্রতিযোগী আছে সে আগে সুযোগ পাবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর ইউএনও সানজিদা শাহনাজকে একাধিকবার কল করলেও কল রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।