বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব মিলন খান। অনেকগুনে গুনান্বিত তেজী এক মানুষ। তিনি একাধারে কবি, গীতিকবি, কৃষিবিদ। যেকোনো অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরও মিলন খান। আজ (৩১ মার্চ) তার জন্মদিন। জীবনের আগমনী দিনটিতে পরিবার, প্রিয় বন্ধু-স্বজনদের ভালোবাসায় ভাসছেন তিনি।
মিলন খান জানান, ‘সবাই ভালোবাসা জানাচ্ছেন, দোয়া করছেন এটাই জীবনের পরম প্রাপ্তি। খুব সাদামাটা আয়োজনে পারিবারিকভাবে জন্মদিন পালন করবো।’
মিলন খানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর জেলায়। একাডেমিক পড়াশোনা, মেধাবী-কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে ডিগ্রী অর্জন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক স্বনামধন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরবর্তীতে পেশাগত জীবন শুরু হয় প্রভাষক হিসেবে নিজের প্রাণের শহরে। তারপর মহা-ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন এটিএন মিউজিকে। ১৯৮৭ সালে প্রথম গান লিখেছেন। নাম ‘ময়না’। গেয়েছেন ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু এবং ঐ গান আইয়ুব বাচ্চু’র ক্যারিয়ারে প্রথম সুপার হিট গান। তারপর দেশ বরেণ্য প্রায় সব শিল্পীর জন্য মিলন খান লিখেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
তার ভাষ্যমতে, সহস্রাধিক গানের রচয়িতা তিনি। যা- অডিও অঙ্গনে, রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে ইতোমধ্যে দেশের স্বনামধন্য, জনপ্রিয় শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হয়েছে, হয়েছে সমাদৃতও।পাশাপাশি সৃজনশীল ব্যক্তি মিলন খান শতাধিক কৃষিভিত্তিক গানের ডকুমেন্টারি ও কৃষি সেক্টরে মিউজিক্যাল মুভি নির্মাণ করেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
দেশের প্রায় সকল খ্যাতনামা ও নবীনদের সাথে কাজ করেছেন মিলন খান। তার লেখা উল্লেখযোগ্য কিছু গান মিতালী মূখার্জীর কণ্ঠে ‘সেই যে তুমি চলে গেলে’, আইয়ুব বাচ্চু-শাকিলা জাফরের দ্বৈতকণ্ঠে ‘ঘড়ির কাঁটা থেমে যাক’, তপন চৌধুরীর কণ্ঠে ‘পাথর কালো রাত’, শুভ্রদেবের কণ্ঠে ‘এই সেই বুকের জমিন’, ডলি শায়ন্তনীর কণ্ঠে ‘নিতাইগঞ্জে জমছে মেলা’, সৈয়দ আব্দুল হাদীর কণ্ঠে ‘বড় কঠিন এ দুনিয়া’, রবি চৌধুরীর কণ্ঠে ‘সাদা কাফনে আমাকে জড়াতে পারবে’, এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে ‘ভুলে যাও বন্ধু’, আসিফ আকবরের কণ্ঠে ‘আমার স্বপ্নের নায়িকা তুমি’, মনির খানের কণ্ঠে ‘গতকাল ও জানতাম তুমি শুধু আমার’, এসডি রুবেলের কণ্ঠে ‘ফুলে ফুলে সাজিয়ে দিও আমার চতুর্দোলা’ ইত্যাদি।
মৌলিক কাব্যিক, শৈল্পিক নান্দনিক ধারার গীতিকবি মিলন খান কোনো পুরষ্কার, পদক কিংবা সম্মাননা পাননি। সেসব নিয়ে তার মাথা ব্যথাও নেই। প্রতিবাদী-বিপ্লবীরা সবসময় স্বীকৃতিতে বঞ্চিত হয়। এটুকু জেনে ও মেনেই তিনি সংস্কৃতি চর্চা করছেন এবং এখানে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মিলন খান বলেন, ‘আমি নজরুলের বিদ্রোহী চেতনায় বিশ্বাসী।বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে স্বদেশের সংস্কৃতিকে আপন মর্যাদায় উন্নীত করতে ‘গান রচনার’ মধ্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমি জানি, এ কাজটা খুব সহজ নয়। সহজ হত, যদি অন্যের গান থেকে এক লাইন, দুই লাইন ধার করে নিজের গানের বাণী সাজাতাম। সচেতন ও সমঝদার শ্রোতা খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, আমার গানের বানী ও ভাব সম্পূর্ণ মৌলিক। আমি ব্যক্তিসত্বায় যেমন স্বতন্ত্র্য, তেমনি আমার সংগীত সাধনাও সবার চেয়ে আলাদা। এটাই আমার স্বকীয়তা।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ‘ঘাসফুল হয়ে কাছে থেকেছি নাকফুল করে নাওনি’ শিরোনামের কবিতা লিখে মিলন খান বেশ আলোড়ন তুলেন এবং উপাধী পান ‘ঘাসফুলের কবি’ হিসেবে। সেই স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে তিনি রচনা করেছেন একটি কবিতার বই। মিলন খানের একমাত্র কাব্যগ্রন্থ ‘জলের নগর’ পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত হয়, যার প্রতিটি কবিতাই হৃদয়ছোঁয়া ও ব্যঞ্জনাময়।
দুই কন্যা লিয়ানা খান, অর্থোনা খান ও স্ত্রী লিপি খানকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার বুকে তার গর্বিত সুখের সংসার।